• বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
Headline
৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের প্রচারে নিউইয়র্ক সফরে হোস্ট কমিটি শুরু হলো ঢাকা ক্লাব প্রেসিডেন্ট কাপ স্নুকার টুর্নামেন্ট-২০২৫ তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ

পদ্মা সেতুর ব্যয় ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি : প্রধানমন্ত্রী

অর্থকণ্ঠ ডেস্ক / ১৩৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

পদ্মা সেতুর ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন ।
শেখ হাসিনা বলেন, ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সহ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; কিন্তু ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া নদী শাসনে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৯১ লাখ, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৫ লাখ, পুনর্বাসনে এক হাজার ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ জুন শনিবার বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হবে, ইনশাআল্লাহ। পদ্মা সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের প্রমত্তা পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরাই জানেন, কী ঝুঁকি নিয়ে আর কত কষ্ট এবং সময় ব্যয় করে রাজধানীতে পৌঁছাতে হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা নদী এবং রূপসা নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। জাপান সরকার দু’টি নদীর উপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদী সমীক্ষা শুরু করে। আর রূপসা নদীর উপর আমার অনুরোধে আগেই নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০১ সালে পদ্মার উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। জাপানের সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।


শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ২২ দিনের মাথায় পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ডভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল এইকম’-কে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরুতে সেতু প্রকল্পে রেল চলাচলের সুবিধা ছিল না। আমি রেল সুবিধা যুক্ত করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের নির্দেশ দেই।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরের বছর জানুয়ারিতে ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়েছিল। পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। সংশোধিত ডিপিপিতে বেশি ভার বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা হয়। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। সেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীরতা ধরা হয়। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ব্যয়ও। ২০১৬ সালে যখন ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়, তখন মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসনসহ সব কাজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৯ টাকা কমে যায়। ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ নতুন করে যুক্ত হয়। মূল সেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়কে যে পরিমাণ অর্থে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল, তা থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। এছাড়া জমি অধিগ্রহণে খরচ বাড়ে, ফেরিঘাট সরাতে ব্যয় হয় এবং নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায় জমি অধিগ্রহণের কারণে। আগে নদীশাসনের কারণে তোলা বালু ফেলার জন্য জমি ইজারা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। শেষমেশ নদীর চরে এই কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তিনি বলেন, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে কে বা কারা ছিল তা আমি বহুবার বলেছি। ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল। কিছু কিছু বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে এই ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরের একটি গ্রুপ ছিল যারা অন্যায্যভাবে চেয়েছিল। প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচনের এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি প্রাক যোগ্য ঠিকাদারকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি প্রাক-যোগ্যতায় অযোগ্য ঠিকাদারকে যোগ্য করতে বলে।
শেখ হাসিনা বলেন, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়। কিন্তু প্রাক-যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ে অযোগ্য দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট দেওয়ায় যোগ্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। বিশ্বব্যাংক এই প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করার লক্ষ্যে তার অনুকূলে পরোক্ষ চাপ দিতে থাকে। এরপরই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। একটা পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান লুইস মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেন।


তিনি বলেন, আমরা দুদককে তদন্ত করার নির্দেশ দেই। দুদক কোনো দুর্নীতি পায় না। পরে কানাডার আদালতেও প্রমাণ হয় পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। মূলত বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান লুইস মোরেনো ওকাম্পোর নেতিবাচক রিপোর্টে বাংলাদেশের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়। ২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই। আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ না নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আপনারা দেখেছেন আমাদের দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী এবং অর্থনীতিবিদরা কীভাবে মনগড়া সমালোচনায় মেতে উঠেছিল। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগতমানে কোনো আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ভূমিহীনসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহায়তা, ভিটা উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কর্মমুখী ও আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য পুনর্বাসিত এলাকাকে ‘পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। বহুমুখী এই সেতুর উপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্র্য নিরসন হবে।
তিনি বলেন, এ সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পাড়ে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। হাজার হাজার মানুষের শ্রমে এই স্বপ্নের সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলী এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আজ সব ষড়যন্ত্র-প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে লাখো শুকরিয়া। আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই- তারা আমার পাশে ছিলেন। তাদের সহযোগিতার জন্যই আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলমান করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত গোটা বিশ্বকেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। খাদ্যশস্যের উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন ভাড়া। ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি অর্থনীতির চাকা সচল রেখে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে। এই সময়ে আমাদের সাশ্র্রয়ী হতে হবে। অপচয় বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, মে মাসে ব্রিটেনে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৮ শতাংশ, ভারতে ৭.৯ শতাংশ এবং তুরস্কে ৫৪.৮ শতাংশ। বাংলাদেশে গত মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭.৪২ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ৬.২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ বছরই মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল উদ্বোধন করা হবে, ইনশাআল্লাহ। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নেওয়া মেগাপ্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজও যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণসহ উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া। জনগণের সহযোগিতায় আমরা অতীতের প্রতিশ্রুতিগুলোর মতো এসব প্রতিশ্রুতিও পূরণ করব, ইনশাআল্লাহ।
বড় খরচ উঠুক তারপর
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণে যে বড় খরচ হয়েছে সেটা উঠলে দৌলতদিয়া-পাটুুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক রাজার এক প্রশ্ন্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ২১ জেলার মানুষ সংযুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬ জেলার মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু (দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া) নির্মাণ হলে।
এটি নির্মাণে ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন সেতু নির্মাণ করে সংযোগ তৈরি করেছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে দ্বিতীয়টার জন্য আয়োজন রয়েছে। তবুও আগে দেখতে হবে, এটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? সেটা বিবেচনা করে করা হবে। এত বড় একটা কাজ শেষ করে, আবার আরেকটা এখনই শুরু করতে পারব না।


তিনি বলেন, এখন জায়গাটা খুব বড় না, বড় সেতু না। কাজেই ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে মনে করব। আগেই বলেছি কোনো প্রয়োজন হলে সেটা থেকে রিটার্ন কি আসবে, সেটাও আমাকে দেখতে হবে। সেটা দেখেই প্রকল্প নেব। আমাদের এটা মাথায় আছে। এখন এত বড় খরচ করেছি, সেটার টাকা আগে উঠুক। তারপরে দ্বিতীয়টা করব।
পদ্মার ওপারে হবে
কৃষিনির্ভর শিল্প

পদ্মা সেতুর ওপারে কৃষিনির্ভর শিল্প গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় ওইসব অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব হবে। ওপারে যেন কৃষিনির্ভর শিল্প হয়, সেদিকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সকালেই আমার সঙ্গে একজনের কথা হলো। ফরিদপুরে তার চামড়া ইন্ডাস্ট্রি আছে, জুতা তৈরি করে। আমি তাকে বললাম ‘এখন কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প করবা। সেই ব্যবস্থা নাও’। আমরা এখন কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি বলেন, খাদ্যপণ্যটাই আমাদের সবচেয়ে দরকারি। খাদ্য উৎপাদন হলে দেশের খাদ্য চাহিদাও মেটানো যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করলে শুধু রপ্তানি নয়, দেশেও কিন্তু বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন তো আল্লাহর রহমতে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আমরা গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন করছি।
তিনি বলেন, এখন তো কাজের লোক পাওয়া যাবে না, তাই ঘরে বসে যেন ‘রেডি টু কুক’ বা রান্নার জন্য প্রস্তুত, খাওয়ার জন্য প্রস্তুত এরকম থাকলে সবার জন্য সুবিধা হয়। বাড়ির গৃহিণীরা বেশি খুশি হবে। কষ্ট করে মাছ কাটতে হবে না, তরকারিও কাটতে হবে না; প্রস্তুত করা খাবার বাসায় এনে শুধু রান্না করে খাবে। আমি বলেছি, এধরনের শিল্পকলার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে।
ওদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে
যাব, দু’একটাকে চুবানি
খাওয়াতে হবে

পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বিরোধিতা করেছেন ও বিভিন্ন নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন তাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাবো পদ্মা সেতুতে। দু’একটাকে চুবানি খাওয়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও বাংলাদেশের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তারা ফেরত নিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নেই। যে টাকা বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে সেটা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। পদ্মা সেতু থেকে টাকা তারা বন্ধ করছে কিন্তু ওই টাকা আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকা আমরা অন্যান্য প্রজেক্টে ব্যবহার করেছি।
বিশ্বব্যাংক কোনো দেশের একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে দেশটি চাইলে অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে, এমনটি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু করা যায়। তা কিন্তু অনেকে জানেন না। জানি না কেন জানেন না। আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ- যারা কাজ করে তারা কেন মাথায় রাখে না। এরা (বিশ্বব্যাংক) দাতা নয়। আমরা তাদের থেকে ভিক্ষা নেই না। ব্যাংকের একটি অংশীদার হিসেবে আমরা লোন নেই এবং সুদসহ সেই লোন পরিশোধ করি। কাজেই আমার নামে, বাংলাদেশের নামে যে টাকা হবে সেই টাকা তাকে (বিশ্বব্যাংক) দিতে হবে, সে বাধ্য। একটা প্রজেক্টের টাকা বন্ধ হয়ে গেলে ওমনি টাকা নিয়ে চলে যাবে সেটা কিন্তু যেতে পারে না। জ্ঞানীগুণীরা বলেন টাকা বন্ধ হয়ে গেছে। কিসের জন্য? আমরা তো লোন নিচ্ছি। যে লোন বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে সেই লোন কোনো না কোনোভাবে তাকে দিতে হবে। এটা না দিয়ে পারে?
তিনি বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই দাতা-দাতা কথাটি বন্ধ করে দিলাম। আমি বলেছি কিসের দাতা? এরা তো উন্নয়ন সহযোগী। আমি লোন নিই। সেই লোন সুদসহ পরিশোধ করি। এটা ঠিক যে সুদের হার কম। কিন্তু সুদসহ তো টাকা আমরা পরিশোধ করছি। আমরা তো ভিক্ষা নিচ্ছি না।
গণমাধ্যমেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কিন্তু কারও থেকে ভিক্ষা নেই না, ঋণ নেই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করি। এটুকু সুবিধা স্বল্প সুদে। আমাদের কেউ করুণা করে না। আমরা কারও করুণা ভিক্ষা নেইনি। এরকম অনেক প্রজেক্ট। আমাকে অফিসার বুঝাচ্ছে- এই ডেট ফেল হলে ওই টাকা ল্যাফস হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো বলেছি- নো। এই টাকা তো ল্যাফস হওয়ার কথা নয়। আমি এই প্রজেক্ট সাপোর্ট করতে পারি না। প্রজেক্ট আমি করবো না- কারণ যে কাজ করার কথা ছিল সে কাজ আমি করবো না। আমি তো করিনি। আমি বাতিল করে দিয়েছি। বাতিল করে পরবর্তী সময়ে অন্যভাবে সেই টাকা দিয়ে কাজ করেছি। একনেক মিটিংয়ে আমি চেয়ার (চেয়ারপারসন) করি। আমাকে ওটা বুঝিয়ে হয় না। তিনি বলেন, একসময় আমরা কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে প্যারিসে যেতাম। আমি বললাম- প্রত্যেকদিন আমরা যাবো কেন? ওরা এসে এখানে টাকা দিয়ে যাবে। আমি শুরু করলাম। আমরা ঢাকায় মিটিং করেছি। এই টেকনিক্যাল জিনিসগুলো জানা দরকার। আমাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক বা বিরোধিতাকারীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হলো নিজের ভাড় ভালো না, গোয়ালার ঘির দোষ দিলে লাভ কী? বিশ্বব্যাংককে আমি কী দোষ দেবো! তারা বন্ধ করলো কাদের প্ররোচনায়। সেটা তো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা। আর যারা বিভিন্ন কথা বলেছেন তাদের কিছু কথা আমি উঠালাম। কথা আরও আছে। সেখানে আমার তো কিছু বলার দরকার নেই। এটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। আর না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি বলেন, বরং আমি ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এজন্যই যে, এ ঘটনা ঘটেছিল বলেই আমি সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ফলে আজ বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের বিষয়ে সবার একটা পারসেপশন ছিল। একটা মানসিকতা ছিল যে- আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই যে পরনির্ভরশীলতা, পুরমুখাপেক্ষিতা আমাদের মধ্যে ছিল। একটা দৈন্য ছিল। বিশ্বব্যাংক যখন টাকাটা তুলে নিয়ে গেল অন্তত আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সেই অচলায়তন ভেঙে আমরা একটা আত্মমর্যাদাশীল- আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। এতেই আমরা খুশি। এর বেশি নয়। আর যারা যারা এগুলো বলেছে, বিরোধিতা করেছে। তারা বুঝতেছে। আমরা ওদের দাওয়াত দিচ্ছি। ওদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাবো পদ্মা সেতুতে। দু’একটাকে চুবানি খাওয়াতে হবে। অর্থকণ্ঠ ডেস্ক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category