বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে পারলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
তুরস্ক সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদলের সাথে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অব টার্কি (ডেইক) আয়োজিত ‘তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্তাম্বুলের স্থানীয় একটি হোটেলে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এক বিবৃতিতে ডিসিসিআইর পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের নেতৃত্বে ৮৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে তুরস্ক সফর করছে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অব টার্কির (ডেইক) চেয়ারম্যান অনুর ওজডেন বলেন, গত কয়েক দশক যাবত বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত করেছে। তুুরস্কের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অত্যন্ত আগ্রহী। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এখানকার উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রয়াস দেশটিকে ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি, ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রভৃতি খাতে বেশ অগ্রগতি করেছ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বেশ বৃহৎ, যা বিবেচনায় নিয়ে তুরস্কের উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারেন।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে দুদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, তুরস্কের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। আরও প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা ও নীতিমালার সংস্করের ওপর জোর দেন।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসয়ুদ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীতকরণে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে দুদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ সরকার ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনসহ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করছে, যা গ্রহণ করে তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান তার বক্তব্যে বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের সাহসী উদ্যোক্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও সাহসিকতার কারণে আমাদের অর্থনীতির কার্যক্রম চলমান ছিল। পর্যটন খাতে তুরস্কের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেশি। বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে তুরস্কের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘জয়েন্ট ইকোনোমিক কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, সুদীর্ঘকাল হতে বাংলাদেশ গুণগত মানের পাট উৎপাদন করে আসছে। তিনি তুরস্কের কার্পেট খাতের উদ্যোক্তাদেরকে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য আমদানির আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে তুরস্ক ২৯তম বৃহত্তম রাষ্ট্র যে দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩০.৫১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বিনিয়োগ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে কার্যকর অর্থনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ ও তুরস্ক যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বাংলাদেশের শিল্পখাতের আধুনিকায়নে তুরস্কের প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান, এসএমই খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌথ গবেষণা কার্যক্রম এবং এগ্রো ভেলু চেইনের উন্নয়নে তুরস্ককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক পণ্য আমদানির অনুরোধ করেন।
সেমিনার শেষে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদের সাথে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অব টার্কির (ডেইক) প্রায় ১১০টির বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেন।