বেলালকে এত শিগগির পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে, তা ভাবিনি। শামসুল আলম বেলাল। রাষ্ট্রীয় বার্তা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ আমার প্রায় দশ বছরের সহকর্মী। সহকর্মী হওয়ার দুই দশক আগে থেকে বেলাল আমার ঘনিষ্ট বন্ধুও ছিলেন। তাঁর চলে যাওয়াকে অসময় বলা চলে না, সরকারি হিসেবে তিনি কর্মজীবন শেষ করেছেন প্রায় দুই বছর আগে। তাঁর বিদায়ে কষ্ট পেয়েছি। সমবয়সী হলেও সাংবাদিকতায় বেলাল আমার জুনিয়র। তাঁর বড়ভাই ফেরদৌস আলম দুলাল বাসস এর রিপোর্টার ছিলেন। দুলাল ভাই যদি ১৯৮১ সালের মে মাসের এক রাতে অফিস শেষে রিকশাযোগে বাসায় ফেরার পথে বিজয়নগরে নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে ঘাতকের গুলিতে নিহত না হতেন তাহলে হয়তো বেলালের সাংবাদিকতায় আসা হতো না। চলচ্চিত্র জগতে তিনি ভালো করছিলেন এবং শিল্পবোদ্ধা হিসেবে চলচ্চিত্র জগৎ তাঁর ভালোও লাগতো। দুলাল ভাই সাংবাদিকতায় আমার দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন। তাঁর সঙ্গেও আমার বেশ ঘনিষ্টতা ছিল। তিনি এত ভদ্র মানুষ, একেবারে অজাতশত্রু। তাকে কেউ গুলি করে হত্যা করবে ভাবাই যায় না। কিন্তু ওই দুর্ভাগ্যজনক রাতে রিকশায় দুলাল ভাইয়ের সহযাত্রী ছিলেন আবদুর রহমান নামে এক শ্রমিক নেতা। ঘাতকদের টার্গেট ছিলেন শ্রমিক নেতা আবদুর রহমান এবং দুলাল ভাই সঙ্গে থাকায় তাঁকে ঘটনার অসহায় শিকারে পরিণত হতে হয়েছিল।
দুলাল ভাইয়ের নিহত হওয়ার কয়েক মাস পরই বেলাল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। বিদেশি বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), এএফপি, পিটিআই, সিনহুয়াসহ বেশ কিছু বার্তা সংস্থার খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিতরণ ছাড়াও বাসস বাংলাদেশ সরকারের কর্মতৎপরতার সংবাদ প্রচারে গুরুত্ব প্রদান করতো, সেজন্য বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান কভার করতে গিয়ে ঢাকায় অথবা কোনো প্রকল্পের উদ্বোধনীতে ঢাকার বাইরে গেলে বেলালের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো। দুলাল ভাইয়ের ভাই জানার পর বেলালের সঙ্গে ঘনিষ্টতা আরও বাড়ে। নিজ যোগ্যতাবলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বেলাল সাংবাদিকতায় নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। ওই সময়ে ঢাকায় হাতে গণ কয়েকটি সংবাদপত্র ছিল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। সংবাদপত্রে সাংবাদিক সংখ্যাও খুব বেশি ছিল না, বলতে গেলে সবাই সবাইকে ভালোভাবে জানতো।
১৯৮৩ সালে আমি একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে তখনকার প্রাচীর বেষ্টিত পশ্চিম বার্লিনের ইন্টারন্যাশনাল ইহ্নটিটিউট ফর জার্নালিজম (আইআইজে) যাই। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিপ্লোমা কর্মসূচি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নামী সাংবাদিক, সম্পাদক ও প্রশিক্ষকদের আনা হয় সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিকের ওপর হাতে-কলমে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। স্টাইপেন্ডের পরিমাণ আকর্ষণীয়, ইন্সটিটিউটের ব্যয়ে চমৎকার হোস্টেলে আবাসন, বার্লিনের ‘উবান’ বা পাতাল ট্রেনের সবগুলো লাইন এবং দুটি লাইনের বাসের বিনামূল্যের টিকেট, ফ্রি হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং দুই সপ্তাহের ভ্রমণ কর্মসূচিসহ অন্যান্য সুবিধাদিও ছিল। আমি ফিরে আসার দুই বছর পর ১৯৮৫ সালে একই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হন বাসসের দু’জন সাংবাদিক, স্বপন সাহা ও শামসুল আলম বেলাল। ইতিপূর্বে বাসসের একাধিক সাংবাদিক প্রশিক্ষণ নিতে ওই ইহ্নটিটিউটে গেছেন। তবুও বেলাল আমার কাছে কোর্সসহ অন্যান্য বিষয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চান। আমি তাকে আমার অভিজ্ঞতার বিস্তারিত শেয়ার করি।
’
১৯৮৮ সালে আমি রয়টার্স ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ লাভ করার পর খবরটি লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় প্রথমে আসে। বেলাল আমাকে ফোন করে অভিনন্দিত করেন। আমি আনন্দিত হই এবং বেলালকে ধন্যবাদ জানাই। একটু পর আমাদের অফিসে টেলিপ্রিন্টারে বাসসের পাঠানো খবরটি আসে। ফেলোশিপের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে প্রেসক্লাবে যতবার বেলালের সঙ্গে দেখা হয়েছে, ততবার সবার কাছে আমার সাফল্যের কথা প্রচার করে আমাকে বিব্রত করেছেন। বেলাল জোরে কথা বলতে অভ্যস্ত, আর আমি অন্তর্মুখী মানুষ। বেলালকে কে থামাতে পারে!
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর আমার কাজের ধরন পাল্টে যায়। রিপোর্টার থেকে আমাকে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ন্যস্ত করা হয়। ফলে আমার কাজ অফিস-কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। বেলালের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ কমে যায়। প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বেলালের সঙ্গে দেখাই হতো না। পরবর্তী পাঁচ বছরে আমাকে বেশ কয়েকটি কর্মস্থল পরিবর্তন করতে হয় এবং এ পরিক্রমায় শেষ কর্মস্থল দৈনিক বাংলার বাণী ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে বন্ধ হয়ে গেলে আমিসহ অনেকে বেকার হয়ে পড়ি। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বাসস এ সর্বপ্রথম বাংলা সার্ভিস চালু করেছিল। বাংলার বাণীর বেকার হয়ে পড়া সাংবাদিকদের অনেকে বাসস এর বাংলা বিভাগে যোগ দেয়। প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের আমলে আধা-সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সকল স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ার রীতি দেশের সূচনাকাল থেকে। বাসস এ আমার নিয়োগ হয় ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি বিজয় লাভ করে সরকার গঠনের পর। এরই নাম বোধহয় নিয়তি। আমি বেলালের সহকর্মীতে পরিণত হই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির বয়সসীমার বালাই নেই। কর্তৃপক্ষ কারও প্রতি বিরূপ না হলে এবং কারও যদি দক্ষতা থাকে তাহলে যার শরীরে যতদিন কুলায় তিনি ততদিন চাকুরি করতে পারেন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকে, যা বাসস এও ছিল। তবে যা ব্যতিক্রম তা হচ্ছে, সরকারি চাকুরির বয়সসীমা যখন ৫৭ বছর ছিল তখন বাসস এ চাকুরির বয়সসীমা ছিল ৬০ বছর। বর্তমান সরকার সরকারি, আধা-সরকারি, বিধিবদ্ধ ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরির বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে ৫৯ বছর এবং বাসস এ তা বেড়ে হয়েছে ৬২ বছর। বাসস এ যোগ দেওয়ার পর যখন অবসর নেয়ার বয়স হিসাব করছিলাম, তখন ৬০ বছরের হিসেবে আমাকে অবসর নিতে হতো ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কিন্তু বেলাল বললেন তিনি অবসর নেবেন ২০১৮ সালে। এর ‘মাজরা’ কী? চেপে ধরায় জানালেন যে তার পড়াশোনার সূচনা মাদ্রাসায় এবং সেখানে পঞ্চম শ্রেনিতে উঠার পর তিনি আর মাদ্রাসায় পড়বেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। বেলালের সঙ্গে পরিচিতরা জানেন যে বেলাল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার ব্যত্যয় হওয়া কঠিন। শৈশবেও তা হয়নি। মাদ্রাসা ছাড়ার সময় ট্রান্সফার সার্টিফিকেটে বেলালের বয়স প্রায় পাঁচ বছর কমিয়ে দিয়েছিলেন মাদ্রাসার সুপার। অতএব আমি বেলালের সমবয়সী হলেও সার্টিফিকেটে তিনি আমার প্রায় পাঁচ বছর জুনিয়র ছিলেন এবং বাড়তি বছরগুলোতে কাজ করে ২০২০ সালের এপ্রিলে অবসরগ্রহণ করেন। আমাদের সকলের বয়সের ক্ষেত্রে এই কারচুপি আছে। কারণ স্কুলের শিক্ষকরাই আমাদের জন্ম তারিখ স্থির করতেন। জন্ম নিবন্ধনের কোনো বালাই ছিল না। আমাদের বয়সীদের বয়সে দু’এক বছরের হেরফের সবার আছে। এমনকি এমন দৃষ্টান্তও আছে যে সার্টিফিকেটে দুই ভাইয়ের বয়সের ব্যবধান দু বা তিন মাস, অথবা যে ভাই বা বোন ছোট, সার্টিফিকেটে তার বয়স ছোটজনের চেয়ে বেশি। বেলালের ক্ষেত্রে ব্যবধানটা অতিরিক্তি বেশি ছিল এবং তা বেলালের চাকুরি জীবনে সুবিধা এনে দিয়েছিল।
বেলাল একটু রগচটা ছিল, মুখের ওপর কথা বলে দিতো। সবাই তাকে সমঝে চলতো। ইংরেজিতে বেলালের ভালো দখল ছিল, তা সত্ত্বেও বেশ ক’জন রিপোর্টার চাইতেন যে বেলাল তাদের রিপোর্ট না এডিট না করুক। কারণ ভুল হলে বেলাল চৌদ্দগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বকাঝকা করতেন, যা অনেককে বিব্রত করতো। তারা আড়ালে বেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেন। কিন্তু আমার সঙ্গে বেলালের চমৎকার সমাঝোতা দেখে অন্য সহকর্মীরা অবাক হতো। আমি রসিকতার করে বেলালকে কখনও ‘বেলু ভাই, অথবা শুধু ‘বেলাল’ বলতাম। তার সঙ্গে প্রায়ই বার্লিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা করতাম। ডয়েচ বা জার্মান ভাষায় ‘এক থেকে দশ’ পর্যন্ত বলতে পারলে দশ টাকা, আমরা বার্লিনের যে গ্রোসারি থেকে কেনাকাটা করতাম সেই গ্রোসারির নাম, ভিক্টরি কলাম বা ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের আশপাশে আর কী কী আছে এসব বলতে পারলে প্রেসক্লাবে লাঞ্চ করানোর মতো পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতো। আমরা দু’জনই বেশ উপভোগ করতাম।
অনেক সময় আমরা পুরনো উর্দু-হিন্দি গান ও শিল্পীদের নিয়ে কথা বলতাম, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় বাসস এ এমন আর দু’জন লোক ছিলেন ÑÑ সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোফাখখারুল আনাম, যিনি তখন নিউজ কনসালট্যান্ট হিসেবে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং নিউজ এডিটর এরশাদুল হক। কিন্তু তাদের সবসময় পাওয়া যেত না। বেশ প্রবীণ বলে রাতের শিফটে যারা কাজ করতেন তাদেরকে বাসস এর মাইক্রোবাসে বাড়ি পৌছে দেওয়া হয়। এক রাতে বেলালও ছিল। বেলালের বাসা ছিল গ্রীন রোডে কমফোর্ট হাসপাতালের পাশ দিয়ে আনুমানিক পাঁচশ’ গজ ভেতরে। মোফাখখারুল আনাম ভাই ও আমি যাবো মিরপুর, আমাদের নামিয়ে দিয়ে আনিসুর রহমানকে নিয়ে যাবে উত্তরা। সেদিন রাত দশটার পরও বেশ ভিড়, সম্ভবত রমজান মাসের শেষ সপ্তাহ ছিল। ড্রাইভার ছিলেন রহমান। তিনি শাহবাগ হয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বেলাল সোনারগাঁও হোটেলে থেকে পান্থপথ হয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিলেন। বাংলামটর থেকে গাড়ি আর নড়ে না। এই প্রচণ্ড যানজটের কারণ বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স। যানবাহনের নড়াচড়া তো দূরের কথা, ফুটপাত দিয়ে মানুষ হেঁটে যেতে পারছে না। আমরা ঘামছি। বেলাল ধমকে উঠতে পারে বলে কেউ কিছু বলছে না।
আমি বলে ওঠলাম, “তাব্বা লাকা ইয়া বেলালু, আ’লে হাজা দাওয়াতানা?” আমি বলতে চেয়েছি ‘হে বেলাল তুমি ধ্বংস হও, এ কারণেই কি তুমি আমাদের ডেকে এনেছো?’ আমার বলার উদ্দেশ্য ছিল, তিনি ড্রাইভারকে এই পথে আসতে বাধ্য করায়, আমরা এমন বিপদে পড়েছি। সকলে আমার দিকে ফিরলেন, এর মানে কি! আমাকে ব্যাখ্যা করতে হলো: নবী মুহাম্মদ সা: সাফা পর্বতে ওঠে কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রের লোকজনকে আহবান করলেন। যারা জড়ো হলো তাদের মধ্যে ইসলামের ঘোর বিরোধী আবু লাহাবও ছিলেন। নবী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “‘আমি যদি আপনাদের বলি যে উপত্যকায় একটি সেনাবাহিনী জড়ো হয়ে আপনাদের ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে কি আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন?’ তারা উত্তর দিলেন, ‘অবশ্যই বিশ্বাস করবো, কারণ আমরা আপনাকে সবসময় সত্য বলতেই দেখেছি।’ তখন নবী বললেন, ‘তাহলে শুনুন, মহা বিপর্যয় নেমে আসার আগে আমি আপনাদের সতর্ককারী।’ আবু লাহাব ক্ষুব্ধ হয়ে নবীকে বললেন, “তাব্বা লাকা ইয়া মুহাম্মাদু, আ’লে হাজা দাওয়াতানা?’ (হে মুহাম্মদ, তুমি ধ্বংস হও; তুমি কি এ কারণে আমাদের ডেকে এনেছো?)’” এ সময়ে সুরা লাহাব নাজিল হয়, ‘তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিউ ওয়াতাব্ব,’ (আবু লাহাবের হাত দুটি ধ্বংস হোক এবং সে স্বয়ং ধ্বংস হোক)। আমি বেলালকে সেই প্রশ্নটিই করেছি। বেলালসহ সবাই প্রাণখুলে হাসলেন। বেলাল বরং আমাকে বললেন পরদিন যাতে আমি তাকে এটা লিখে দেই, তাহলে তিনি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবেন।
আমার উপর এক পর্যায়ে মন খারাপ করেন বেলাল। আমানুল্লাহ কবীরের মেয়াদ শেষ হলে বাসস এর প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন গাজীউল হাসান খান। তিনি মারদাঙ্গা কিসিমের মানুষ। নিজের সুবিধা আদায়ের পাশাপাশি তিনি অন্যদেরও জন্যও কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন, যা থেকে আমিও বাদ পড়িনি। আমাকে বার্তা সম্পাদক থেকে পদোন্নতি দিয়ে উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক নিয়োগ করেন এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ন্যস্ত করেন চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব। এরশাদুল হক ভাই বাসস এর আছেন ৩৩ বছর, বেলাল প্রায় ২৫ বছর। কোনো পদোন্নতি হলে আইনত তাদেরই হওয়া উচিত। কিন্তু এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে তা হয় না। সবই রাজনৈতিক বিবেচনা! আমার পদোন্নতিতে আমি নিজেই বিব্রত হই। বেলাল কয়েকদিন আমার সঙ্গে কথা বন্ধ রাখেন। এরপর আমিই বলি, ‘বেলু ভাই, চা খাবেন? আমার ওপর রাগ করছেন কেন? আমার নিজের ইচ্ছার চেয়ে বরং তথ্যমন্ত্রীর তরিকুল ইসলামের ইচ্ছায় আমাকে বাসস এ আসতে হয়েছে। পদোন্নতির জন্যও আমি তদবীর করিনি। পারতপক্ষে আমি প্রধান সম্পাদকের অফিসে যাই না। আমাকে দুটি ঘুষি মারলে যদি আপনার রাগ কমে তাই মারুন।”
বেলাল হাসেন, আমাকে জড়িয়ে ধরেন। বাসস এর এ ধরনের বিষয়গুলো বেলাল আমার চেয়ে ভালো জানেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী সরকার গঠন করে। প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পান বাসস এর বিশেষ সংবাদদাতা ইহসানুল করীম হেলাল। বিএনপি আমলে বাসসে চাকুরিচ্যুত সাংবাদিক কর্মচারি উ”ঢ় আদালতের আদেশে আট বছরের বকেয়া বেতনভাতাসহ পুনরায় কাজে যোগ দেন। যারা এতদিন বঞ্চিত ছিল তারা পদোন্নতি ও স্পেশাল ইনক্রিমেন্টসহ সুবিধা পেতে থাকে। বেলাল তাৎক্ষণিকভাবে শুধু তিনটি ইনক্রিমেন্টের সুবিধা পায়। এবার আমাদের চাকুরিচ্যুতিসহ বঞ্চনার পালা। বেলাল দক্ষ সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কখনও তাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব প্রদান করেনি শুধুমাত্র তার একরোখা স্বভাব ও মুখের ওপর কথা বলার কারণে। এ ছাড়া একজন সৎ মানুষের কী থাকে?
আমি বেলালকে ভালোবাসতাম। বেঁচে থাকতে যদি দেশে যাওয়া হয় তাহলে বেলালের সঙ্গে আর দেখা হবে না, এমন ভাবনা কষ্টকর। আমি তার পরকালীন শান্তি কামনা করি। ভালো থাকবেন বেলাল।