• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ খবর
Банда казино рабочее зеркало Банда Казино – как начать играть? Banda casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Банда Как Вывести Деньги Драгон Мани? Казино Драгон Мани Зеркало Банда Казино – официальный сайт Банда казино онлайн Общий обзор Банда Казино Отзывы Банда Казино – Мнения и Отклики от Реальных Игроков Banda Casino Обзор популярных игр в Banda Casino: Зеркало Банда Казино | Halostar Marketing Kometa casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Комета Казино Комета официальный сайт онлайн. Зеркало казино Kometa. Личный кабинет, вход, регистрация Как получить бонусы в Комета Казино? Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино – Вход На Сайт, Личный Кабинет, Бонусы За Регистрацию, Лучшие Слоты На Деньги И Бесплатно В Демо-Режиме Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Играй В Уникальном Стиле: Комета Казино Ждет Тебя! Комета Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Kometa Casino Онлайн Казино Комета. Зеркало Казино Kometa. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Kometa Casino Зеркало ᐈ Вход На Официальный Сайт Комета Казино Игровые автоматы бесплатно лягушка Комета Казино Betflag Bookmaker Scommesse Ed Exchange Ramses Revenge Position Read our fortune factory studios video games Review On the internet Melhores Slot Machines 2024 Apostar Acessível aquele Abraçar Bônus Angeschlossen Kasino Provision: Sattelfest Die leser die gesamtheit via die besten Boni je 2024 Verbunden Bingo spielen unser besten Bingo Angeschlossen Casinos 2024 Objective Australian medusa 2 $1 deposit Casino Ratings 2024 Trust, Incentives & Fair Enjoy Interwetten Casino Prämie, 1 Codes and Coupon bloß Einzahlung Free Spins eksklusiv Giroindbetalin september 2024 Karamba Spielsaal Erfahrungen und Schätzung Casino Seher Site Oficial No Brasil Apostas Esportivas Electronic Cassino Onlin

মাদার, অরভিল, পন্ডিচেরি, তামিলনাড়ু, ভারত, এপ্রিল,২০১৫

রিপোর্টারের নাম : / ৭৪ ভিউ
আপডেট সময়: শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২

 

মাদার, অরভিল, পন্ডিচেরি, তামিলনাড়ু, ভারত, এপ্রিল,২০১৫
নাহিদা চৌধুরী

আমাদের ছোটবেলায় অনেকেরমাঝেই পত্রমিতালীর সৌখিনতা ছিল। আর ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রেডিও স্টেশন গুলোর সিগনাল লম্বা এন্টেনা খুলে মিটার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজে বের করা। অনেকে তো একটা আলাদা তার লাগিয়ে এই আবিস্কারের কাজটা করতো। আমার সেজো মামা’র এই কঠিন নেশাটা ছিল, সম্ভবত তার কোন বন্ধু থেকে এই নেশা তার মাঝে সংক্রমিত হয়। আর এই নেশার নাম ছিল DXing। সারা দেশে প্রচুর মানুষের এই শখ ছিল, এদেরকে Dxer বলা হতো, এক সময় তারা ইন্টারন্যাশনাল রেডিও ক্লাবও করেছিল। রেডিও ক্লাবের সুবাদেই বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে তার পত্রমিতালী ছিল। তেমনই একজন পত্রমিতা পশ্চিমবঙ্গের ছিলেন। তিনি যখন চিঠি পাঠাতেন খামের ওপর অনেক সুন্দর সুন্দর ডাকটিকেট থাকত, কিউবার একটা ডাকটিকেট দিয়ে আমার ডাকটিকেট সংগ্রহের সূচনা। নতুন ডাকটিকেটের প্রতি বরাবরই আমার আগ্রহ। কিন্তু এগুলো আমি পেতাম না, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উনি লিখতেন ফিরতি খামে ওনাকে ফেরত পাঠাতে। আমার অনেক মন খারাপ হতো, কিছু করার তো ছিল না। তখন মনে হয় ক্লাস ফোর এ পড়ি, একদিন উনি একটা চিঠি পাঠালেন, ওতে যে ডাকটিকেট টা ছিল সেটা ফেরত চাইলেন না, আমিও খুশি হয়ে গেলাম আমার সংগ্রহে নতুন একটা ডাকটিকেট যোগ হলো। এই ডাকটিকেট টা আমাকে দক্ষিন ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের পন্ডিচেরির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, মাদার পন্ডিচেরি’র শতবর্ষ পূর্তিতে তাঁর ছবি দিয়ে ডাকটিকেট টা করা। এই ছবিটাই আমার স্মৃতিতে ছিল, তেমনই পন্ডিচেরি নামটাও।

অনেকদিন পর কয়েকটা ক্যাটেগরীতে অস্কার পাওয়ার কারণে Life of PI মুভিটা দেখতে গিয়ে আবারও পন্ডিচেরি নামটা দেখলাম, জায়গাটাও দেখলাম। এর চার পাঁচ বছর আগে আমি একটা কাজে চেন্নাই গিয়েছিলাম, তখন একবারও জায়গাটার নাম মনে পড়েনি, সে কারণে কোন আগ্রহও জাগেনি।আর ওটা কাজের ভ্রমণ হওয়ার কারণে মাথায় বেড়ানোর ব্যাপারটাও ছিল না। কাজ শেষ করেই ফিরে এসেছিলাম।

আমার এক বন্ধু চিকিৎসার কারণে বছরে একবার ভেলোর এর ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। এপ্রিল,২০১৫ বন্ধুটি যাবার সময় আমাকে সাথে যেতে বলল, আমিও রাজী হয়ে গেলাম। সড়ক পথে হরিদাসপুর, বনগাঁও থেকে ট্রেনে কোলকাতা, দিনে দিনে যাব বলে এর মাঝে অশোকনগর স্টেশনে ওর বোনের ছেলে আমাদের ভেলোর যাবার টিকেট ট্রেনের জানালা গলিয়ে দিয়ে গেল। বিকাল চারটায় হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন, আমরা শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে কোনো ট্যাক্সি পেলাম না, একটা হাওড়াগামী বাসে চড়ে হাওড়া গিয়ে নামলাম, স্টেশনে পৌঁছানোর পর পরই ট্রেন চলে এলো, আমরা দু’দিনের জন্য ট্রেনের বাসিন্দা হয়ে গেলাম। পরদিন রাত ১১ টা নাগাদ ভেলোর’র কাঠপাটি স্টেশন’এ নামলাম, তারপর একটা অটোতে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ’র কাছে একটা লজ এ উঠলাম।

দু’দিন হাসপাতাল এর কাজের পর ঠিক করলাম এবার পন্ডিচেরি যেতে হবে, একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম একদিনে পন্ডিচেরি ঘুরে ফিরে আসব। পরদিন ভোরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম, পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা, কোনো কোনো জায়গায় পাহাড়ের গায়ে বড় বড় পাথরগুলো এমন ভাবে ঝুলে আছে মনে হবে এক্ষুনি ছুটে এসে গায়ে পড়বে।পথে একটা মন্দির এর সামনে ড্রাইভার গাড়ী থামালো নাস্তা করার জন্য। আমরা মন্দির এর বাইরে থেকে ভিতরটা যতদূর দেখা যায় দেখে নিলাম।দক্ষিণ ভারতের বেশীর ভাগ দেবদেবীর রঙ কালো, সবুজ, গাঢ় নীল, আমি আমার মত করে ভেবে নিলাম ওরা ওদের মত করে হয়তো দেবদেবীদের তৈরী করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলাম না, নাজুক বিষয়, কি বলে কোন বিপদে পড়ি।

ঘন্টা খানেক পর পন্ডিচেরি ঢোকার তোরণের সামনে গাড়ী থামলো PUDUCHERRY লেখা দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো, অবশেষে চলেই এলাম। ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৬৬ সালে জিন-ব্যাপটিস্ট কলবার্ট কর্তৃক গঠিত, ১৬৬৮ সালে সুরাটে এবং অন্যটি ১৬৭৪ সালে পন্ডিচেরিতে একটি বসতি স্থাপন করে। কোম্পানির পরিচালক ফ্রাঙ্কোইস মার্টিন পন্ডিচেরিকে ফরাসি বাণিজ্যস্থল গুলির রাজধানী করেন। যদিও এখন সরকারি নাম পুদুচেরি। পুদুচেরি শহরটির মূল নাম ছিল ‘পুতুসিরি’, যা তামিল শব্দ ‘পুতু’ (যার অর্থ ‘নতুন’) এবং ‘সিরি’ (যার অর্থ ‘গ্রাম’) এই দুটি শব্দ থেকে উদ্ভূত। ফরাসিরা যখন শহরটিতে উপনিবেশ স্থাপন করে, তখন তাদের উচ্চারণের সুবিধার্থে শহরটি নামকরণ করে ‘পুন্ডিচারি’ বা ‘পন্ডিচেরি’। ভারতের স্বাধীনতার পরও পন্ডিচেরি হিসেবেই পরিচিত ছিল শহরটি। ২০০৬ সালে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শহরটির নাম পরিবর্তন করে ‘পুদুচেরি’ নামকরণ করে। পন্ডিচেরি কিন্তু ভারতের অন্য জায়গার মত নয়, শহরটা দেখে মনে হবে ইউরোপের কোথাও চলে এসেছি। কিছুক্ষণ আগেও মানে তোরণে প্রবেশের আগেও দৃশ্য অন্যরকম ছিল। ইতিহাস বলে এটা ছিল একটা ফরাসী উপনিবেশ। সে কারণেই এখানকার সব কিছু ওদের মত করে করা। বাড়ীগুলো বিদেশী টাউন হাউজের মত। ধবধবে সাদা আর হলুদের এক অসাধারণ সমন্বয়, ঝকঝকে রাস্তা। এখনও প্রচুর ফরাসীরা এখানে বসবাস করে, পথে পথে প্রচুর ফরাসী বা ভিনদেশীদের সাইকেল এ করে ঘুরতে দেখলাম।

পুরো শহর জুড়ে ফরাসী ছাপ, রাস্তার নাম, পোষাক শৈলী, খাওয়া-দাওয়া সব কিছুতেই। সারা শহরে কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি নেই। তাই এই ফরাসী ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু মনে হয়নি। এক কথায় নজরকাড়া ঝলমলে শহুরে জীবন। আর এটাই পন্ডিচেরিকে আকর্ষণীয় করে তোলে পর্যটকদের কাছে। মন্দির, বিচ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, স্থাপত্যে সমৃদ্ধ দর্শনীয় চার্চ, অ্যাকুরিয়াম- দেখার অনেক কিছুই রয়েছে এই পন্ডিচেরি শহরে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে সব জায়গা গুলো দেখা হলো না।

প্রথমেই গেলাম শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে, এই মহান ব্যক্তি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে পড়াশুনা করার পরও ভারতে ফিরে এসেছিলেন, ব্রিটিশ সরকারের চাকরীতে প্রথমে যোগদান করার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে সেটা বাতিল করে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের নেতৃত্বে থাকাকালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।ব্রিটিশরা তাঁকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার কারাগারে প্রেরণ করার পরিকল্পনা করলে তিনি পন্ডিচেরিতে পালিয়ে যান, সেখানে ফরাসিরা তাঁকে আশ্রয় দেয়। তখন থেকে  জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তিনি পন্ডিচেরিতে থেকে যান । তিনি একজন বিপ্লবী ও দ্রষ্টা, কবি এবং একটি সামাজিক তাত্ত্বিক, দার্শনিক এবং মানব চেতনা প্রসারের পরীক্ষক ছিলেন। আশ্রমে ক্যামেরা নিতে দিল না, ওঁনার সমাধি পর্যন্ত যেতে পারলাম না, চীন,জাপান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স প্রায় সব দেশের মানুষ বসে আছে এখানে। অনেকেই সকালে এসে বসে সারাদিন এখানেই থাকে।দূর থেকে দেখে নিলাম,একটা লাইব্রেরী আছে আমার বন্ধু কিছু বই কিনলো তারপর বেরিয়ে এলাম।

পাশেই গনেশ মন্দির নাম “আরুলমিগু মানাকুল বিনয়গর”, প্রচন্ড গরম মন্দির থেকে বেশ খানিক দূরে জুতা খুলতে হয়, পিচঢালা রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটা কঠিন, তারপরও মন্দির দেখতে গেলাম। মন্দিরে একটা পাথরের হাতী আছে, একটা স্বর্ণ মিশ্রিত ধাতু দিয়ে তৈরী রথ আছে, মন্দিরের ছাদে ফ্রেসকো চিত্রকলার মত মুরাল করা দেবদেবীদের নিয়ে। আশেপাশে পর্যটকদের জন্য অনেক ছোট ছোট দোকান, কিছু হকারকেও দেখলাম ঘোরাঘুরি করছে।

কাছেই রক বিচ, তবে বেলাভূমি বা সৈকত নেই । আছে শহরটিকে রক্ষা করার জন্য অগণিত কালো ব্যসল্ট এর বোল্ডার। নিচে নামা যায়,তবে সাবধানে।এখানেই আছে পুরনো চার্চ, লাইটহাউস, জাহাজ ঘাটা। প্রচন্ড রোদ দিনে দিনে ফিরতে হবে বলে রোদ মাথায় রক বিচ এ গেলাম, এটাও বঙ্গপোসাগর, একাধিক তরঙ্গ পাথুরে উপকূলে আঘাত হানার জন্য নিখুঁত জায়গা। সাগর পাড়ে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি, একটা জমকালো রেস্তোরা আছে। ওপরে দাঁড়িয়েই দেখে নিলাম, পানিতে পা ভেজাতে ইচ্ছে করলো না। একদল স্কুলের বাচ্চাদের দেখলাম মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে দলবেধে মনযোগ দিয়ে শিক্ষকদের বর্ণনা শুনছে। এই দৃশ্যটা আমার খুব ভালো লাগল। বাচ্চারা দুষ্টুমী না করে চুপচাপ জ্ঞানার্জনে ব্যস্ত।

পন্ডিচেরির নিগূঢ় স্থানগুলোর মধ্যে একটি যা শহর পর্যটনে অনন্য আকর্ষণ যোগ করে তা হলো একটি নজরকাড়া শ্বেতশুভ্র স্মৃতিস্তম্ভ যার উপরে ফ্লুর-ডি-লিস* রয়েছে যা আই মান্দাপাম  বা পার্ক স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে সমাদৃত। আর এটা আছে পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল ভারতী পার্ক’এ। স্থপতি লুই গুরে ১৮৫৪ সালে একজন ভারতীয় বারবণিতার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে এই মহিলা শহরের জল সরবরাহের জন্য একটি জলাধার তৈরি করতে তার নিজের বাড়িটি ধ্বংস করেছিলেন। যাইহোক, এই শিল্পকর্মটি নির্মাণের পিছনে আরও একটি আকর্ষণীয় কিংবদন্তি রয়েছে যা হলো ১৬ শতকের গোড়ার দিকে, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজা – কৃষ্ণদেবারায় একবার পন্ডিচেরি সফরে এসে একটি সুন্দর ভবন দেখে মন্দির ভ্রম করেন। আসলে এটি ছিল একজন বারবণিতার বাড়ি। তাঁর ভুল ধারণার ফলস্বরূপ, তিনি হাঁটু গেড়ে মাথা নত করে কুর্ণিশ করেছিলেন।

পার্কে গাছের ছায়ার বসার জায়গা আছে, রুপকথার গল্পের মতো অনেক চরিত্র দিয়ে খেলার আয়োজনও আছে। গান্ধী মূর্তির কাছে যে বাচ্চাদের দলটা দেখেছিলাম, ওদের এখানে দেখলাম অন্যরূপে। এবার ওদেরকে সত্যিকার দুষ্টু বাচ্চাই মনে হচ্ছে। প্রতিটা জায়গায় তারা বেশ আনন্দের সাথে খেলাধুলা করছে। গাছের ছায়ায় বসে বাসায় ফোন করলাম, বোনের সাথে কথা হলো, এত সুন্দর একটা জায়গায় এসেছি সেটাও জানালাম। একটা জায়গায় পান করার পানি দেখে দুজনে পান করে নিলাম।গরমের জন্য হাতমুখও ধুয়ে নিলাম।

পন্ডিচেরি ভ্রমণে আমার কাছে সবথেকে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে শ্রী অরবিন্দ’র গুণমুগ্ধ সহযোগী ফরাসী নাগরিক মিরা আলফাসো’র প্রতিষ্ঠিত ‘মাতৃমন্দির’, শ্রী অরবিন্দ’ই মিরা’কে ‘সার্বজনীন মাতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন, মিরা আলফাসো ছিলেন একাধারে আধ্যাত্মিক গুরু, পরাবিদ্যাজ্ঞানসম্পন্ন, দূরদর্শী বিদুষী মহিলা, অরবিন্দ ও মিরা’র যোগবিদ্যা সংক্রান্ত আলোচনাদি ও অনুশীলন Integral Yoga বা সমাকলন যোগ হিসেবে সমাদৃত হয়, যা মাতৃমন্দিরের চর্চিত ভিত্তিমূল বলেই প্রসিদ্ধ। যে মাদার এর ছবি দেখে আমার পন্ডিচেরীর সাথে পরিচয়, সেই মাদার’ই এই মিরা। মাদার তাঁর অভিপ্রায়ে বলেন- “একটি সার্বজনীন শহর যেখানে সকল দেশের নারীপুরুষ একসাথে বসবাসে সক্ষম হয় শান্তি, প্রগতিশীলতা ও সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে; যেখানে এটি হবে সকল ধর্ম, সকল রাজনীতি এবং সকল জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে, অরভিল-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- মানবের একাত্মতাবোধে উজ্জীবিত করা”।

অরভিল যাবার পথে ড্রাইভার আমাদের এক বাঙালির বাড়ী নিয়ে গেল, এ পরিবারটি বাড়ীর ছাদে হোটেল চালায়। বাড়ীটি ফরাসী স্থাপত্যের হলেও ভিতরে পুরোটাই বাঙালিয়ানা, হোটেলের কোন নাম নেই, এরা ড্রাইভারদের মাধ্যমেই গ্রাহক সংগ্রহ করে। আমরা হঠাৎ গেলাম আর একটু বেলা হয়ে যাওয়াতে তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। তবে সজনে ডাঁটা দিয়ে ডালের বড়ির চচ্চড়ি আর কাঁঠাড়ের এঁচোড়ের নিরামিষ দারুণ উপাদেয় ছিল। আমরা দুপুরের খাওয়া সেরে নিয়ে মাতৃমন্দিরের উদ্দ্যেশে রওনা করলাম।

অরভিল এর গেট থেকেই হাটা শুরু, অরোভিলে অনন্য এক বিশ্ব চরাচর, কী পাওয়া যাবে না এখানে ? খাওয়া-দাওয়ার রেস্তোরাঁ, বেকারী থেকে শুরু করে থাকার ব্যবস্থা, নানা রকম স্মরণিক দোকান সবকিছুর সমাহার যেন এই অরোভিল।বিশ্ব মানব বসবাসের আশ্চর্য নিদর্শন অরোভিল।

একটা জায়গায় একটা থিয়েটার’এ মাতৃমন্দির এর একটা তথ্যচিত্র দেখানো হয়, আমরা সেটা দেখে নিলাম। অরভিল একটা ছোট শহর যার কেন্দ্রে মাতৃমন্দির, প্রায় এক কিলোমিটার হেটে মাতৃমন্দির’এ যেতে হবে, জায়গাটা খুব নিরিবিলি, গাছে গাছে বড় বড় উইন্ড চাইম ঝুলানো, বাতাসে এর শব্দে মনটা ভাল হয়ে গেল, কেমন যেন মাদকতা আছে এই মধুর নিনাদে। এত গরমে যে হাঁটছি একটুও খারাপ লাগছিল না। জায়গায় জায়গায় সুন্দর সুন্দর সব মন ভাল হয়ে যাবার কথা লিখা, চাইলে পানি পান করে নেয়া যায়, বিশ্রাম নেবার জায়গাও আছে। বয়স্কদের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা আছে। পথে যেতে যেতে যারা ফিরে আসছিল তাদের দেখে জানতে চাইলাম আর কতদূর, বলল দশ মিনিট, কিন্তু দশ মিনিট শেষ হয় হাঁটা শেষ হয় না।

আহা! মাতৃমন্দির এর সামনে এসে দাড়ালাম, সোনালী বলয়টা দেখলাম। মনটা ভালো হয়ে গেল। আসলে এত ছোটবেলা থেকে একটা মানুষকে মনে লালন করছি, তাঁর এই সৃষ্টিকে এত কাছে থেকে দেখতে পাবার আনন্দই অন্যরকম। আমাদের ফেরার সময় হয়ে গেল, আসলে এই জায়গাটা এত অল্প সময়ে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। ফেরার পথে আর কষ্ট করে হাঁটতে হলনা, ফিরতি কিছু গাড়ী ছিল তারাই আমাদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আমরা ভেলোর ফিরে এলাম, আমি ফিরে এলাম আমার এত বছরের একটা ইচ্ছে পূর্ণ করে, অসম্ভব ভালো লাগা একটা অনুভূতি নিয়ে।

“তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে॥
তব, পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক্, মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে”।

* ফ্লুর ডি লিস শক্তি, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং আনুগত্যের প্রতীক এবং দেহ ও আত্মার শুদ্ধতার প্রতীক । এটি একটি প্রতীক যা স্কাউটিং, ফ্রিম্যাসনারি, আলকেমি এবং কিছু ধর্মে ব্যবহৃত হয়।
* তথ্যসূত্র অন্তর্জাল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর