নির্বাচন নির্বাচন খেলা নয়, বিএনপি ‘সত্যিকারের নির্বাচন’ চায় বলে
রবিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে সংগঠনটির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভা হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সরকার) নির্বাচন কমিশন একটা করেছেন যে নির্বাচন কমিশন আপনাদের হুকুমে চলে। আর নির্বাচন একটা করবেন যে নির্বাচনে ভোটাররা যাবে না, ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট দিয়ে দেবেন। সেই ধরনের নির্বাচন এদেশের মানুষ আর করতে দেবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশের মানুষ কখনোই এই নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে আর নির্বাচন হতে দেবে না। তারা সত্যিকার অর্থে নির্বাচন চায়। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচন করেই আমরা মানুষের, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই এবং সেখানে কাজ করতে চাই। অতীতে করেছি আমরা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বার বার নির্বাচনে জনগণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে গোটা বাংলাদেশ দেশ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, বিএনপি এবং আমাদের সমস্ত অঙ্গসংগঠনের দিকে যে আমরা নেতৃত্ব দেবো এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের প্রস্তুত হতে হবে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সংগঠনকে শক্তিশালী করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই সরকার যাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়, যাদের হাতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই্, যেখানে গণতন্ত্র নেই, যেখানে মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা নেই। এই সরকার অবশ্যই আমাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংগঠিত হোন, সংগঠনকে শক্তিশালী করেন। নেতাদের অনুরোধ করবো-আপনারা গোটা বাংলাদেশ সফর করেন। প্রয়োজন আছে। তাহলে তারা উজ্জীবিত হবে এবং সংগঠন শক্তিশালী হবে।’
‘সরকার জনগণের বড় শক্র’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কয়েক দিন ধরে দেখেছেন, ই-কমার্স ব্যবসা-বাণিজ্য। শুধু ইভ্যালি নয়, প্রায় ১১/১২টার মতো প্রতিষ্ঠান যারা মানুষের কাছ থেকে বহু টাকা, হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিয়েছে এবং তার কোনো ব্যবস্থা সরকার আগে গ্রহণ করতে পারেনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন হয়নি। আজকে দুর্নীতির কোনো জবাবদিহিতা নেই। যে যেখানে যেমন খুশি চুরি করছে, ডাকাতি করছে তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বলতে কিচ্ছু নেই। গুমের সংস্কৃতি তারা চালু করেছে। এই যে রাষ্ট্র তারা তৈরি করেছে এই রাষ্ট্র আমাদের রাষ্ট্র নয়। এই রাষ্ট্র কখনোই আমরা চাইনি। আওয়ামী লীগ সেজন্য আজকে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
হেফাজতে ইসলামসহ দেশের আলেম-উলামা এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সরকার নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে অভিযোগ করে এর কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্র চন্দ্র রায় বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে এই সরকার বেশি সময় থেকেছে এবং তার যাওয়ার সময়টা অত্যন্ত সংক্ষেপ করতে হবে। এখন আমাদের জিয়াউর রহমানের কথাটাই বেশি স্মরণ করতে হবে- লেস টক, মোর ওয়ার্ক। কথা কম, কাজটা একটু বেশি করতে হবে। বলা আমাদের অনেক হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের কথা কিন্তু অনেক বাকি রয়ে গেছে। আমরা সেদিকে মনোযোগী হই।’
ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ওলামা দলের মাওলানা সেলিম রেজা, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মশিউর রহমান, মাওলানা আবুল হোসেন, মাওলানা আলমগীর হোসেন, মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলী, মাওলানা শামসুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা বক্তব্য দেন।