যুদ্ধ চাই না; চাই না আর কোন মহাযুদ্ধ
শেলী জামান খান
ঘুম থেকে উঠেই যুদ্ধ দেখি…
যুদ্ধ দেখি ধূমায়িত চায়ের কাপে,
প্রতিদিন টেলিভিশনের রঙ্গিন পর্দায়,
আল জাজিরা, সিএনএন কিংবা বিবিসির খবরে।
ইদানীং আমার নিউ ইয়র্কের সকালগুলো এভাবেই শুরু হয়।
যদিও মাঝেমধ্যেই খবরগুলো দ্রুত বদলে যায়।
নতুন কোন আবিস্কারের কাহিনী,
কিংবা কোন ধনকুবেরের চমকপ্রদ ডিভোর্স কেলেঙ্কারীতে
সেখানে জায়গা করে নেয় আরও টাটকা নতুন কিছু খবর।
এই মূহুর্তে খবরের সিংহভাগ দখল করে আছে যুদ্ধবাজ রাশিয়া।
দেশে দেশে প্লাকার্ড, ব্যানার হাতে নিরিহ জনগন।
পোস্টারে হিটলারি গোঁফে শোভিত পুতিনের মুখ।
তারও পেছনে পুড়ে যাওয়া, ধূমায়িত বাড়িঘর।
পুত্রের ঝলসানো শরীর কোলে নিয়ে ক্রন্দনরত অসহায় কোন পিতা!
জীবাণুযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে আরেকটি যুদ্ধের দামামা।
হয়তো এটা তৃতীয় মহাযুদ্ধের পদচিণ্হ, হয়তো আরেকটি মহাযুদ্ধের অশনিসংকেত!
হৃদয় রুদ্ধ হয়ে আসে।
মানবতা আড়মোড়া ভেঙ্গে পাশ ফিরে শোয়!
প্রতিবাদের ভাষা পড়ে থাকে নির্বাক!
নিরাপত্তা পরিষদ বরাবরের মতই ব্যস্ত শান্তি আলোচনায়!
স্টপ ওয়ার!
স্টপ ইনোভেশন!
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!
এমনি যুদ্ধবিরোধী বার্তা লেখা প্লাকার্ড হাতে উঁচিয়ে,
আমরা দল বেঁধে জড় হই ডাইভারসিটি চত্তরে
সভা শেষে ‘ইত্যাদি রেস্টুরেন্ট’ এ বসে চা খাই, সাথে গরম গরম ডালপুরী।
বন্ধুদের সাথে হাগ বিনিময় করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসি।
শীতার্ত রাতে কম্ফোটারের নীচে সুখনিদ্রা যাই।
কেউ কেই সঙ্গমে শান্তি খুঁজি।
নিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তায় ফের সকাল হয় আমাদের জনপদে।
কেবল কাঁটার মত অষ্টপ্রহর বুকে বিঁধে থাকে
ইনকিউবিটরের ভেতর যুদ্ধাক্রান্ত মূমুর্ষ শিশুদের মুখ!
ক্ষমতাধরদের নজরদারীতে একাই লড়ছে ইউক্রেন।
টুইটারে বিলাপরত প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির অসহায় মুখ।
কলমযুদ্ধে শোচ্চার বুর্জোয়া সাংবাদিকগণ।
আমজনতার সাধ্য কী যুদ্ধ বন্ধ করার!
হে পরাশক্তি!তোমরা বন্ধ কর এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা,
বন্ধ কর আমজনতার জীবন নিয়ে অবহেলা!
এমনিতেই জীবাণুযুদ্ধে পরাস্ত এই পৃথিবী!
আমরা চাই না আর কোন মহাযুদ্ধ। পৃথিবী আজ বড় ক্লান্ত!
যুদ্ধে যুদ্ধে এই ছোট্ট গ্রহটি আজ বড় শ্রান্ত!