আমরা তখন নাইন টেনে পড়তাম। মহল্লার সবগুলো বাড়ির ছাদ ঝলমল করতো রোজ বিকেলে। আমাদের বয়েসি মেয়েরা ছাদে উঠত। বাতাস খেতো। কেউ কেউ মনযোগ দিয়ে আমাদের দেখতো। আমরা ফুটবল খেলতাম মাঠে। আমরাও দেখতাম তাদেরকে।
বিশেষ কাউকে দেখতে গিয়ে বল পায়ে ছুটতে ছুটতে কিক মারতে ভুলে যেতাম। আমি গোল মিস করায় যে কষ্ট করে বলটা আমাকে পাস দিয়েছিল সে গালি দিত। আমি লজ্জা পেতাম। মনে মনে কান ধরতাম আর তাকাবো না। কিন্তু আবার চোখ চলে যেত সেই ছাদে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে। মানে আবার গোল মিস! আবার গালাগালি!
তখন উঁচু উঁচু দালান কোঠা ছিল না। ছিল খেলার মাঠ। মেয়েদের দখলে ছিল বাড়ির ছাদ। বিকেলে মা ঘুমুলে তাদের ছিল ছাদে ওঠার সংস্কৃতি।
তবে তখন সব কিছু ছিল দল ধরে। ভিড় করে। আমরা একা একা কোনো কিছু চিন্তা করতে পারতাম না। এখন যেমন একজন ফোন নিয়ে একা একা সময় কাটায়। গেম খেলে। দরজা বন্ধ করে সিনেমা দেখে। অন লাইনের পিৎজা খায়। আমরা ৪/৫ জনের নিচে কিছু চিন্তা করতে পারতাম না। আমরা তখন পিৎজা চোখে দেখিনি তবে দেখলে একটাই ১২ টুকরা করে ১২জন বন্ধু খেতাম। সেই খাওয়ায় যে কী আনন্দ এটা বোঝানোর সাধ্য আমার নেই! সেই মাঠ থেকে এক ঝলক তাকে ছাদে দাঁড়াতে দেখায় যে কী রোমাঞ্চ এটাও বোঝাতে পারবো না!
আমি তরুণ তরুণীদের এখন হাত ধরে হাঁটতে দেখি। একসাথে সিগারেটও খেতে দেখি। তখন সব কিছু সস্তা মনে হয়। কষ্ট হয়। মেয়ে বন্ধু বলে তখন কিছু ছিল না। তবে প্রেমিকা ছিল।
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে দু-একজনের ভাগ্যে প্রেমও জুটেছিল। আমরা তাদেরকে ইর্ষা করিনি। ওদের জুটি দেখে আনন্দ পেয়েছি। আমরা তাদেরকে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছি,ওরা দু-টাকার চিনেবাদম খেয়ে কী করে দুপুর পার করে! কাঠফাটা রোদে কী করে নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে! কী করে একরাতে একদিস্তা কাগজ ভরে প্রেমপত্র লিখে! আমার না ওদের কে তখন সুপারম্যান আর ওম্যান মনে হতো! মনে হতো প্রেমের মতো এতবড়ো এডুকেশন দুনিয়ায় নেই। অতবড় শক্তি!
আমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ছেলেটাকে ভালো হতে দেখেছি প্রেমে পড়ে। সবচাইতে অমার্জিত অহংকারী মেয়েটিকে মার্জিত হতে দেখেছি। সুন্দর হতে দেখেছি।
তাই আমি চাই আমার সন্তানরা যেন সেই পুলক,সেই রোমাঞ্চের সন্ধান পায়। ভিডিও গেমের হাতি ঘোড়া মারার চেয়ে বাইরে গিয়ে গায়ের ঘাম ঝরান ভালো। চুরি করে গাঁজা খাওয়ার চেয়ে প্রেম করা আরও ভালো।
বিকেলে মাঠে যাও। গোধূলী আলোয় বাতাসে যার চুল ভাসে তাকে খুঁজে নাও…