আমাদের যৌবনে মাও সেতুং-এঁর লাল বই কেউ পড়ে না থাকলেও থাকতে পারেন কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা পড়েন নি -এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া শুধু মুশকিলই নয় অসম্ভব!
আমি মেট্রিক পরীক্ষায় ইলেকটিভ ম্যাথের রাতেও তাঁর মাসুদ রানা পড়েছি, শেষ করেছি। পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে যদি হার্টফেল করি সেই ভয়ে! মরে গেলে তো মাসুদ রানার নতুন বইটা আর পড়া হলো না! সেই দুঃখ নিয়ে মরতে চাইনি।
তখন শাহাদৎ চৌধুরীর সাপ্তাহিক বিচিত্রা আর মাসুদ রানা ছিল আমাদের প্রাণ। ও দুটো আমাদের মুক্তিযোদ্ধার জাত চিনিয়েছে। স্বাধীনতার মর্ম বুঝিয়েছে। দেশপ্রেম শিখিয়েছে। আমাদের কয়েক জেনারেশন মেতে ছিল তাঁদের চিন্তায়, মননে, লেখায়।
আমি বিদেশে গিয়ে, যুদ্ধের মাঠে গিয়ে,মাইন ফিল্ডের ওপর দিয়ে হেঁটে,পাঁচতারা হোটেলে গিয়ে,পার্টিতে গিয়ে, তেপান্তরের মাঠে গিয়েও ফিরতে পেরেছি আল্লা’র ইচ্ছা আর মাসুদ রানা মুখস্থ ছিল বলে।
নাটক লিখতে গিয়েও ধারাবাহিক নাটক “ফেরা”র একটি সংলাপ বলিয়েছিলাম আসাদুজ্জামান নূর ভাইকে দিয়ে। তখন মুক্তিযোদ্ধা মানেই পঙ্গু অথর্ব পরাজিত কাউকে দেখানো হতো। তাই অজপাড়াগাঁয়ের রেলস্টেশন মাস্টার নূর ভাই একজন
প্রথিতযশা অধ্যাপককে, সনামধন্য লেখককে বলছিলেন, ” আপনার আর কতদিন অবক্ষয় নিয়ে সাহিত্য রচনা করবেন? কেন মাসুদ রানার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি করা যায় না? যার উচ্চতা ৫’১১”,বুকের ছাতি ৪৪”,ব্যাকব্রাশ করা চুল,যার বাম বগলে পোলিশ সাবমেরিন,ডান বগলে ব্রিটিশ কারবাইন,দুই পকেটে ওয়ালথার পিপিকে আর একে ৪৭। যার একটাই কাজ মিশন টু কিল,দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের হত্যা করা!”
তোমাদের কোনোদিন ভুলবো না। কী করে ভুলি আমার মাসুদ রানাকে! কাজীদাকে! রানার সাথে তুমিও মৃত্যুঞ্জয়ী। অমর। আই লাভ ইউ ম্যান!