• সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
Headline
তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ মাহবুব সিরাজ তুহিন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুশাসন, শিক্ষার প্রসার ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে : প্রীতি চক্রবর্তী

নিউ ইয়র্কে সফল ব্যবসায়ী ও অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ

অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক / ১৪০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

মাহাম্মদ এ আজাদ
প্রেসিডেন্ট ও সিইও
লিবার্টি রেনোভেশন, ইউএসএ

অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক
নিউ ইয়র্কের একজন সফল ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এ আজাদ একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। কনস্ট্রাকশন ফিল্ডে কাজ করেন। রিয়েল এস্টেটের উপরই আবার শিক্ষকতা করেন। করোনা ভাইরাস মহামারির সময় তার মানবিক ভূমিকার কারণে তিনি আলোচিত হন। নিউ ইয়র্কে করোনায় আক্তান্তদের খাবার ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন, লকডাউনে মানুষের বাসায় বাসায় বাজার পৌঁছে দিয়েছেন। এর জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন। কোভিড-১৯ হিরো হিসেবে তাকে সম্মাননা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। মানব ও সমাজ সেবায় অবদান রাখায় ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড, এনআরবি অ্যাওয়ার্ড, নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ডসহ তিনি এ পর্যন্ত ৩০-৩৫টির মতো সম্মাননা অর্জন করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাকে সম্মাননা ও স্বীকৃতি জানিয়েছে। কর্মজীবনেও একাধিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। চাকরি করা অবস্থায় বুস্টন গ্রুপে বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, সিয়ার্স হোল্ডিং করপোরেশনে বেস্ট অপারেশন ম্যানেজার অ্যাওয়ার্ড, হার্ডসন নিউজে ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
মোহাম্মদ এ আজাদের জন্ম চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সিলাস্থান গ্রামে। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। করেন। বুয়েটে ভর্তি হলেও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেননি। লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে তিনি ২০০১ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিয়াকায় যান। ২০০৯ সালে আমেরিকার বুস্টন কলেজ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাফেলো ইউনিভার্সিটিতে আর্কিটেকচারের উপর পিএইচডি করছেন। বসবাস করছেন নিউ ইয়র্কের কুইন্সে।
আমেরিকায় প্রথম দিকে তার জীবন অনেক কঠিন ছিল। লেখাপড়ার সাথে সাথে পার্টটাইম জব করতেন। সিয়ার্স হোল্ডিং করপোরেশনে অপারেশন ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। এক সময় সেখান থেকে বের হয়ে হার্ডসন নিউজে ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। কঠোর পরিশ্রম, সাহসিকতা ও কাজের দক্ষতা দিয়ে খুব কম সময়ে হার্ডসন নিউজে সফলতার মুখ দেখেন। সেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোকের ম্যানেজমেন্টের কনস্ট্রাকশন, ডেভেলপমেন্ট ও ৩০০ লোকেশনের ইনচার্জ ছিলেন তিনি। তবে ব্যবসায়ের দিকেই তার ঝেঁাঁক ছিল বেশি। হার্ডসন নিউজে থাকাকালীন তিনি কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করেন। দীর্ঘ দিন চাকুরি করার পরে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ‘লিবার্টি রেনোভেশন করপোরেশন’। তিনি এ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এ কোম্পানি শুধু ডেভেলপই করে না, বড় বড় বিল্ডিং, বিল্ডিংয়ের এক্সটেনশন, রিমডেলিং, যে কোনো ধরনের কনস্ট্রাশনের কাজ করে। এ প্রতিষ্ঠান সফলভাবে নিউ ইয়র্কে কাজ করছে দীর্ঘ দিন ধরে। বর্তমানে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ের পাশাপাশি হলিউড রিয়েল এস্টেট স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
আমেরিকায় প্রথম দিকে কেমন ছিল তার জীবন? মোহাম্মদ এ আজাদ বলেন, ‘আমেরিকায় আসলে প্রথম দিকের জীবন সংগ্রামীই হয়। আমি স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছি, সিয়ার্স হোল্ডিং করপোরেশন আমাকে স্পন্সর করেছিল। সেখান থেকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল পেয়েছি আমি। কোম্পানি আমাকের টোটালি সাপোর্ট দিয়েছে। প্রতিটি মানুষ প্রথমে এখানে এসে সাধারণত টাকার পিছনে ছোটে। লেখাপড়া করার স্পৃহা খুব কম মানুষের থাকে। একটা মানুষকে সার্থক হতে হলে, স্টাবলিস্ট হতে হলে, তার অবশ্যই এনাফ নলেজ থাকতে হবে। সেটা যে কোনো কাজেই হোক। এনাফ নলেজ যদি না থাকে, তাহলে কোনো কাজেই কেউ কোনো দিন সফল হতে পারবে না। আমি ব্যক্তিগত জীবন থেকে দেখেছি, কোনো একটা পেশায় একটা মানুষ যদি ঠিকমতো লেগে থাকে এবং সেটার উপর যদি কন্টিনিউ পরিশ্রম করতে থাকে, কন্টিনিউ শ্রম দিতে থাকে, তাহলে সে কাজে সে সফল হবেই। যে যেই ক্ষেত্রে আছে, তাকে সে ক্ষেত্রেই কন্টিনিউ পরিশ্রম করতে হবে। আমি যে বিষয়টা বুঝি, সেটার উপরই আমাকে কন্টিনিউ কাজ করতে হবে। আমি যে জিনিসটা বুঝি না, সেটা নতুন করে বুঝতে যাওয়া, রং আইডিয়া। আমি যে কাজে ভালো, সেই কাজটা আমাকে বেছে নিতে হবে। সেটার পিছনে শ্রম দিতে হবে। সেটার উপর চর্চা করতে হবে। তাহলে জীবনে সফলতা অনিবার্য।’


আমেরিকায় মোহাম্মদ এ আজাদ ডেমোক্র্যাটিক দলের সাপোর্টার। পাশাপাশি তিনি সামাজিক সংগঠন বেইন- এর সাথে জড়িত। তরুণ বয়স থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত । সব সময় আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং তাঁর লিডারশিপকে বিশ্বাস করেন। তিনি আমেরিকায় নিউ ইয়র্ক লায়ন্স ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি। ফোবানার সাথেও যুক্ত আছেন।
দেশের কথা কেমন অনুভব করেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। মাতৃভূমির কথা সব সময় মনে পড়ে। সেই ছোটকালে গ্রামের পুকুর থেকে ফ্রেশ মাছ ধরে খাওয়া আর এখন কিনে খাওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য। ফুটবল খেলতাম দেশে। সেগুলো মনে পড়ে। স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে। প্রাইমারি স্কুলে আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতাম। সেই দিনগুলো মিস করছি। বাবা নেই দুনিয়াতে। বাবার সাথে যে সময়টুকু কাটিয়েছি, সেগুলো ভোলার মতো নায়।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে মোহাম্মদ এ আজাদের অভিমত হলো- ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করেছেন। বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতি দল ছিলো। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আগে ওভারব্র্রিজ ছিল না, এখন এখান থেকে শুনি, বেশ ক’টিই ওভারব্র্রিজ হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো একটা সেতু যে এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে পারবে, ধারণা ছিল না। শেখ হাসিনার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে বিশাল একটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমি তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানাই। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ সরকার যদি এভাবে কন্টিনিউ দেশের উন্নতি করে যায়, তাহলে এক সময় অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করা যাবে যে, বাংলাদেশ একটা উন্নত দেশ। বাংলাদেশ এখন অনেকটা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির মতো হয়ে যাচ্ছে। আমি যদি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে তুলনা করি, তাহলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের জন্য বড় কিছু। আমি নিজে খুব প্রাউড ফিল করি, স্যাটেলাইটটা ভাড়া নেয়ার জন্য কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশ এভাবে যদি এগিয়ে যায়, তাহলে এক দিন বাংলাদেশকেও আমেরিকার সাথে তুলনা করা যাবে।’
দেশবাসীর প্রতি মোহাম্মদ এ আজাদের বক্তব্য হলো- আমরা এখানে যে পরিশ্রম করি, বাংলাদেশের মানুষ যদি এ পরিশ্রম করত, তাহলে দেশের মানুষের আমেরিকায় আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ অধিকাংশ সময় তাদের সময়কে কাজের মাধ্যমে ইউটিলাইজ করে না। তারা অত্যন্ত সৌখিন। বিদেশে এসে আমরা যে শ্রম দেই, পরিশ্রম করি; বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু পরিশ্রমটা ওভাবে করে না। যত টাকাই আমাদের কাছে থাকুক না কেন, যতই কোটিপতি হই না কেন, যতই ধনী আমরা হই না কেন- নিজের কাজগুলো নিজেকেই করতে হয়। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি বিশেষভাবে বলব, আমরা আরেকটু কর্মঠ হই। এখানে যে কাজগুলো করি, সেই কাজগুলো যদি বাংলাদেশে করি, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বর্তমানের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি হবে। ব্যক্তিকে না দেখে, রাজনৈতিক দলকে না দেখে, দেশের উন্নতির জন্য কি করা যায়, সে দিকে যদি ফোকাস দেই, তাহলে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমরা বিদেশে এসে কাজ করা পছন্দ করি, কিন্তু বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় ওই রকম পরিশ্রমটা করি না।’
মোহাম্মদ এ আজাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, জ্যাক মা’দের মতো সফল হওয়া। তিনি দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ব্যবসায়ের পাশাপাশি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে চলেছেন। তিনি যেমন একজন সফল ব্যবসায়ী, তেমনি অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।৩


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category