• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ খবর
Банда казино рабочее зеркало Банда Казино – как начать играть? Banda casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Банда Как Вывести Деньги Драгон Мани? Казино Драгон Мани Зеркало Банда Казино – официальный сайт Банда казино онлайн Общий обзор Банда Казино Отзывы Банда Казино – Мнения и Отклики от Реальных Игроков Banda Casino Обзор популярных игр в Banda Casino: Зеркало Банда Казино | Halostar Marketing Kometa casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Комета Казино Комета официальный сайт онлайн. Зеркало казино Kometa. Личный кабинет, вход, регистрация Как получить бонусы в Комета Казино? Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино – Вход На Сайт, Личный Кабинет, Бонусы За Регистрацию, Лучшие Слоты На Деньги И Бесплатно В Демо-Режиме Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Играй В Уникальном Стиле: Комета Казино Ждет Тебя! Комета Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Kometa Casino Онлайн Казино Комета. Зеркало Казино Kometa. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Kometa Casino Зеркало ᐈ Вход На Официальный Сайт Комета Казино Игровые автоматы бесплатно лягушка Комета Казино Uefa Uncovers Mostbet As Winners League Sponsor” 2024 25 Uefa Countries League: All You Need To Know Uefa Nations League Mostbet Brazil Spotlight: Perspectives And Even Challenges Of The Particular Brazilian Market Noticias Igaming” Withdrawal Actions Casino Withdrawal Alternatives On the web Bisca Non Aams, I Migliori Ancora Con l’aggiunta di Sicuri Casa da gioco Online Stranieri Kings Jester Slot Geben Eltern jetzt jenes Erreichbar-Runde kostenfrei Gambling establishment Deposit Possibilities Local casino Banking Tips Australian continent GameTwist unsrige Erfahrungen via unserem Social Spielbank JackpotPiraten Free Spins, 2 Aktionen and 50 Freispiele На каких условиях играть на официальном сайте ап икс официальный сайт на real money с выводом

যুগলবন্দী– নাহার তৃণা

রিপোর্টারের নাম : / ৬২ ভিউ
আপডেট সময়: শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

 

যুগলবন্দী

নাহার তৃণা

আমরা যখন কোনো বই পড়ি, তখন কী হয়? পাঠক বিশেষে, মনের নিজস্ব ছাঁচ অনুযায়ী বইটির কাহিনি বা তার পরিণতি আগাম ভেবে নেবার একটা চেষ্টা চলে। শব্দে বর্ণিত চরিত্রগুলোকে অনেকে দিব্যি অবয়বে দাঁড় করিয়ে ফেলি। কাহিনি গড়ানোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাঠক হিসেবে আমাদের মনের ভাবনা ডানা পায়। ধরুন, আপনি চার্লস লুটউইজ ডজসন (Charles Lutwidge Dodgson ), মানে লুইস ক্যারোলের বিখ্যাত সেই কল্পকাহিনি যেটি বই আকারে প্রকাশিত হওয়ারও আগে তিনি তাঁর নৌকা ভ্রমণের সঙ্গী বন্ধুর ক্ষুদে তিন কন্যাদের শোনাবার জন্য বলা শুরু করেছিলেন, সেই  “অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডার ল্যান্ড” পড়ছেন। কাহিনির মূল চরিত্র অ্যালিসের ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে হয় সেই পাঠে আপনি নিজে যুক্ত হয়ে পড়বেন, কিংবা অ্যালিস চরিত্রটা কেমন, তার সঙ্গে কী কী ঘটতে পারে ইত্যাদির সম্ভাবনা নিয়ে ভাবিত হওয়ার খেলায় মেতে ওঠেন।

বোনের কাছে গল্প শুনতে থাকা অ্যালিস কাপড়চোপড় আর হাতঘড়িতে ফুলবাবু  সেজে থাকা খরগোশটি দেখে নিজের বিস্ময় মুঠোয় পুরে যেভাবে তার পিছু ধাওয়া করেছিল- পাঠক হিসেবে আপনিও হয়তো তখন মনে মনে দৃশ্যটি কল্পনায় ভেবে নিয়ে অ্যালিসের পিছু নিয়ে গর্তে লাফিয়ে পড়ে বলে ওঠেন- ‘এ কোথায় এলাম!’ কিংবা “পথের পাঁচালী”র ইন্দির ঠাকরুনের আশ্রয়ের খোঁজে মৃত মেয়ের স্বামীর কাছে যাওয়া, যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন পেয়েও মায়ার টানে আবার অপু-দুর্গাদের অভাবের সংসারে ফিরে আসার’ দৃশ্যায়নটুকু মনে মনে কল্পনা করে আবেগতাড়িত হয়ে পড়বেন। আরো ভেবে নেওয়া যাক বইটির ওই অংশের কথা, যেখানে রয়েছে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই ভাই-বোনের কচি আমের গুটি ভর্তার জম্পেশ আয়োজনের বয়ান। ওরকম বর্ণনা পড়ে জিভে জল আসেনি এমন বাঙালি পাঠক হয়তো খুব কমই আছেন। পাঠের পাশাপাশি পাঠক মনে দৃশ্যকল্প তৈরির প্রক্রিয়ায় জিভে জল, চোখ ছলছল ইত্যাদির আবহ তৈরি হয়।

একই কারণে ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’, আওড়াতে আওড়াতে পাঠক কতভাবেই না একঢাল চুলের মালিকানাপ্রাপ্ত একটি মুখ কল্পনায় এঁকে ফেলেন, যার হদিস জানা অসম্ভব। তাহলে কী দাঁড়াল? শিল্প-সাহিত্যকেন্দ্রিক একটি বই পাঠক কেবল শব্দ-বাক্যে পাঠ করেই ক্ষান্ত থাকেন না। সংশ্লিষ্ট কাহিনি বা চরিত্রের হাত ধরে একইসঙ্গে চলে তার কাল্পনিক পরিভ্রমণ। পাঠক মনের এমন ভ্রমণে গণ্ডি কেটে দেওয়া কঠিন। ভাবনার ইচ্ছেঘুড়ি পায় ওড়াউড়ির দিগন্তজোড়া আকাশ। মজার ব্যাপার, এই ভাবনা বা কল্পনা করে নেবার ক্ষমতায় পাঠকভেদে ঘটতে পারে অনেকটা তারতম্য। সেটা কী রকম? সমরেশ মজুমদারের ট্রিলজি উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা সব পাঠকের ভাবনায় এক গড়ন পাবে না। কারণ একেক পাঠক একেক ভাবে তার মনের ক্যানভাসে তাদের এঁকেছেন, ভেবেছেন। ভাবনার তারতম্য হতে তাই বাধ্য। এই স্বাধীনতা পাঠক অর্জন করেন বইটি পাঠের মধ্যে দিয়ে। তার কল্পনার রঙে পান্না সবুজ না হয়ে কমলা হওয়ার স্বাধীনতা রাখে, চুনি জমাট নীল! পাঠকের অনুভব বা কল্পনার স্বাধীনতায় অন্য পক্ষের চোখ রাঙানির সুযোগ থাকে না তেমন।

যতক্ষণ একটি কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাস প্রকাশিত বই হিসেবে পাঠকের হাতে না পৌঁছে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেসব সৃষ্টিকর্মের উপর লেখকের একক নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকে। মানে লেখক যেভাবে যেভাবে চরিত্রগুলোর বর্ণনা ছকে দিয়েছেন সেভাবেই গল্প এবং চরিত্রগুলো কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু যেইমাত্র সেটা বই হিসেবে প্রকাশিত হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছে গেল, তখন সংশ্লিষ্ট রচনার ওপর লেখকের একক নিয়ন্ত্রণের অনেকটাই পাঠকের হাতে চলে যায়। এমন না যে এতে করে পাঠক ওই রচনার খোলনলচে পালটে দেবার স্বাধীনতা পেয়ে যান। না, তেমনটা একদমই নয়। লেখকের কাহিনি ধরেই পাঠক তার পাঠ এগিয়ে নিয়ে যান বটে, কিন্তু নিজস্ব কল্পনার রঙেই চরিত্রগুলো যার যার ক্যানভাসে ফুটে ওঠে। পাঠকের ভাবনার সেই জগতে সংশ্লিষ্ট লেখকেরও প্রবেশাধিকার থাকে না।

এই পরিস্হিতিকে আরেকটু খোলসা করতে পাঠক মহলে সর্বাধিক পরিচিত এবং পঠিত দুটি গোয়েন্দা চরিত্র  শার্লক হোমস এবং ফেলুদাকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। আমরা জানি, এডগার এ্যালান পো’র “সি অগাস্তে ডুপিন (C. Auguste Dupin)” সাহিত্য জগতের প্রথম গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে স্বীকৃত। পরবর্তীকালে এই চরিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য গোয়েন্দা চরিত্রগুলোর আত্মপ্রকাশ ঘটে এমনটা মনে করা হয়। তবে শার্লক হোমস চরিত্রের সৃষ্টিকারী আর্থার কোনান ডয়েল অগাস্ট ডুপিন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যে তাঁর জগদ্বিখ্যাত চরিত্রটি সৃষ্টি করেননি, সেটা হয়তো ডুপিন সম্পর্কে তাঁর তাচ্ছিল্যময় বক্তব্যে প্রকাশ পায়। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল বরং তাঁর শিক্ষাগুরু সার্জন জোসেফ বেল  (Joseph Bell), যিনি অপরাধ বিজ্ঞানে অগাধ জ্ঞান রাখতেন তাঁর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে শার্লক হোমস চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন। তো সেই বিখ্যাত চরিত্র শার্লক হোমস ও তার বন্ধু এবং বর্ণনাকারী ডক্টর জন এইচ ওয়াটসন, অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের তুমুল জনপ্রিয় সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা এবং তার সহকারী খুড়তুতো ভাই তাপসরঞ্জন মিত্র অর্থাৎ তোপসে। এদের নিয়ে ভাবতে বললে পাঠকমনে মূল চরিত্র দুটির কেমন অবয়ব ভেসে উঠতে পারে? কল্পনায় ভেবে নেবার এ খেলায় সব পাঠকের মনে কি তাদের একই রকম অবয়ব ভেসে উঠবে? সম্ভবত না।

১৯০৪ সালে সিডনি এডওয়ার্ড পেগেট (Sidney Edward Paget) এর আঁকা শার্লক হোমসের অবয়ব ছাপিয়ে ইতোমধ্যে যেমন চলচ্চিত্র-টিভি সিরিয়ালে নানা ধাঁচের মুখের আনাগোনা দেখা গেছে, পাঠক মনেও সে রকম ঘটবে, তাতে সন্দেহ নেই। একই কথা ফেলুদা সম্পর্কেও। ১৯৬৫তে লেখক স্বয়ং তাঁর গোয়েন্দা চরিত্রটির যে ছবি এঁকেছিলেন-  ছবির সেই অবয়বটি খ্যাতনামা অভিনেতা সদ্য প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখাবয়ের সাথে যথেষ্ট মিলে যায়। কিন্তু স্বয়ং সৌমিত্র যখন চরিত্রটিতে রূপদান করেছিলেন, সব পাঠকের কাছেই কি তিনি সমান সমাদরে গৃহীত হয়েছিলেন? পাঠক ভাবনার সাথে ঠোকাঠুকি লেগেছিল কমবেশি, এটি অঙ্কের হিসাব না কষেও বলে দেওয়া যায়। এই বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্রগুলো নিয়ে প্রচুর নাটক-সিনেমা নির্মাণ হওয়া সত্ত্বেও গল্প-উপন্যাসপড়ুয়া পাঠকের কল্পনায় যার যার পছন্দ অনুযায়ী চেহারা ভেসে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক।

সারকথা হলো, একটি বই পাঠককে ইচ্ছেমতো কল্পনার সুযোগ দেয়। অথচ সেই একই বইকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রায়নটি সেখানে কমবেশি সীমাবদ্ধতার গণ্ডিতে আটকে যায়। চলচ্চিত্রের দর্শকের সেখানে নতুন কল্পনার, চরিত্রগুলোয় নিজের পছন্দমতো কারো মুখ ভেবে নেবার সুযোগটা আর তেমন থাকে না। যদিও বই এবং চলচ্চিত্র দুটো দুই মাধ্যম। একটি স্হির, অক্ষর, আখ্যান, বাক্যবিন্যাস, ছাপাখানা ইত্যাদির স্তর পেরিয়ে তৈরি। অন্যটি চলমান। সংলাপ-শব্দ, আলো-আঁধারের সঠিক প্রক্ষেপণ ইত্যাদি জুড়ে নির্মিত। বই তথা, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেছেন, “চলচ্চিত্রে প্রকৃতির রূপ, মানুষের অভিব্যক্তি যেভাবে দেখানো যাবে, সাহিত্যে সেটা সম্ভব না। চলচ্চিত্র খেলে সময় ও গতি নিয়ে, সাহিত্য তা করে না। সাহিত্য পাঠের সময় শব্দ, বাক্য সমন্বয়ে নানা চিত্রকল্প রচিত হয়। কিন্তু সিনেমাতে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। সবাই কিন্তু একই সময়ে একই জিনিস দেখছে। পরে দর্শক নিজের মতো করে তা ভাবতে বসে।”

“How to Read a Film: Movies, Media, Multimedia” বইতে চলচ্চিত্র -তাত্ত্বিক, সমালোচক, লেখক, প্রকাশক জেমস মোনাকো (James Monaco) যে বক্তব্য রেখেছেন সেটি জেনে নেওয়া যাক: “সাহিত্যের বড় গুণ হলো আপনি সেটি পাঠ করে কল্পনা করতে পারেন, আর চলচ্চিত্রের বড় গুণ হলো সেটি আপনাকে কল্পনার সুযোগ দেয় না।”

তবে বই বা সাহিত্যের সাথে চলচ্চিত্রের কোনোভাবেই কোনো বিরোধ নেই। গৌতম ঘোষ সে কথাই অকপটে বলেছেন: “সাহিত্য আর চলচ্চিত্রের মধ্যে তফাত থাকলেও তাদের মধ্যে আসলে কোনো বিরোধ নেই। এখন কথা হলো, আমরা কীভাবে এ দুটো ব্যাপারকে দেখছি।”

মানুষ তার কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে একদিন আকাশে ওড়ার স্বপ্নকে বিমান আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে পূরণ করেছিল। প্রাচীন যুগের দেয়ালচিত্রের ধারাবাহিক সূত্র ধরে কাগজ আবিষ্কার, পুঁথি, স্ক্রল বই, টাইপ রাইটার আবিষ্কারের পথ ধরে আধুনিক বই ছাপানোর পদ্ধতি মানুষ একসময় হস্তগত করেছে। মানুষের সেই কৌতূহলী মন হয়তো তাকে একদিন নিজের ছায়া থেকে চলমান ছায়াছবি সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ম্যাজিক লণ্ঠনের ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন ছবিছাবার ভেতরও মানুষ সম্ভাবনার বীজ খুঁজে পেয়েছিল ক্যামেরা, শব্দ, আলো, চলচ্চিত্র আবিষ্কারেরও আদি পর্বে।

চলচ্চিত্রের অনেক আগের কথা ছায়াছবি। ছায়াকে ছবি করে তাকে প্রতিষ্ঠা করার কথা যখন মানুষের চিন্তার জগতে প্রথম উঁকি দিতে শুরু করে, সেই সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এই অভাবনীয় উত্তরণের নেপথ্যে রয়েছে সাধারণ অসাধারণ বহু মানুষের নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই শক্তিশালী মাধ্যম আজ প্রতিষ্ঠিত”

আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক সাতসতেরো ইতিহাস জানা সে কারণে সহজসাধ্য। এ যাত্রার প্রাথমিক পর্বে ক্যামেরা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি আবিষ্কারের ধাপে পৌঁছানো হলেও শুধুমাত্র ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা হলে যে সেটি চলচ্চিত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় না, এ সত্য প্রাথমিক পর্বে জড়িত সংশ্লিষ্টরা ঠিকই বুঝেছিলেন। যে কারণে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে তারা ভাবিত হয়েছিলেন। সিনেমা বা চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নে পৃথিবীজুড়ে চলমান ছিল কর্ম সাধনার পটভূমি। উন্নত সিনেমা তৈরির কারিগরি দক্ষতা অর্জনের দীর্ঘ ইতিহাসে পৃথিবীর নানা দেশের মানুষের অবদানে আজকের চলচ্চিত্র মাধ্যমের শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

সিনেমা বা চলচ্চিত্র আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে বহুমানুষের সাধনা, দিন রাতের পরিশ্রম, চিন্তাভাবনা।  সেসব মানুষদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন লুমিয়ের ব্রাদার্স নামে খ্যাত ফরাসি দুই ভাই- অগাস্তে ও লুই লুমিয়ের (Auguste and Louis Lumière)। এই দুই সহোদর তাঁদের চিত্রশিল্পী বাবার সান্নিধ্য-অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্রের জন্য সহায়ক ক্যামেরা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হন। অবশ্য এক্ষেত্রে লুই’-এর পদার্থবিদ্যার প্রতি তীব্র আকর্ষণ কম  সহায়তা করেনি। ফলাফল হিসেবে একসময় তাঁরা চলমান আলোকচিত্র গ্রহণের উপযোগী ক্যামেরা এবং তাতে ধারণকৃত দৃশ্য পর্দায় প্রদর্শনযোগ্য যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তাঁদের হাত ধরে তৈরি হয় প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র, “দ্য অ্যারাইভাল অব অ্যা ট্রেন অ্যাট দ্য স্টেশন”। লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় নির্মিত প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু ছিল- “একটি ট্রেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াচ্ছে। এ ঘটনা যদি চলচ্চিত্র না হয়ে স্হিরচিত্র হতো, তাহলেও বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হতো না। কিন্তু একটা তফাত আছে, সেটা হলো যে চলচ্চিত্রে ঘটনাটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডির মধ্যে (অর্থাৎ যতক্ষণ ছবি পর্দায় থাকছে ততক্ষণ) বিন্যস্ত। এই উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝতে পারি যে, চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংগীতের একটা সম্পর্ক রয়েছে এবং ছবি হওয়া সত্ত্বেও সিনেমা জিনিসটা চিত্রকলা বা ফটোগ্রাফি থেকে পৃথক”। সত্যজিৎ রায়ের ব্যাখায় চলচ্চিত্রের একটা সরল ভাষ্য পাওয়া যায়।

সেখানে খ্যাতনামা এবং বিতর্কিত ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ লুক গদারের (Jean-Luc Godard) একবাক্যের সোজাসাপটা বক্তব্য “অ্যা ফিল্ম ইজ অ্যা ফিল্ম”-  এই মাধ্যমটি সম্পর্কে একেবারে আনাড়ি মানুষদের খানিকটা বিপাকে ফেলতে পারে।  এই অস্পষ্টতা থেকে উত্তরণের জন্য আবারও আমরা চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের শরণাপন্ন হতে পারি: “ফিল্ম হলো ছবি, ফিল্ম শব্দও, এর মধ্যে আছে গতি, রয়েছে নাটক, সংগীত, গল্প। ফিল্ম হলো এরূপ সহস্রাধিক শ্রাব্যতা ও দৃশ্যের সমাহার। আজকের দিনে এও বলতে হয় যে, ফিল্ম রঙও। মাত্র মিনিটখানেকের স্থায়িত্বে এক টুকরো ফিল্ম এই সমস্ত দিকগুলোকে তুলে ধরতে পারে একইসঙ্গে”

আসলে মানুষ কেবল একটি গল্প শুনে বা পড়েই তৃপ্ত হয় না, সেটিকে দেখার আগ্রহও তার মধ্যে কাজ করে। সেই আগ্রহকেই একজন নির্মাতা কারিগরি প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পর্দায় দর্শকের উপযুক্ত  সিনেমা বা চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে এগোন।

একসময় চলচ্চিত্রকে ছায়াছবি কম ‘বই’ হিসেবে বেশি সম্বোধনের চল ব্যাপক মাত্রায় প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে পুরোনো যুগের মানুষেরা  চলচ্চিত্রকে ‘বই’ বলতে অভ্যস্ত। হয়তো বইভিত্তিক চলচ্চিত্রায়ণের কারণে ওভাবে বলা। গ্রামীণ জনগণের অনেকেই সিনেমার চেয়ে বই বলতেই পছন্দ করেন। তবে ছাপাখানার মাধ্যমে কাগজে প্রকাশিত ‘বই’, আর সেলুলয়েডের ফিতাবন্দি ‘বই’- দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাধ্যম।

এই মাধ্যমটিকে তার নিজস্ব ভাষা খুঁজে পেতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে। চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা নির্মাণের ক্ষেত্রে অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন মার্কিন পরিচালক ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ অগ্রণী হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ক্যামেরা ও এডিটিংয়ের যে বিশেষ বিশেষ ব্যবহারের ওপর সিনেমা ব্যাকরণের ভিত্তি, তার প্রায় সব কটাই গ্রিফিথের আবিষ্কার। “গ্রিফিথ প্রথমেই যে জিনিসটা বুঝেছিলেন সেটা হলো এই, মুখে যেমন এক নিঃশ্বাসে গল্প বলা যায় না, অথবা সাহিত্যের গল্পও যেমন বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে রাখতে হয়, তেমনি সিনেমার গল্পকেও খণ্ড খণ্ড দৃশ্যে ও খণ্ড খণ্ড শটে ভাগ করে সাজিয়ে বলতে হয়। এক একটি শট এক একটি বাক্য বা শব্দের মতো। কথার মতোই শটের ভাষা আছে, যেটা একান্তই ছবির ভাষা, দৃশ্যবস্তুর ভাষা। আবার সাহিত্যের গল্পকেও যেমন অনুচ্ছেদ ও পরিচ্ছেদে ভাগ করার দরকার হয়, তেমনি সিনেমার গল্পকেও mix বা fade জাতীয় কতগুলি বিশেষ যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উপায়ে পর্বে পর্বে ভাগ করা সম্ভব”

পৃথিবীর প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্রের নাম ইতোমধ্যে জেনেছি। এবার পৃথিবীর প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের গল্পটা শোনা যাক। কৌশিক মজুমদার রচিত “কুড়িয়ে বাড়িয়ে” বইটির তথ্যভাণ্ডার আমাদের জানাচ্ছে: সারা বিশ্বে যখন চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণা চলছিল, তখন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন নিজের মেনলো পার্কের গবেষণাগারে বসে নিরলসভাবে শব্দকে বন্দি করার আবিষ্কারে মেতে ছিলেন। সে সময় তিনি ফোনোগ্রাফ যন্ত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। এডিসনের গবেষণাগারে ইলেকট্রিক্যাল টেস্টিংয়ের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন ছাব্বিশ বছরের উইলিয়াম ডিকসন। সে সময়, ১৮৮৬ সালের নভেম্বরের এক হাড়কাঁপানো সকালে এডিসন, ডিকসনকে ডেকে পাঠান এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেন। যার একটি হলো: আকরিকের চৌম্বকশক্তি সংক্রান্ত, আর দ্বিতীয়টি এডিসনের ফোনোগ্রাফের আওয়াজের সঙ্গে জ্যুট্রোপের ছবিকে মেলানো যায় কি না সেটি দেখতে। এক কথায়, কথা বলা ছবি বা টকি, যা আসতে তখনও আরো বিয়াল্লিশ বছর লেগেছিল। সে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফল খুব আশাব্যঞ্জক ছিল না।

প্রায় তিন বছর কেটে যায়।  ১৮৮৯ সালে ডিকসনের কাছে খবর আসে, জর্জ ইস্টম্যানের ‘কোডাক’ কোম্পানি নাকি নমনীয় পাতলা ফিল্ম বানিয়েছেন। এই ফিল্ম পেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়। এদিকে এডিসন ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ফেরা মাত্রই তাঁকে নিয়ে ডিকসন সোজা চলে যান ওয়েস্ট অরেঞ্জ স্টুডিওতে। দরজা খুলে ভেতরের অন্ধকারে থতমত অবস্হা মানিয়ে নিতে এডিসনের খানিক সময় লাগলো। হঠাৎ দেখলেন, সামনে পর্দায় ডিকসন তাঁকে টুপি খুলে অভিনন্দন জানিয়ে বলছেন, “Good morning Mr. Edison, glad to see you back. I hope you are satisfied with the Kineto-phonograph.” সেই মুহূর্তে সৃষ্টি হলো এক ইতিহাস। ১৮৮৯ সালের ৬ অক্টোবর পর্দায় এলো পৃথিবীর প্রথম সবাক চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা (full-length feature film) ছিল একটি ক্রাইম ড্রামা, নাম “লাইটস অব নিউইয়র্ক”। এর পরিচালক ছিলেন ব্রায়ান ফয়। ভিটাফোন সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে লাইটস অব নিউইয়র্ক তৈরি হয় এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মাধ্যমে সেটা প্রদর্শনের জন্য মুক্তি পায়।

সামান্য পরিসরে নির্বাক-সবাক চলচ্চিত্রের আবির্ভাবের গল্পটা জানা গেল। বই বা সাহিত্যকেন্দ্রিক প্রথম চলচ্চিত্র কোনটি এমন কৌতূহল পড়ুয়া পাঠকের মনে উঁকি দেওয়া খুব স্বাভাবিক। ফরাসি ইলুশনিস্ট, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা জর্জ মেলিয়ে (পুরো নাম Marie-Georges-Jean Méliès) সিনেমা তৈরির আদিতম অধ্যায়ে ন্যারেটিভ নিয়ে কাজ করিয়েদের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। যেহেতু তিনি ম্যাজিশিয়ান ছিলেন, গল্প বলার এক সহজাত ঝোঁক তাঁর মধ্যে ছিল। নাটক নভেল থেকে তিনি অ্যাডাপ্ট করতেন। মেলিয়ের পর চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গ্রিফিথের অধ্যায় শুরু হয়। গ্রিফিথ চলচ্চিত্রের ভাষা শুধু নয় অন্যান্য উৎকর্ষেও ভূমিকা রাখেন। যাইহোক, আলোচ্য জর্জ মেলিয়ের হাত ধরেই পৃথিবীর প্রথম বা আদি সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৮৯৯ সালে চার্লস পেরোর রূপকথার ওপর ভিত্তি করে জর্জ মেলিয়ে নির্মাণ করেন “সিন্ডারেলা (ফরাসি- সিন্ড্রিলন)”, প্রথম বইকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি জর্জ মেলিয়ের নিজস্ব স্টার ফিল্ম কোম্পানির মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

 

ভিনদেশি চলচ্চিত্রের হাঁড়ির খবরের পাশাপাশি উপমহাদেশীয় প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়েও খানিক জেনে নেওয়া যাক। উপমহাদেশীয় সিনেমা জন্মলগ্ন থেকেই সাহিত্যের হাত ধরে পথচলা শুরু করেছিল। ভারতীয় প্রথম নির্বাক সিনেমা “বিল্বমঙ্গল” ছিল সাহিত্যকেন্দ্রিক। ১৯১৯ সালের ১ নভেম্বর কর্নওয়ালিস  থিয়েটার হলে সিনেমাটি মুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রের এক ইতিহাস। মাঝের দুই বছর বিরতি দিয়ে ১৯২২ সালে পর পর দুটি বাংলা সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। একটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “বিষবৃক্ষ”, অন্যটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “আঁধারে আলো”। প্রথমটি পরিচালনা করেন জ্যোতিষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয়টি করেন যথাক্রমে- শিশির কুমার ভাদুড়ি এবং নরেশ মিত্র।

চলচ্চিত্রের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যাবে বিশাল অঙ্কের সাহিত্য নির্ভর সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন নির্মাতারা। পৃথিবী জুড়ে দেশে দেশে সাহিত্যকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র নির্মাণের সে ধারা সবসময়ই সজীব ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে সন্দেহ নেই। আসলে একটি গল্প কিংবা কাহিনির ওপর ভিত্তি করেই তো সিনেমা বা চলচ্চিত্রের এগিয়ে যাওয়া। সেটি বইভিত্তিকও হতে পারে; আবার শুধুমাত্র সিনেমা নির্মাণের উদ্দেশ্যে রচিত কাহিনি নিয়েও হয়ে থাকে। এমন ঘটনাও ঘটেছে, সিনেমাটি বিপুলভাবে দর্শকনন্দিত হওয়ায় পরবর্তীতে চিত্রনাট্যটিকে বই হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। কাজেই এটি স্পষ্ট, চলচ্চিত্র এবং সাহিত্যের সম্পর্ক অতি প্রাচীন এবং নিবিড়। এ প্রসঙ্গে পূর্ণেন্দু পত্রীর সরেস মন্তব্যটি স্মরণে আনা যেতে পারে: “সাহিত্য এবং সিনেমার সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। প্রায়শই নিবিড় মিলন। কিন্তু মাঝে মাঝেই বিচ্ছেদ, বিরহ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিবাহবন্ধনের রাঙা রাখী ছিঁড়ে যায় অনতিবিলম্বে। আবার সব চলচ্চিত্রই যে সাহিত্যের সঙ্গে বিবাহিত এমনও নয়। কেউ কেউ চিরকুমার”

সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রায়নের ক্ষেত্রে অনেক নির্মাতা উপন্যাসের চেয়ে ছোটো গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর কারণ হয়তো নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া। একসময় চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিচালক পূর্ণেন্দু পত্রী এ বিষয়ে কী বলেছেন শোনা যেতে পারে: “…ছোটগল্প, সিনেমা তৈরির ব্যাপারে আমাকে টানে এত বেশি। যতই আঁটসাঁট হোক, ছোট গল্পের মধ্যে থেকে যায় এমন সব ফাঁকফোকর, খালি জায়গা, খোলা দরজা, যেখানে সহজেই ঢুকে পড়তে পারে, প্রায় বিনা অনুমতিতেই, পরিপূরক অনেক কিছুই। ছাপা-গান যখন গাওয়া গান হতে যায়, তখন স্বচ্ছন্দে ‘প্রেলুড’, ‘ইন্টারলুডের’ ফাঁকা জায়গায় ঢুকে পড়ে আবহসংগীতের যন্ত্রেরা। উপন্যাস অনেকটা রেলগাড়ির রিজার্ভ কামরার মতো। জায়গা অনেক। কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকজনের বাইরে অন্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ছোটগল্প ইন্টারক্লাস। জায়গা সীমিত। কিন্তু অজস্রের প্রবেশাধিকারে আপত্তি নেই …”

একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, লিখিত সাহিত্যের নিয়ন্ত্রণ থাকে লেখকের হাতে। শব্দে শব্দে তিনি তার চরিত্রদের নিয়ন্ত্রণ করেন। কখন সে চরিত্র রাগে ফেটে পড়বে বা বিষণ্ণতায় ডুবে যাবে, কিংবা আনন্দে আত্মহারা হবে তার সবটা লেখকের জানা থেকে। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে সে সাহিত্যকেন্দ্রিক সিনেমা হোক বা না হোক, তার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নির্মাতার হাতেও যেন থাকে না। পূর্ণেন্দু পত্রীর “সিনেমা সিনেমা” সংকলনের ‘কী ঘটবে জানি না’ এই বক্তব্যর ভিত্তিতে এ কথা বলা। ফরাসি চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা, বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জঁ লুক গদার (Jean-Luc Godard) আধুনিকতাবাদী ইতালিয় চলচ্চিত্র পরিচালক মিকেলেঞ্জেলো (Michelangelo Antonioni) আন্তোনিয়োনির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিনেমার এই বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। পত্রীর বয়ানে আসুন পড়ে নেয়া যাক: “আমি একটা ফিল্ম করব। প্রথম দৃশ্যে দেখতে পাবেন একটা লোক আণবিক মেঘ পেরিয়ে অন্যদিকে বেরিয়ে আসছে। এই লোকটি হলো এডি কনস্টান্টিন। তারপরে কী ঘটবে জানি না” গদারের কথার সূত্র ধরে পত্রী বলছেন- তারপরে কী ঘটবে জানি না, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এ এক অনিবার্য এবং অনতিক্রম্য সত্য। তারপরে কী ঘটবে, না জেনেই পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক সৃষ্টিশীল পরিচালক… পরে যা ঘটে ঘটুক দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী ঘটের ওপর বাকিটা ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে নিমগ্ন হন”

সাহিত্যের ক্ষেত্রে এটা সেভাবে খাটে না বলে মনে করি। কাহিনির সুন্দর একটা সমাপ্তি ছকে নিয়েই লেখককে লিখতে বসতে হয়– ছকে আঁকা সম্ভব না হলেও সাহিত্যকে শেষমেশ পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তির একটি লিখিত রূপ দেওয়া লাগে। এখানে ‘কী ঘটবে জানি না’ এমন অনিশ্চিত মনোভাব কাজ করলেও লেখালেখির সুন্দর সমাপ্তিতে সেই মনোভাবের খুব একটা সুযোগ নেই।

শেষকথা, বই বা সাহিত্য তার পাঠককে দেয় কল্পনার উন্মুক্ত আকাশ। সীমাহীন তার পরিধি। আর চলচ্চিত্র সে কল্পনাকে নিজের মতো করে পর্দায় তুলে ধরে দর্শক মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে চায়। যদিও বইয়ের মতো আজকাল সিনেমাও অনায়াস- বহনযোগ্য মাধ্যম হিসেবে মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে গেছে। কাগজের বই বা ই-বুকের মতো চাইলেই এখন যেখানে খুশি, সেখানে বসে আপনি দেখে নিতে পারেন পছন্দের যে কোনো সিনেমা। ই-বুকের ব্যাপক প্রসার-প্রচারের পরও যেমন কাগজের বইয়ের অবদান তামাদি হয়নি, একইভাবে সিনেমা এখন মানুষের হাতের নাগালে ঘুরলেও প্রেক্ষাগৃহের বিশাল পর্দায় সিনেমা দেখার আবেশে এখনও মানুষ অবসর সময়কে ভরিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তুলনায় হয়তো কম, কিন্তু বিশাল পর্দায় প্রক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র বা কাগজের বই এখনও মানুষের প্রিয়বস্তুর তালিকায় বহাল তবিয়তে আছে। আর সেটা যদি প্রিয় সাহিত্যকেন্দ্রিক কোনো চলচ্চিত্র হয়, পাঠকমাত্রই দর্শক হয়ে সেটা দেখে নেবার আগ্রহ পুষবেন তাতে সন্দেহ নেই।  সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রায়ন কতটা সফল বা সফল নয় সে আলোচনা আরেক দিনের জন্য তোলা রইল। আপাতত বই এবং সিনেমা নামের দুটি বিপরীত কিন্তু একে অন্যের সম্পূরক, চিত্তকে প্রশান্তি দিতে ওস্তাদ যুগলের সঙ্গী হতে পারার আনন্দ উদযাপন করি আসুন।

কৃতজ্ঞতা:

১. বিষয় চলচ্চিত্র- সত্যজিৎ রায়, আনন্দ প্রকাশনী, কলকাতা।

২. সিনেমা সিনেমা- পূর্ণেন্দু পত্রী, প্রকাশক আশিস গোপাল মজুমদার, ডি. এম লাইব্রেরি, কলকাতা

৩. চলচ্চিত্রের আবির্ভাব- জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক রমা বন্দোপাধ্যায়, শশধর প্রকাশনী, কলকাতা।

৪. How to read a film: movies media and beyond, James Monaco, Oxford University Press.

৫. কুড়িয়ে বাড়িয়ে- কৌশিক মজুমদার

৬. সাহিত্য চলচ্চিত্রে অনূদিত নয়, রূপান্তরিত হয়: গৌতম ঘোষ: জয়ন্ত সাহা, bdnews24

৭. বিপ্লব বিশ্বাস

 

Read Previous


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর