মশিউর আনন্দ ঢাকা
টাঙ্গাইলের পানির ট্যাঙ্ক বধ্যভূমিতে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘খুলি’। তানভীর আহমেদ সিডনীর রচনা এবং মীর মেহবুব আলম নাহিদের নির্দেশনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি টাঙ্গাইল রেপার্টরি নাট্যদলের শিল্পীরা নাটকটি পরিবেশন করেন।অনলাইন মাধ্যমে নাটকটি উদ্ভোধন করেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকি।
নাটকের কাহিনি সংক্ষিপ্ত কাহিনিতে তুলে ধরা হয়েছে পানির ট্যাংকি বধ্যভূমি। যে বধ্যভূমিতে স্বজনেরা হত্যাকাণ্ডের শিকার আপনজনদের প্রাণহীন দেহটা খুঁজতে ছুটে এসেছিল, সেই বধ্যভূমিতে আজ দর্শকেরা উপস্থিত। আজ পানির ট্যাংক বধ্যভূমি যেন প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে এইখানে গণহত্যার শিকার মানুষেরা। এই বধ্যভূমির বৃক্ষেরা, যারা কালের সাক্ষী, তারা আগত দর্শকদের এই হত্যাক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ইতিহাসের বয়ান তুলে ধরে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে অবস্থান নিয়ে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় টাঙ্গাইল শহর আর তার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে আনতো এই সার্কিট হাউসে। নির্যাতন চালানোর পর এই পানির ট্যাংক এলাকায় নিয়ে তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হতো।
এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস, উপস্থিত সকল দর্শককে আবেগে ভাসায়। দর্শকেরা গণহত্যার শিকার মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতে অবনত মস্তকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের দুচোখে নামে অশ্রæধারা। এই ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের মস্তিষ্কে প্রোথিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বধ্যভূমির সম্মান রক্ষায় সচেতন করে তোলে সকলকে।
নির্দেশকের কথায়, পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাঙালী নিধনের উৎসবে মেতেছিল, তাদের পরিচালিত সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের স্থান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা বাংলাদেশে, এসব বধ্যভূমির সবগুলো এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশের সকল জেলায় ‘গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার’ শিরোনামে নাট্যনির্মাণ করছে। টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্য প্রয়োজনায় আমাকে নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব দেয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কাজটি কতখানি ‘শিল্প’ হয়ে উঠেছে সে বিচার দর্শকের, তবে চেষ্টায় আমাদের কোনো ঘাটতি ছিলো না।
‘খুলি’ প্রযোজনায় আন্তরিক সহযোগিতার জন্য অভিনয় ও নেপথ্যকর্মী, সংশ্লিষ্ট নাট্যদল, টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি, নাট্যকারসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা প্রদানকারী সকলের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
শিল্পের জয় হোক, নাটকের জয় হোক।