“খুব কাছেই একটা মর্টার গোলার শব্দ শুনতে পেলাম। পরক্ষণেই সোজা নিজের মুখের ওপরে পতিত হলাম। একটা তীব্র লাল আলোর ঝলক আমার দুই চোখের অক্ষিগোলকে আঘাত করল। আনুমানিক পনের গজ দূরে, সৈকতের ওপরের প্রান্তদেশে গিয়ে গোলাটি বিস্ফোরিত হলো। মুহূর্তেই সেটি বোট থেকে অবতরণ করা চারজন সৈনিককে চুর্ণবিচুর্ণ করে দিলো। একজনকে মনে হলো বাতাসে উড়ছে। টুকরো টুকরো হয়ে। স্পষ্টভাবে আমি তার মাথা ও এক পা আকাশে ভাসতে দেখলাম।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। কয়েক পা দৌঁড়ানোর পর একটা ছোট্টো গর্তের ভেতরে পড়ে গেলাম। অন্য একটা মর্টারের বিস্ফোরণ আমার ওপরে ময়লা ছুঁড়ে দিতেই আতঙ্কিত হয়ে গর্তের ঢালু দিয়ে ওপরের দিকে তাকালাম। আরো ভালো কোনো আড়াল (cover) পাওয়া যায় কিনা তার খোঁজে। সেই সময়ে দেখতে পেলাম একজন আহত সৈনিককে। আমার খুব কাছেই। টলতে টলতে সে এলভিটি’র (Landing Vehicle – Tracked) দিকে এগোচ্ছিল। তার মুখের অর্ধেক অংশ রক্তাক্ত একটা পিণ্ডে পরিণত হয়েছিল। হোঁচট খেতে খেতে নীচু হয়ে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বাম বাহু লাঠির মতো ঝুলছিল, কাঁধ থেকে। বাকী অর্ধেক মুখ তখনও মানুষের মতোই ছিল। সেই ভয়ঙ্কর মুখে আমি তখনো অপেক্ষা বা বাঁচার আকাঙ্ক্ষা দেখতে পেলাম। সামান্যতম হলেও। পরের মুহূর্তেই আমার পেছনের একটা লাল রক্তের ডোবার মধ্যে তাকে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখলাম আমি। সাদা বালির পটভূমিতে।”
লেখা: টমাস ক্যালোওয়ে লিয়া III ((Thomas C. Lea III)। তিনি ছিলেন একজন আমেরিকান চিত্রকর, যুদ্ধ সংবাদদাতা, ঔপন্যাসিক এবং ইতিহাসবিদ। তার শিল্প ও সাহিত্যকর্মের অধিকাংশই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও এশিয়ায় তার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্ট। (অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত)
লেখা: টমাস ক্যালোওয়ে লিয়া III