• বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
Headline
৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের প্রচারে নিউইয়র্ক সফরে হোস্ট কমিটি শুরু হলো ঢাকা ক্লাব প্রেসিডেন্ট কাপ স্নুকার টুর্নামেন্ট-২০২৫ তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ

“তুমি কি কেবলই ছবি,,,, মীর জেসমিন ওয়াহেদ

Reporter Name / ১০৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

 

 

 

“তুমি কি কেবলই ছবি,,,,

 

মীর জেসমিন ওয়াহেদ

 

 

আজকাল সখি স্মৃতির ভারে আক্রান্ত।  দুপুরের সময় সূর্যের আলোতেও পৌষের ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে সখি। সত্তর বয়সের  জরা শাসনের মাঝে আসীন সখী বেগম।
সখি ভারী চশমা চোখে দিয়ে বারান্দার এক মুঠো রোদের দেয়ালে গা এলিয়ে দিল ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে ফিরে গেল পন্চান্ন বছর আগের স্মৃতির ধুলোতে।
ষাটের দশকে
মফস্বল শহরের দুই বন্ধু পাশাপাশি বাড়িতে থাকলেও মনের বসতবাটি ছিল এক। সখির স্মৃতিরা শব্দ হয়ে মনের ভেতর বাজতে থাকলো শীতের উদাস রুক্ষ দুপুরে,,, মনে পড়ে সকাল হলে দুবন্ধুতে রোদ পিছলানো আলোতে গলা ধরে হেঁটে যেত বিদ্যালয়ে।
দুপুরের উদাস হাওয়া গায়ে মেখে ঘরে ফেরা। আর কৌতুহলের সব উপকরণ নিয়ে চারপাশের সব কিছুতেই দুবন্ধুর ভাল লাগারা প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতো।
বিকেল বেলা সখি দুবেনি করে জবা ফুলের মতো লাল ফিতে বেঁধে  করে ছবির বাসার পানে।
সমস্ত খুশিরা সখিকে আলিঙ্গন করত ছবির কাছে যাবে বলে।
ছবিদের বাড়িটা ছবির মতোই সুন্দর ছিল ।
দুবেনি ঝুলিয়ে ফড়িংয়ের মতো উড়ে যেতো সখি ছবির বাড়ির কাছে।
মাসিমার মাটির চুলার চায়ের গন্ধে চারপাশে একটা মাদকতা ছড়াতো ।
সখি ছবির ঘরের কাছে আসতেই মাসিমার ডাক সখি আসো চা খেয়ে যাও
চায়ের গন্ধে সখি মাসিমার আহ্বানে চা খেতে বসে যেতো।এদিকে মন পড়ে থাকত কখন ছবিকে নিয়ে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবে।
এইভাবেই দুবন্ধুর দিন ভাল ই কাটছিলো। ষাটের দশকে পাকিস্তানের বৈষম্য শোষন শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাঙালিদের স্বাধিকার আন্দোলনের বিস্ফোরণ পুরো দেশ জুড়ে চলছিল তখন। ছবিরা এই মফস্বল শহরটিতে থাকলেও ওদের শিকড় ছিল ভারতে।

ছবি দেখতে খুব সুন্দর ছিল। আর তখনকার সময় ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রায়ই আন্দোলন হতো।
একদিন রাতে ছবির বাবা হরিপদ ছবির মা মমতাকে বললেন দেশের অবস্থা ভাল না। সব ঘুছিয়ে নাও ভারতে তোমার ভাই নরেনের কাছে চলে যাবো। এখন ছবিকে বলো না। ও তো আবার সখিকে ছাড়া চলতে পারে না। এত মিল দুজনের মনে হয় মানিক জোড়।
ছবি ঘুমের ভান করে পড়ে রইল সখিকে ছেড়ে যেতে হবে এ কষ্ট কে বুকে চেপে। সে রাতে মমতা ছবি কারোই ঘুম হল না।
সকালে ছবি হাতমুখ ধুয়ে জলখাবার খেয়ে পড়তে বসল। ছবির পড়ার টেবিল থেকে রাস্তার মোড় দেখা যায়। হঠাত দেখলো সখি আসছে হাতে এক মুঠো স্নিগ্ধ শেফালি ফুল নিয়ে।
ছবির মনটা খুব খারাপ।  আজ রাতে ছবিরা এই ছবির মতো মফস্বল ছেড়ে চলে যাবে ভারতে। ভাবতেই বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো। গলা পাকিয়ে আসতে লাগলো কান্নার আওয়াজ।
বাবার কথা রাখতে গিয়ে ছবি মুখে কৃত্রিমতার হাসি হেসে বলে সখি আজ যাবো না হাটঁতে। একটু পর স্কুলে যাবো তুই তৈরি হয়ে নে। আজ ছবিকে কেমন জানি  আনমনা লাগছে। সখি ভাবলো হয়তো শরীর খারাপ তাই ছবি আজ অন্যমনস্ক।  দু বন্ধু একসাথে স্কুলে গেল  । ফেরার পথে দুবন্ধু আচার কিনে খেতে খেতে আসলো। সখি এক একটা বলছে আর ঝরনার মতো হাসছে।
ছবি উত্তাপহীন আবেগে ভেসে যাচ্ছে সখির অকৃত্রিম ভালবাসায়।
মমতা বিকালের কনে দেখা সুগন্ধি  আলোতে চোখ মুছতে মুছতে ছবির দীঘল কালো চুলের বেনি করে দিলেন।
সখি এসে বিকেলের আলোতে ছবিকে হাত ধরে নিয়ে গেল। ছবি সখির হাত ধরে কাঁদতে লাগল। সখি অবাক চোখে তাকিয়ে বলে একটু শরীর খারাপ হয়েছে সুস্থ হয়ে যাবে ।
সখি ছবিকে বুকে জড়িয়ে ধরে এরপর মাসিমার কাছে নিয়ে বলে মাসিমা ছবির শরীর খারাপ ওকে দিয়ে গেলাম।
সখি বাড়ি ফিরছে সন্ধ্যার আজান হচ্ছে শেফালি গাছটায় পাখিরা ডাকছে সমস্বরে গোধূলির বিদায় বেলায়।
রাতের আঁধার গভীর হতেই হরিপদ তার পরিবার নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য যাত্রা করলেন।
ভোর হতেই  সখি ফুল নিয়ে ছবির বাড়িতে গিয়ে দেখে তালা ঝুলছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে ঘরে সব আছে ছবিরা নাই।
সখি তখন বুজল এজন্য ই ছবি এত কেঁদেছিল কাল।
সকাল টা সখির কাছে সন্ধ্যার মতো লাগছিল ছবি ছাড়া।
সখি শেফালি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে ভাবলো কতোটা কষ্ট নিয়ে ছবি চলে গেছে তাকে না বলে পূর্ব পাকিস্তানের অস্থিরতার এ সময়ে।
আসলেই সখির হৃদয়ে ছবি ছবির মতো রয়ে গেলো ।
আজও সখি ছবির সাথে তোলা ছবিটা দেখে ভাবে।
শহরের এত ভীড় এত আওয়াজ এর মাঝেও সখি নীরবে ভাবে ছবি কিভাবে চলে গিয়েছিল সেদিন রাতের অন্ধকারে বন্ধুত্বের এত সুন্দর বুননকে দৃশ্যত খালি করে দিয়ে।
হঠাত নাতির আসিফের কথায় সখি ইজি চেয়ার থেকে উঠে এসে বলল বুজলি আসিফ সংসারে অল্প কিছু মানুষ থাকে যাদের কাছে গেলে মন ভাল হয়ে যায়। তেমনি একজন মানুষ ছিল ছবি।
যে এখন আমার কাছে শুধুই ছবি।
গোধূলির আকাশ লাল করে অসংখ্য পাখি নীড়ে ফিরছে আর সখী বেগমের স্মৃতি ভুখ পিঁপড়েরা হেঁটে যাচ্ছে পন্চান্ন বছর আগে দুই কিশোরীর আবেগের উষ্ণতায়। যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সে সময়ের দাবীতে ছবি চলে গেল ভারতে আর সখি রয়ে গেল এই স্বাধীন বাংলাদেশে। আজও সখি পরিচয় হীন অতীতে ছবিকে খুঁজে সকালের আলো বিকেলের আলো ছায়ার গোধূলির বিষন্ন মায়াতে যেখানে  ছবির মায়াবী মুখটা খুঁজে বেড়ায় আর মনে মনে বলে
“তুমি কি কেবলই ছবি,,,,


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category