– শিব্বীর আহমেদ
একজন রাজাকার আজীবন রাজাকারই থাকে। কিন্তু ইতিহাস বলে একজন মুক্তিযোদ্ধা চীরকাল মুক্তিযোদ্ধা থাকেনা। সময় অসময় স্বার্থের পদ পদবীর লোভে কারনে অকারনে একজন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারের দাসত্ব করে। স্বাধীনতা পক্ষের নামধারী কতিপয় মোড়লরা তাদের স্বার্থ আর পদ পদবীর লোভে ফোবানাকে একটি ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী গুটিকতেক নষ্ট মানুষের দাসত্ব করে স্বাধীনতা পক্ষের নামধারী কিছু মোড়লরা ফোবানাকে বেশ্যার মত প্রতিদিন বলৎকার করে চলেছে।
আমার দ্বারা ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনে যখন ১টি পয়সার দূর্ণীতি হয়নি তখন বিধি লংঘনের মনগড়া অভিযোগে ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেট আমাকে আজীবনের জন্য ফোবানা থেকে বহিস্কার করে তাদের দেউলিয়াত্ব প্রমান করেছে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির নিরব অবস্থান আবারো প্রমান করেছে এই ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেট ফোবানার ভিতরে কতটা শক্তিশালী।
ইতিহাস বলে ফোবানার ইতিহাস ভাঙ্গনের ইতিহাস, বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের ইতিহাস। ফোবানার ইতিহাস দুর্নীতি আর আদম ব্যবসার ইতিহাস। যার ফলে ফোবানা তার জৌলুস হারাতে বসেছে। ভাগে ভাগে বিভক্ত হচ্ছে ফোবানা।
১৯৯৫ সাল থেকে এই ফোবানার সাথে যুক্ত রয়েছি। কিন্তু ফোবানার এই নোংরা ইতিহাসের কারনে কখনো এর সাথে সম্পৃক্ত হবার আগ্রহ প্রকাশ করিনি। ২০১৬ সালে জিআই রাসেলকে এই ফোবানাকে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসিকে সাহায্য করে ওয়াশিংটনে ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হয়েছিলাম। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। স্বার্থান্বেষী মহল আবারো ওয়াশিংটনকে ফোবানাকে বিভক্ত করার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দায়িত্ব নিয়েছিলাম ৩৫তম ফোবানার সদস্য সচিব হিসাবে।
৩৫তম ফোবানার সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সৎ পথে থেকে মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করবার চেষ্টা করেছি। ফোবানার ইতিহাসের সবচাইতে বড় এবং ব্যয়বহুল একটি সম্মেলন করেছি। কিন্তু ফোবানার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পয়সা না নিয়ে না ধরে। দায়িত্ব পালন অবস্থায় ফোবানার একটি পয়সার অনৈতিক ব্যবহার হয়নি আমার দ্বারা। ফোবানার সকল অ্যাকাউন্ট কনভেনার জি আই রাসেল এবং ট্রেজারার ড. ফায়জুল ইসলাম একক ভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করেছেন। যেখানে আমার কোন প্রকারের এক্সেস ছিলনা।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি কারো কাছ থেকে কোন অর্থ সংগ্রহ করিনি এবং আমার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগও ছিলনা। সৎ ভাবে দায়িত্ব পালন করেও ফোবানার ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেট আমাকে বিধি লংঘনের মনগড়া অভিযোগ এনে বহিস্কার করে, তাও আবার আজীবনের জন্য। যা রিতিমত হাস্যকর। আর তাদের এই বহিস্কারই প্রমান করে সৎ নেতৃত্বের কাছে ফোবানা বর্তমান নেতৃত্ব কতটা ভীত আর আতংকিত। সত্যের জয় চীরকাল। মিথ্যা দিয়ে সাময়িক ভাবে চলা যায়। কিন্তু মিথ্যা সব সময় মিথ্যা এবং এক সময় ধুলোর সাথে মিশে যাবে।
পবিত্র কোরানের সুরা ১৭ আল ইসরার ৮১ নাম্বার আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষনা করেন। বলুন, “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা অবশ্যই বিলুপ্ত হতে বাধ্য।”
বহিস্কার সম্পর্কে ফোবানার শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, ’কার সাথে তুমি ফোবানা করবে। আর কাকে তুমি বিশ্বাস করবে। আমরা সবাই আলোচনা করে ঠিক করি একটা। কিন্তু আলোচনা শেষে সবাই গিয়ে গোপনে ঐ সিন্ডিকেটকেই ভোট দেয় তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের দাসত্ব করে। তাদের পদ পদবীর এত বেশি লোভ। পদ পেলেই ওরা খুশি। আর ওরা এটা দেবে ওটা দেবে বলে লোভ দেখায়। আর ওরাও ঐ লোভে পড়ে সবকিছু ভুলে যায়। আমি এখন আর আমাদের কাউকে বিশ্বাস করিনা।’
বিগত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতা বিরোধী একটি সিন্ডিকেট ফোবানার মেম্বারশীপ নিয়ন্ত্রন করছে। ফলে পদ কেড়ে নেয়ার হুমকি, সম্মেলন কেড়ে নেয়ার হুমকি, মেম্বারশীপ বাতিল করার হুমকির মধ্য দিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতা বিরোধী এই সিন্ডিকেটের হাতে ফোবানা জিম্মী হয়ে আছে। আর এদেরই দাসত্ব করছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নামধারী কিছু দাস। এই ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেটের হাত থেকে ফোবানাকে বাঁচাতে হলে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর এখনই সময়।
সত্য হলো আলো। আর মিথ্যা হলো অন্ধকার। এভাবেই সত্য-মিথ্যার তুলনা করা হয়। আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার, তেমনি সত্যের বিপরীতে মিথ্যা। অনাদীকাল ধরে এ দু’য়ের দ্ব›দ্ব চলছে। মানব জীবনের সামনে দু’টি পথ উন্মুক্ত। একটি সত্যের পথ, অন্যটি মিথ্যার।
আল্লাহপাক সত্যের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মিথ্যাকে পরিহার করার কথা বলেছেন। সত্যানুসরণে মুক্তি ও সফলতা। মিথ্যানুসরণে ব্যর্থতা ও বিপর্যয় অবধারিত। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করা এবং সত্যের সত্য পথের পথিকদের সঙ্গে থাক। (সূরা তাওবা: ১১৯)।
আর যারা শয়তানের প্ররোচণায় মিথ্যা অবলম্বন করেছে, তারা বিপথগামী হয়েছে। সত্যের জয় ও মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনি একথা ঘোষণা দিন যে, সত্য এসে গেছে বাতিল বিলীন হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই বাতিল বিলীন হওয়ারই কথা। (সূরা ইসরা: ৮১)।
দেশ, সমাজে ও সংগঠনে সততা, সত্যবাদিতা এবং সত্যপথের অনুসরণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। ফলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানারকম অবক্ষয় ও বিপর্যয় বাড়ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সত্যবাদী ও সত্যপথের পথিক হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সা. একটি হাদিসে বলেছেন, তোমরা আমাকে ছয়টি বিষয়ে আমানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হব। এই ছয়টি আমানত হলো, যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে। যখন প্রতিশ্রæতি দেবে, পালন করবে। যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখবে, দিয়ে দিবে। দৃষ্টি অবনমিত রাখবে এবং নিজেদের হস্ত আয়ত্তে রাখবে।
মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করুক। ’ক্রিমিনাল আর ন্যুড ক্লাব’ সিন্ডিকেটের হাত থেকে ফোবানাকে রক্ষা করুক। আমিন।
– শিব্বীর আহমেদ
সদস্য সচিব, ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন ২০২১