ইজাজ বেনহুসেন
১৯৯৩-৯৪ সালে আরাকি তরঙ্গ স্কুলে গান শিখতে যেতো। আমার সঙ্গে অনেক গানই সে গুন্ গুন্ করে গাইতো, তার বেশির ভাগই ছিল হিন্দি গান। ওর নিখুঁত উচ্চারণ আমার স্ত্রী ও আমাকে এতটাই অনুপ্রাণিত করে যে আমি ওকে নিয়ে বসে যাই, একটার পর একটা গান সে নিখুঁত ভাবে গাইতে শুরু করে। তখন তার বয়স ৫ বছর। সাড়ে ৫ বছর বয়সে আরাকি লতাজির ১৪টি গান শিখে নেয়।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো “মেরে দিল ইয়ে পুকারে আজা, আজাও তারাপতে হ্যায় আরমা, হামারি দিলসে না জানা, আয়েগা আনে ওয়ালা ও আরো অনেক গান। একই সঙ্গে আরাকি শচীন দেব বর্মন গীত গান, নজরুল সংগীতও গাইতে শুরু করে। এক ফাঁকে শেখ সাদির সুরে আরাকি সাবিনা ইয়াসমিন ও অ্যান্ড্রু কিশোরের সঙ্গে ছায়াছবির জন্য কণ্ঠ দেয়। আমরা ওর গান রেকর্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেই , করেও ফেলি।
আমরা অত্যন্ত আপনজন, ইফাদ গ্রূপের সিইও, ইফতেখার আহমেদ টিপু ওর রেকর্ড করা গান শুনে ওর ক্যাসেট ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে লতাজির কাছে পাঠায়। পরে আমরা জানতে পারি উনি বলেছিলেন, ওর বয়স কত, হিন্দি কি করে জানলো ?
এরই মধ্যে ১৯৯৪ সালে আমরা পাকাপাকি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি। ওর মা, আসমা ইজাজের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে আরাকি নিউ জার্সিতে তপন বৈদ্যের কাছে সংগীতের তালিম নিতে থাকে।উনি নিউ ইয়র্ক থেকে আসতেন গান শেখাতে। এরই মধ্যে ১৯৯৫ সালে লতাজি একটা শোতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসেন। এক সকালে আমি একটি টেলিফোন কল পাই, ওই প্রান্ত থেকে একটি মেয়ে কণ্ঠ বলে ওঠেন, ম্যায় উষা মঙ্গেস্কর বলরাহিহো, লতাদি আরাকিসে বাত করনা চাহতি হ্যায়।
আমার পরিচয় দিলাম। উনি বললেন আপনারা ডিসি আসতে পারবেন ? দেরি না করে পরের দিনই আমরা ডিসি রওয়ানা হলাম। শো’র আগের দিন উনি উপোষ থাকেন। ডিসির ওয়াটারগেট হোটেলে পৌঁছে জানলাম শুধুমাত্র আমাদের ৩জনের ওনার কাছে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
আমাদের সাদরে গ্রহণ করলেন লতাজি।
প্রথমেই বললেন, এই গানগুলো আমি গেয়েছি তখন আমার বয়স ১৮ থেকে ২০ এর কোঠায়। আরাকি ৫-৬ বছরে এসব গান এতো নিখুঁতভাবে গাইলো কি করে ? হিন্দি জানলো কি করে ? অনেক দোয়া ও আশীর্বাদ দিলেন। বললেন পরিশ্রম করে যাও, অনেক বড় হবে।
ছবি/ তুলেছেন আসমা ইজাজ, ওয়াটারগেট হোটেল, ওয়াশিংটন ডিসি, জুলাই, ১৯৯৫
ইজাজ বেনহুসেন রোকেয়া হায়দার আপার ছোটবোন আসমার বর এবং ভয়েস অব আমেরিকার সাথে কাজ করেছেন তিন দশক।