জাফর আলম , কক্সবাজার
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন ঈদগাহ, ঈদগড় ও মেহের ঘোনা রেঞ্জের বিভিন্ন বনাঞ্চলে চলছে নির্বিচারে গাছ নিধন। বিশেষ করে সামাজিক বনায়নের গাছ সাবাড় করা হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। কাঠ চোরাকারবারী সিন্ডিকেট সদস্যরা ওই কাঠ দিনে ও রাতে ঈদগাঁ-ঈদগড় সড়ক পথে এবং মেহেরঘোনা রেঞ্জের পাশের কাচা সড়ক পথে মিনি ট্রাক, ট্রাক, ডাম্পার ও চাঁদের গাড়ী যোগে ঈদগাঁও এবং রামুর ইটভাটাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কাঠ পাচারে সহায়তা করে
বনকর্মীরা ঘাটে ঘাটে চাঁদা নিচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা যায়,কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ঈদগড়, ঈদগাঁহ ও মেহেরঘোনা রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে এক শ্রেণির কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে দিনে ও রাতে ফ্রি স্টাইলে পাচার করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
ঈদগড়, ঈদগাঁহ ও মেহের ঘোনা এলাকার অবৈধ কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রতিনিয়ত সামাজিক বনায়ন থেকে মূল্যবান গামারি, আকাশমণি ও গর্জন গাছ কেটে পার্শ্ববর্তী ঈদগাঁও বাজারের অবৈধ স’মিল ও ইট ভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে।বন রক্ষক না হয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী বন কর্তাদের ম্যানেজ করে এরা বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। তবে বনবিভাগের বিশেষ টহল দল মাঝে মধ্যে কক্সবাজার সদর থেকে গিয়ে অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি মিনি ট্রাক ও ডাম্পার আটক করেন। অভিযোগ রয়েছে, দিন দুপুরে এসব কাঠ ভর্তি জীপ, ডাম্পার, ট্রাক বাঁশষ্টেশন হয়ে ঈদগাওঁ বাজারের ভিতর দিয়ে ফিল্মী-স্টাইলে চলে যায় গন্তব্যে।
এছাড়াও ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক পথে, রাজঘাট বিটের আওতাধীন কাঞ্জন মালা সড়ক দিয়ে এবং মেহেরঘোনা রেঞ্জের পাশে কালির ছড়া বিট ও মাছুয়াখালী বনবিট অফিসের পার্শ্ববর্তী হামির পাড়ার রাস্তা দিয়ে বেশির ভাগ কাঠ ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন স’ মিল ও ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারী সিন্ডিকেট সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে সাবাড় করে দিলেও ঘুম ভাঙ্গছেনা বনরক্ষকদের!এদিকে, ইট পোড়ানো মৌসুমে ইট ভাটা মালিকরা সামাজিক বনায়ন ও সংরক্ষিত বনের মূল্যবান কাঠ রাত-দিন পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে বলে জানা গেছে। ফলে বন-পাহাড় ও বনজসম্পদ ধ্বংস হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ হলেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। আর এতে পরোক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে অসাধু বন কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, ঈদগাঁও থানাধীন ইসলামাবাদে ৩টি, জালালাবাদে ২টি ও ঈদগাঁও ইউনিয়নে ৩টি ইট ভাটায় প্রায় একমাস আগে থেকেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় ও দুরবর্তী বিভিন্ন বনের কাঠ এসব ইট ভাটায় সরবরাহ করছে। কাঠ চোর সিন্ডিকেট থেকে সরবরাহ করা কাঠ ভাটা মালিকরা বিভিন্ন গোপন স্থানে মজুদ করে রাতের আধাঁরে ডাম্পার, মিনি ট্রাক যোগে ভাটায় সরবরাহ করছে।একাধিক সূত্র জানা গেছে, ঈদগাঁও বাস স্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে ১টি, বাস স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে খোদাই বাড়ীতে ২টি, ঈদগাঁও বাজার সংলগ্ন জাগির পাড়ায় ১টি, মেহের ঘোনায় ১টি, জালালাবাদ ফরাজী পাড়ায় ১টি ও ইসলামাবাদ বোয়ালখালীতে ১টিসহ ডজনাধিক অবৈধ ডিপুতে এখন মজুদ রয়েছে হাজার হাজার ঘন ফুট চোরাই কাঠ।
ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা, ঈদগাঁহ রেঞ্জ, ভোমরিয়া ঘোনা বিট কর্মকর্তা, মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ বনকর্মীরা মিলে মিশে এসব ইটভাটা ও কাঠচোরদের থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে বলে অভিযোগ। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কিছুদিন কাঠ পাচার বন্ধ থাকলেও বর্তমানে দিনে ও রাতে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখিত তিনটি রেঞ্জে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই অঞ্চলের বনজ সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তারা করছেন উল্টো। রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিট কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বনজ সম্পদ উন্নয়নের পরিবর্তে নিধনযজ্ঞ, সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন এবং সংরক্ষণের পরিবর্তে নিধন মেতেছে। এতে করে ঈদগড়-বাইশারী, ঈদগাঁহ, ভোমরিয়াঘোনা, মেহেরঘোনা, মাছুয়াখালী, কালিরছড়ার বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান (ফরেস্টার) ও মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ রহমান (ফরেস্টার) বনের বৃক্ষ নিধন এবং পাচারের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ঈদগড়ের
তুলাতলি বিট, ঈদগাঁহের ভোমরিয়াঘোনা বিট ও মেহেরঘোনা বিটের পয়েন্টটি দুর্গম এলাকায়। সেখানে বিপুল গাছ থাকলে তিনবিটের কর্মীরা টহল দিতে পারে না। ফলে কাঠ চোরেরা সময় অসময়ে হানা দিলেও পাচারের সময় তা প্রতিহত করা হয়। তবে ঈদগাঁহ রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খাঁন কাঠ পাচার ও নিধনের ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেন।