আরিফুর রহমান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাঝে মাঝে যেভাবে একই এলাকার অতি মুখচেনা মানুষ জন কোনো কারণে মরণঘাতী টেটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সেরকমই বিশেষ কোনো একটি কারণে একই স্লাভ জাতি উদ্ভুত হয়ে, এক সময় একই সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষ হয়েও লড়াইয়ে নেমেছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন।
এখন মনে হচ্ছে, এই যুদ্ধে দেশ দখল মূল উদ্যেশ্য নয়। মার্কেট পরিস্থিতি ও পৃথিবীর অর্থনীতির অবস্থা
দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, পৃথিবীতে পেট্রোডলার সিস্টেমের অবসান ঘটানো হচ্ছে- এই যুদ্ধের টার্গেট। এই আক্রমন তারা হটাৎ করেনি, এর জন্যে রাশিয়া ও চীন বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঠান্ডা মাথার চিন্তা ভাবনা থেকেই ভ্লাদিমির পুতিন ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের ঝুঁকি নিয়েছেন, ভালো করে জেনেই যে, ইউক্রেন আক্রমণ করলেই আমেরিকা ও পশ্চিমের দেশগুলি অনিবার্যভাবে ডলার সুইফট সিস্টেম রাশিয়ায় জন্যে আটকে দেবে। আর আটকে দিলেই পরিকল্পনা মাফিক পাল্টা চাল হিসাবে রাশিয়া ইউরোপে তেল ও গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দেবে। রাশিয়া জানে, যুদ্ধ শুরু হলে পৃথিবীর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটবে, তার ফলে, পশ্চিমা বাজার এবং পশ্চিমের মুদ্রা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আবার পৃথিবীর বাণিজ্য বিক্রি কমে গেলে রাশিয়ারও অর্থনৈতিক ঘাটতি আসবে, সেটি বুঝেই রাশিয়া আগে থেকেই বিশাল ইউয়ান, স্বর্ণ ও পণ্যের মজুদ রেখেছে।
গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া এবং চীন স্বর্ণকে পুনরায় নগদ বিনিময় মাধ্যম বানানোর চেষ্টা করে আসছিলো মিনমিন করে, কিন্তু আমেরিকান টাকশালের ডলারের সাথে টাকাটাকি করা কখনো সম্ভব হয়নি। সেই থেকে এই দুটি দেশ পথ খুঁজছিল কিভাবে সুইফট SWIFT সিস্টেমকে স্থায়ীভাবে তালাক দেয়া যায়।
সহজ পথগুলি সব অবরুদ্ধ থাকায় ইউক্রেনকে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমারা যখন সুইফট বন্ধ করলো তখন রাশিয়া ও চীনের এতদিনের আরাধ্য কাজটি খুব সহজেই সম্পন্ন হয়ে গেলো। এখন যুদ্ধ বিরতি হলে পশ্চিমের সুইফট সিস্টেম মুক্ত রাশিয়া বলতে পারবে, “আমরা তেলের পাইপলাইনগুলি আবার চালু করব, কিন্তু ডলারে আর বিনিময় হবেনা।”
তৃতীয় বৃহত্তম বৈশ্বিক তেল উৎপাদক হিসাবে রাশিয়ান ক্রুড অয়েল এবং পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ উৎপাদক হিসাবে ইউক্রেনীয় গম কিনতে হলে এখন থেকে ডলার নয়, অবশ্যই সোনায় অর্থ প্রদান করতে হবে, অথবা রুবেল-ইউয়ান স্বর্ণ ব্যাকড পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে,–নো মোর সুইফট। ভবিষ্যতে দাবা খেলার রাজা আটকানোর মতো “চেক” বলে বসে থাকবে রাশিয়া ও চীন।
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি যারা লিভারেজ হিসাবে বেশী তেল উৎপাদন করতে পারে তাদের মধ্যে সৌদী আরব আজ বলেছে আমরা তেল উৎপাদনের কোটা বাড়াবোনা। সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বে তেলের মূল্য ধাক্কা খেয়েছে। ব্রেন্ট মূল্য আজ ১১০ ডলার, আরো কিছুদিন যুদ্ধ চললে ১৫০ উঠবে। তেল আর গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে ইউরোপের জনসংখ্যার একটি ভাল অংশ ঠান্ডা থেকে তাদের ঘর গরম করতে অক্ষম হতে পারে।
একই সময় তেলের স্বল্পতা ও গমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলাফল পরিষ্কার, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ঘাটতি এবং সব কিছুর মূল্যের বৃদ্ধি।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এই সব ঘটনার মধ্যে চীনের ও ভারতের নাম নেই, এনারা নীরব এবং দুজনের কেউই রাশিয়ার নিন্দা করেননি। এর অর্থ হচ্ছে নীরব অনুমোদন ও সহযোগিতা। এটি করে ভারত সবচেয়ে বুদ্ধিমানের মতো চীনকে তাদের অঘোষিত “কৌশলগত অংশীদার” বানিয়ে এই যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে। এটি না করলে ইমরান খান আর পুতিনের সাম্প্রতিক মিটিংয়ের বক্তব্যে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা শোনা যেত। এই সব পর্দার পেছনের ঘটনাবলীর কারণে অনাকাঙ্খিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও ভারত আর পাকিস্তান, এবং ভারত ও চীন খুব সম্ভবতঃ পরস্পর মারপিট করবে না। চুপ করে বসে ক্রিকেট দেখার মতো বড়দের উইকেট পতন দেখবে।
বাংলাদেশের লিডার ওকা সাহেব চোখে সানগ্লাস পরিধানে আগেই রাশান আর ইউক্রেনের দিলে নিদারুণ বেদনা লাগিয়ে ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন, ‘যুদ্ধরত দুই দেশের কোন দেশকেই বাংলাদেশ সাহায্য করবে না’। না, মুখ টিপে হাসার কিছু নেই! ইরাকের কুয়েত দখলের পরে বাংলাদেশ ইরাকের বিরুদ্ধে কন্টিজেন্সি ফোর্স পাঠিয়েছিলো তথাকথিত আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনে। কিন্তু এবার আমরা টুপটাপ থাকবো।
যদি উপরের বিশ্লেষণটি সত্যিই সঠিক হয়, তাহলে পেট্রো ডলার আর হয়তো একমাত্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে বেঁচে থাকবেনা। অতীতে লিবিযার তেল নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে ন্যাটো জোট কর্নেল গাদ্দাফিকে হত্যা করিয়েছিলো। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের ঘটনা অন্যরকম দেখালেও তেল দখলে নেয়া ছিলো আমেরিকার আসল প্লান। উওপেন অফ মাস ডেস্ট্রাকশন খতম করার নামে বেচারা মুসলমান প্রেসিডেন্টকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মারলো।
কিন্তু এবারের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার তেল দখলে নেয়া পশ্চিমাদের জন্যে সহজ হবেনা, কারণ পুতিন না সাদ্দাম, না গাদ্দাফি। ইরানের তেলকে আমেরিকা আগেই স্যাংশন দিয়ে রেখেছে। আমেরিকা এতদিন যত সহজে অতীতের চ্যালেঞ্জিং মুসলিম নেতাদের সরিয়ে, হত্যা করে, ফাঁসী দিয়ে তাদের প্রতারণামূলক পেট্রোডলার মুদ্রা ব্যবস্থা চালু রেখেছিলো, এবার তেমনটি আর সহজে হচ্ছেনা।
আমেরিকার নেতৃত্বের হটকারী বুদ্ধিতে রাশিযার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম যত বাড়বে ততো বাড়বে রাশিয়ার ইনকাম। যুদ্ধ যত লম্বা হবে পশ্চিম ততো দেউলিয়া হবে। রাশিয়ার গ্যাস না পেলে ২৫% বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে ইউরোপে। এখন থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে চলছে ইউরোপ ও কানাডায়।
পুতিন নাকি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাইবেরিয়ার এন্টি নিউক্লিয়ার বোমা বাঙ্কারে সরিয়ে রেখেছেন অগ্রিম হিসাব করে। যুদ্ধ লম্বা হলে আমেরিকা ও ন্যাটো আগের মতোই কোন হটকারী পদক্ষেপ হয়তো নিবে। আর সেটি নিলেই পুতিন তাঁর গলার চেনে ঝুলানো ক্রুসবিদ্ধ যীশুর মেডালিয়ানটি একহাতে ধরে অন্য হাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হাইপার্সোনিক ব্যালিস্টিক মিসাইলের বাটন চেপে দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি করার আগে চীন বলা নেই কওয়া নেই, হটাৎ সবার সামরিক স্যাটেলাইটগুলি উড়িয়ে দেবে স্পেসে। এদিকে চীন আর রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আমেরিকা আর তাঁর মিত্ররা টের পাবে এক মিনিটের আগেই। তখন আমেরিকার ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনগুলি একেকটি মিসাইলের মাথায় দশটি ওয়ারহেড নিয়ে সারা পৃথিবীতে আগুন জ্বালিয়ে দেবে প্রায় একই সঙ্গে। রেডিও একটিভ ধোঁয়ায় পৃথিবী অন্তঃত ছয় মাস অন্ধকারে ঢেকে থাকবে।
আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (স) কেয়ামতের আগে সারা পৃথিবীব্যাপী একটি ধোঁয়া বা “দোখান” এর কথা বলে গিয়েছেন। আমরা কি সেই প্রফেসির দিকে অগ্রসর হচ্ছি নিজেদের অজান্তে?