আশরাফুল হাবিব মিহির
দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয়, অসংখ্য কালজয়ী গানের রচিয়তা ও সুরকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জন্মোৎসব পালিত হয়েছে নিউইয়র্কে। এই উপলক্ষ্যে গত ৬ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় নিউইর্য়কের কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হল মিলনায়তনে ‘গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার স্মরণ সংসদ, নিউইয়র্ক’ এর উদ্দ্যেগে তৃতীয়বারের মতো মঞ্চে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন করার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে।
স্বাধীন মজুমদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচয় তুলে ধরেন মোশারফ হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক গোপাল স্যানাল, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদ, সংগীতগুরু মোত্তালিব বিশ্বাস, সংস্কৃতি কর্মী মিথুন আহমেদ, রাজনীতিবিদ জাকারিয়া চৌধুরী, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট মিনহাজ আহম্মেদ শাম্মু, ড. উবায়দুল্লাহ মামুন, শুভ রায় ও বাংলা চ্যানেল-এর সিইও শাহ জে. চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের সঙ্গে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের স্মৃতিচারণ এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা কয়েকটি গান পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান। অনুষ্ঠানে আরো সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংগীতগুরু মোত্তালিব বিশ্বাস, চন্দন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, শাহানা ভট্টাচার্য্য ও মরিয়ম মারিয়া। তবলায় সঙ্গত করেছেন তপন মোদক আর মন্দিরায় শহীদ উদ্দীন। গিটারে গানের সুর তুলেন কিশোরশিল্পী মাস্টার মজুমদার।
আয়োজক সংগঠনের পক্ষে গোপাল সান্যাল জানান, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে যা বাংলাদেশিরা সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তিনি আরো জানান, তাঁর লিখা গান দিয়ে যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিলেন তা আগামী প্রজন্মকে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তাঁর লেখা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানে ঠাঁই পেয়েছিল। উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে -‘শোন একটি মজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠে সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি’, ‘মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’, ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়,’ এবং ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’ প্রমুখ, যা মানুষের মনকে আজও উজ্জিবিত করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রবল সমর্থক ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা সৃষ্টিকারী অনেক গানও লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশের বরেণ্য এই গীতিকারের জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে আয়োজকরা পাবনায় তার পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণের দাবি জানান। বর্তমানে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের বাড়িটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের নামকরণ করার দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপিকা হুসনে আরা, প্রখ্যাত গীতিকার মাহফুজুর রহমান, নাট্যভিনেত্রী রেখা আহমেদ, নীরা কাদেরী, দর্পন কবীর, কানু দ্ত্ত, পারভীন সুলতানা, মনিকা রয় চৌধুরী, ইস্তিয়াক রুপু আহমেদ, তোফাজ্জল লিটন সহ নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির সঙ্গীতানুরাগী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সুধীজন সহ নানা পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালে ৫ ডিসেম্বর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে জন্ম নেন। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট তিনি কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন।