রুহুল আমিন রাসেল, নিউ ইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় রাজনীতি করে আলো ছড়াচ্ছেন একঝাঁক বাঙালি। দেশটির বিভিন্ন স্টেট, সিটি কাউন্সিল, কাউন্টি, স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্টে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বলকারী সেসব ‘বাঙালি বীরকে’ সংবর্ধনা দিয়েছে দেশের শীর্ষ প্রচারিত বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এনওয়াই প্রতিদিন ডটকম। স্থানীয় সময় গত ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে লাগোয়ার্ডিয়া প্লাজা হোটেলে আয়োজিত প্রাণবন্ত এক অনুষ্ঠানে ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালি বীর’ হিসেবে পরিচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্রেস্ট তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আয়োজকরা জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়ে ৩৭ জনের মতো বাংলাদেশি বিভিন্ন স্থানে বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, নিউ হ্যামশায়ার, ম্যাসাচুসেটস, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মিশিগান প্রভূতি স্টেট পার্লামেন্ট, সিটি কাউন্সিল, কাউন্টি পর্যায়ে নির্বাচিত ২৭ জনেরও বেশি বাংলাদেশি। সন্ধ্যার পর থেকে কুইন্সে লাগোয়ার্ডিয়া প্লাজা হোটেলে জড়ো হতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি রাজনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলন মেলায় পরিণত হয় হোটেলের বলরুম। ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান দুই দলের বাংলাদেশি রাজনীতিকরা আসেন এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত। তারপর একে একে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বলেন, আপনারা প্রত্যেকে আমাদের মাথার মুকুট। আপনারা আমাদের বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। বিদেশে আপনারাই আমাদের অ্যাম্বাসেডর। তিনি বলেন, খুব ভালো লাগছে এ জন্য যে, বাংলাদেশিরা প্রমাণ করেছেন, তারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা এখানে আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। আমি তাদের প্রত্যেককে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৮৪ সালে ডেসোক্র্যাটিক পার্টির কাজকর্ম শুরু করি। তখন কোনো বাঙালি পেতাম না। খুব কঠিন ছিল। আমাদের বাঙালি খুব একটা দেখতাম না। এখন আমি খুব খুশি। এখন আমাদের অনেক প্রবাসী, নতুন প্রজন্ম এবং পুরনো আমাদের অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বাংলাদেশি রাজনীতিকদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে জর্জিয়া স্টেট থেকে নির্বাচিত সিনেটর শেখ রহমান বলেন, এখানে আমি খুবই আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছি। শুধু আমি নই, আমরা সবাই। নতুন প্রজন্ম আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে আরও এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।
মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের বন্ধু কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং ভিডিও বার্তায় এবং লিখিত বার্তায় সিনেটর চার্লস শুমার বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রশংসা ও সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, নিউ হ্যামশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, নিউ ইয়র্ক সিটির কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ, হাডসন সিটির বোর্ড অব সুপারভাইজার আবদুস মিয়া, নিউজার্সির হেল্ডন সিটির কাউন্সিলওম্যান তাহসিনা আহমেদ, নিউ ইয়র্ক স্টেট কমিটিওম্যান জামিলা এ উদ্দিন, জুডিশিয়াল ডেলিগেট নূসরাত আলম, নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক মার্জিয়া স্মৃতি।
বক্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ সংবর্ধনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বাংলাদেশি রাজনীতিকদের একত্রিত করার এ আয়োজনের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আমরা এখানে এসে আনন্দিত এবং গর্বিত। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের শুধু সম্মানিতই করা হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের বাংলাদেশি রাজনীতুক, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশিদের একত্রিত হওয়ারও সেতুবন্ধন তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রথম বাংলাদেশি এবং মুসলিম নারী কাউন্সিলর শাহানা হানিফ বলেন, এমন একটা অনুষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধিদের একসঙ্গে করার উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম সংবর্ধনাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রাজনীতিকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমেরিকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। পথ চলে সবাই। কেউ কেউ পথ দেখায়। আপনারা আমেরিকায় বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা।
সংবর্ধনাপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর শেখ রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, নিউ হ্যামশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, মেলবোর্ন সিটির মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব, নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, নিউ ইয়র্ক সিটির কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ, মেলবোর্ন সিটির কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, আলাউদ্দিন পাটোয়ারী, মনসুর আলী মিঠু এবং রফিকুল ইসলাম জীবন, নিউজার্সির প্যাটারসন সিটির কাউন্সিলম্যান অ্যাট লার্জ মো. ফরিদউদ্দিন, মিশিগানের হ্যামট্রমিক সিটির প্রট্রোটম মেয়র মোহাম্মদ কামরুল হাসান, কাউন্সিলম্যান নাঈম চৌধুরী, ফিলাডেলফিয়া সংলগ্ন আপার ডারবির কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক, বস্টন সংলগ্ন হপকিন্টন সিটির সিলেক্টম্যান শহিদুল মান্নান, নিউজার্সির কাউন্সিলওম্যান সেপা উদ্দিন, হাডসন সিটির বোর্ড অব সুপারভাইজার আবদুস মিয়া, এল্ডারম্যান দেওয়ান সরোয়ার এবং শেরশাহ মিজান, নিউজার্সির হেল্ডন সিটির কাউন্সিলওম্যান তাহসিনা আহমেদ, টেক্সাসের রিফুজিয়ো কাউন্টির ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ার নিহাল রহিম র্যা, নিউইয়র্ক স্টেট কমিটিওম্যান জামিলা এ উদ্দিন, জুডিশিয়াল ডেলিগেট মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, জুডিশিয়াল ডেলিগেট নূসরাত আলম, জুডিশিয়াল ডেলিগেট জামী এম কাজী, ফ্লোরিডার পামবিচ কাউন্টি ডেমোক্র্যাটিক। পার্টির বোর্ড মেম্বার জুনায়েদ আকতার, কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক লিডার মোফাজ্জল হোসেন, মূলধারায় বাংলাদেশিদের পথিকৃৎ মোর্শেদ আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল। উল্লেখ্য, চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সে সময়ের কয়েকজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ প্রতিদিন। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল জ্যাকসন হাইটসে বিলাসবহুল পার্টি হল বেলাজিনোতে। সেই আয়োজনেও প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।