শিব্বীর আহমেদ: একটি সমাজের জ্ঞানীরা যখন নিরবে দূরে সরে যায়, খারাপ, সন্ত্রাসী, মুর্খ ও বিশ^ বেহায়ারা যখন জায়গা দখল করে নেয় এবং চেয়ারে বসে ক্রমাগত মিথ্যার বেসাতি করে তখন বুঝে নিতে হবে এই সমাজ, এই সংসার এই সংগঠন এই নেতৃত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। চলে গেছে বিশ^ বেহায়াদের দখলে। নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে হবে যে, আমরা সবাই শেষ সময়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। হিংসা বিদ্বেষ অসত্য আর ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সবাইকে। মিথ্যাচার, বিষোধগার, হিংসা, বিদ্বেষ, অবিবেচনা, অবিবেচক এবং অবিচারের মস্ত জগদ্দল পাথর বসে আছে সমাজের চারিদিকে। ভাল আর খারাপের দ্বন্দে ধীরে ধীরে ভালো হারিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যাচার গীবত কুলষতা, বিশ্বাসহীনতা, সমাজ-সংসার-সংগঠনকে গিলে খাচ্ছে। চারিদিকেই মিথ্যাচার অস্থিরতা অশান্তির দাবানল। এই মিথ্যাচারের দাবানলে বিস্তার ঘটছে প্রতিনিয়ত। মানুষের নীতি-নৈতিকতা ক্রমেই নিম্নগামী। নিম্নগামী সভ্যতা শিক্ষা আর মানুষের মনুষত্ব। বিভক্তি এখন সব এলাকায়; সব সমাজে, সব সংগঠনে এমনকি পরিবারে। স্বার্থের কারনে মিথ্যার সাথে সন্ধী, বিশ্ব বেহায়া আর সন্ত্রাসীদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে পদলেহন চলছে ক্রমাগত। সত্য মিথ্যার এই বিভাজনই অস্থিরতাকে করছে প্রলম্বিত। অবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হচ্ছে মানুষ দেশ-জাতি। এখান থেকেই বেরিয়ে আসছে বিদ্বেষের ফোয়ারা, ধ্বংসের বিভীষণ। বিভীষণদের উৎপাত বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। এই বৃদ্ধি এই বিষক্রিয়া মানুষ জাতি এবং সমাজের শিরা-উপশিরাগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে তুলছে দিনে দিনে। অশান্তির অনল চারিদিকে। বিদ্বেষ বিভেদের বিষবৎ প্রতিক্রিয়া। সমাজে সংগঠনে বাড়ছে দ্বন্দ, হতাশা, হানাহানি, পরিবারে বাড়ছে কলহ- যার তিক্ততায় সমাজে-দেশে বাড়ছে বিসংবাদ-দুর্নীতি-দুর্ভাবনা। এটি কেবল দেশ-জাতি ধ্বংসের অনুষঙ্গই এসব উপলক্ষ নয়, সভ্যতা ধ্বংসের উপাদানও এই লক্ষণগুলো। ইতিহাস এই সত্যগুলোকেই তুলে এনেছে বারবার। এমনি একটি ক্রান্তিকালে এসে উপনীত হয়েছি আমরা সবাই।
ভয়ানক অমানিশা ঘিরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আমাদের চারিদিকে। এ থেকে বুঝি উদ্ধারের পথ নেই। হতাশা, শঙ্কা, আশঙ্কাই যেন নিয়তি। ভাবনার জাগরণ এবং সত্যের প্রতি প্রণতিই পরিবেশকে পরিশীলিত করার পথ প্রশস্ত করতে পারে। কিন্তু এমন আশা দূরাশায় পর্যবসিত হচ্ছে। দুর্ভাবনাকেও তুলে আনছে। নষ্ট সমাজের বসতি বা নষ্ট নেতৃত্বে আক্রান্ত এমনটা ভাবতে কষ্ট হলেও এ রকম ভাবনা থেকে উদ্ধারের উপায় থাকছে না। চারপাশটায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সেই নষ্টের ভিতরে কষ্টের ঢাক-ঢোল বেজে উঠছে বিকট আওয়াজে। তাই হতাশা আর অস্থিরতা বাড়ছে সাধারন মানুষে-সমাজে-সংগঠনে।
সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে একশ্রেণীর নষ্ট মানুষদের কালো থাবার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেহায়া নষ্ট মানুষের দল গ্রাস করে নিতে চাইছে সমাজ-সংগঠন সবকিছু। নষ্ট মানুষদের দাপটে বেহায়াপনায় ভালো মানুষেরা পালাচ্ছে। সমাজে সংগঠনে বেহায়া নষ্ট মানুষদের দাপট চারিদিকে। আমাদের চারিপাশেই একশ্রেণীর বেহায়া নষ্ট মানুষ বসবাস করছে, যারা নিজেরাই অনুধাবন করতে পারছেন না, তাদের কুকর্ম মানুষকে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন করছে। ক্ষমতা আর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল কেড়ে নিতে চাইছে।
মানুষই ভুলে যায় কি নিয়ে গর্ব করবে, আর কাকে নিয়ে লজ্জা! যে মানুষকে অনেক মর্যাদাসম্পন্ন উঁচু দরের মানুষ ভেবে সম্মান করেছি, সেই দেখি নষ্টদের সমীহ করে তোয়াজ করে নিজের পদ পদবী আর সুযোগের লোভে! যেন চরম নষ্ট মানুষের সাথে চলতে পারাই তার কাছে অনেক বড় গর্বের। কি নিয়ে গর্ববোধ, তাও জানে না মানুষ!
লজ্জায় পার হয়ে যায় সময়! ভাবতে থাকি একটি সমাজ কেমন করে দিনে দিনে এমন করে বদলে গেলো! সকালের মানুষ বিকেলে, বিকেলের মানুষ রাতেই চেনা যায় না! এমন একটা সময় ছিলো, এত বিত্তবৈভব মানুষের ছিলো না। এত অস্থিরতা ও ছিলনা। এত বিত্তবৈভবের লোভ ও নয়! নয় যেনতেন ক্ষমতার মোহ! মূল্যবোধ, নীতিবোধ, আদর্শ ও আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রখর। সৎ সাহসী ভদ্র ও আদর্শিক মানুষদের প্রতি ছিল সমাজের শ্রদ্ধা ভালোবাসার।
এখন এ মানুষ নষ্ট বেহায়া! এ নষ্ট বেহায়া মানুষদের তাড়াতে হবে। এ সমাজ নষ্ট সমাজ, এ সমাজ ভাঙতে হবে। কিন্তু হয়ে উঠেনি কিছুই। এখন টাকা দিয়ে পদ কেনা যায়। অবৈধ পথে টাকা কামিয়ে কৃত্রিম লোক দেখানো সম্মান অর্জনের এক অরুচিকর মহোৎসব চারিদিকে! নষ্টদের আর কোন কিছুতেই লজ্জা হয়না। দুআনা ক্ষমতা অঢেল সম্পদে লজ্জা নাই, কিছু কিছু পুরুষ তাদের সমীহ করে গদগদ হচ্ছে। কিছু কিছু নারী মুগ্ধ হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ক্ষমতা ও বিত্তের আকর্ষণে চাটুকার দাসে পরিনত হচ্ছে অনেকেই। আর চাটুকার হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। গর্বিত হয়ে পথ হাটছে! নষ্ট সমাজের নীতিহীন বেহায়া মানুষরা নানা ক্ষমতার পদ আর বিত্তের উপরে বসা। মানুষের বিচার, রুচিবোধ, চিন্তা ও ভাবনার জগৎ মানসিক বিকৃতির শিকার। একসময় মানুষ যাদের এড়িয়ে চলতো। আজ সম্মান মর্যাদা কেনাবেচার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় ভুলে যাচ্ছে সব! উল্টো বেহায়া নষ্টদের সাথে উঠাবসা করেই ধন্য হচ্ছে। একসময় অসৎ চরিত্রহীন-লম্পট-দুর্নীবাজরাই সমাজে নিন্দায় গøানিতে ডুবে থাকতো। এখন সমাজে সৎ আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষেরাই উপহাসের পাত্র। এক সময় মানুষ মানুষের সমাদর সম্মান করেছিলো। কিন্তু একালে মানুষ বিশ^ বেহায়া, নষ্ট, বিত্তবান ও ক্ষমতাবানদেরই কুর্নিশ করে। মানুষকে সম্মান করতে ভুলে গেছে। মানুষ তার অতীত ভুলে গেছে। সমাজে বেহায়া নষ্ট মানুষদের ছায়ায় এখন তদবিরবাজ ও বেশ্যার দালালদের কদর বেড়েছে। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ নির্বাসিত হচ্ছে। এই সমাজ চোখের সামনে বদলাতে বদলাতে শেষ তলানিতে। কিন্তু কারো সেদিকে খেয়াল নেই।
তারপরেও আমি আশাবাদী। মানুষ একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। ন্যায়ের পথে সত্যের পথে মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াবে। বেহায়া নষ্ট মানুষদের বর্জন করবে। তাড়াবে এই সমাজ জগৎ সংসার থেকে। জ্ঞানিরা ফিরে আসবে সমাজে সংগঠনে নেতৃত্বে। মানুষের জয়গান আবারো ধ্বনীত হবে সারাবিশ্ব জুড়ে। মানুষ গাইবে মানুষেরই জয়গান। মানুষ পর মানুষ আপন, মানুষই আল্লাহ ভগবান।