• শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
Headline
তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ মাহবুব সিরাজ তুহিন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুশাসন, শিক্ষার প্রসার ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে : প্রীতি চক্রবর্তী

বিখ্যাত লেখক ফেরদৌস হাসানের ফারহিম ভীনার বিশেষ বুক রিভিও

Reporter Name / ১৭৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কিছু বই পড়ে আমার আশ মেটে না। এই যেমন গোর্কির ছেলেবেলা,মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে,মৈত্রেয়ী দেবীর ন হন্যতে,হুগোর হাঞ্চব্যাক,ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেকটেশন, ইত্যাদি ইত্যাদি। বইগুলো বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। গোর্কির আমার ছেলেবেলাটা পড়ার হঠাৎ নেশা চেপেছিল সেদিন। ফেসবুকে কার কাছে যেন আব্দার করেছিলাম। পরশু দেখি হঠাৎ পার্সেলে সেই বই এসে হাজির। সংগে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁরও একখানা বই। নাম পদবী দেখে ঘাবড়ে যাই। তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন চলতি যুগ্ম সচিব। মানে তিনি বইও যেমন পাঠাতে পারেন, পুলিশও পারেন। হা হা হা..
আমার কৌতুহল হয় তাঁর লেখা নিয়ে। অনেক আমলাই চেয়ারের দাপটে বই প্রকাশ করেন। মানে কিছু তেলবাজ প্রকাশক সুযোগসুবিধা হাতানোর জন্য তাদের লেখা অখাদ্য বই হাজির করেন প্রতি বই মেলায়। তবে ফারহিম ভীনার লেখা “লন্ডনের দিন-রাত্রি”র পাতা উল্টাতেই বিপদে পড়ি। আঁটকে যাই। আমি অসুস্হ বলে শুয়ে থাকতে হচ্ছিল। কিন্তু আমি শুয়ে বই পড়ে আনন্দ পাই না। তাই উঠেই পড়তে হলো। ১৮৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘপথ উর্ধশ্বাসে ছুটলাম। আমার অসুখের কথা একবারো মনে হলো না। যাকে বলে মন্ত্রমুগ্ধ!
তিনি ছাত্র অবস্থায় স্বামীর সাথে লন্ডনে যান। দুজনেই লেখাপড়া করেন। তারপর এমফিলের থিসিস জমা দিয়ে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরা। আর ছ’মাস থাকতে পারলেই পিএইচডিটাও হয়ে যেত। তার মানে এই বইটি যেমন তিনি প্রাণ দিয়ে লিখেছেন সেই থিসিসটাও ছিল নিরলস পরিশ্রমের অনবদ্য এক দলিল। তাই থিসিস পরীক্ষা বোর্ডের শিক্ষকরা তাকে আর ছয় মাসে সেই থিসিসের ওপরই পিএইচডি ডিগ্রি দিতে এতমত হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি চাকরি বলে কথা। তিনি জানতেন তাঁকে আর একদিনও ছুটি মন্জুর করা হবে না। তাঁর চাকরি বাঁচানো দরকার।
আমি সেন্ট্রাল লন্ডনে বিখ্যাত শিক্ষক আসিফ নজরুল, রানা,নাঈম সহ বেশ কজন ছাত্রের জীবন সংগ্রাম দেখেছি। নাঈমের বাবা ছিলেন পূর্ণ সচিব। কিন্তু ছেলের লেখাপড়া চালানোর খরচ দিতে পারতেন না বলে তার মা ট্রাভেল এজিন্সির কাজ করতেন। আমি তাঁর কাছ থেকে টিকিট নিতাম। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বলতেন আমি যেন নাঈমের সাথে দেখা করি। ওর ভালোমন্দের খবর রাখি। আমি খবর নিতে গিয়ে দেখি সে দুপুরে শুধু একটা আপেল খেয়ে থাকে। আমি তাকে টানাটানি করেও খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারি নি। সে বলে ভাই শুধু আপেল খেয়ে থাকার অভ্যেস হয়ে গেছে আপনি সেটা নষ্ট কইরেন না!
তাহলেই বুঝেন কী কষ্ট করে তারা সেখানে খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করে। টিকে থাকে। এই বইয়ের লেখিকা ভীনা বিখ্যাত সেই দোকান হ্যারোর্ডস গেছেন ঘুরে দেখতে। তাঁদের সম্বল ত্রিশ পাউন্ড।স্বামীকে টাই কিনে দেবে সে। কিন্তু যেটা পছন্দ সেটার দাম ২৫০ পাউন্ড। তার স্বামী রিজু কিনে দেবে এলিজাবেথ আর্ডেনের লিপিস্টিক। দাম ৫৫ পাউন্ড। ভীনা আর রিজু পালায়। তাই পুরানো ম্যাপের দোকানে গিয়ে সুখের পৃথিবী খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। শেকসপিয়ারের বাড়ি ঘুরতে গিয়ে এ্যাভন নদীতে নৌকা চড়া হয় না দুটো পাউন্ডের জন্য৷ ছেলেবেলায় দূর থেকে দেখা রিন্তিদের গোলাপি বাড়িটার মতো কত কিছু তার অদেখা থেকে যায়। তবে দুজন সুন্দর মানুষের ট্রাভেলটা বারবার মন ছুঁয়ে যায়। ভীনার গল্পে খুব হাসিও পেয়েছে। সে যখন দুই সিলেটি লন্ডনীকন্যাকে পড়ায়…
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে?
দাড়িওয়ালা ব্যাটা।
জয়নুল আবেদিন কে?
আমাদের মামা।
হা হা হা। আবার কোথাও কোথাও চোখও মুছেছি। যখন ছোট্ট জেইমি লন্ডনের সবাইকে কাঁদিয়ে মারা যায় ক্যান্সারে। মেয়েটি তার বাবার কোলে ঢলে পড়ার আগে বলে, দেখো বাবা আমি প্রজাপতি হয়ে আবার ফিরে আসবো…
আর সেই ছোট্ট জেইমি টিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে এই বইটির লেখিকা ফরহিম ভীনাকে মনে হয় আর একটি ম্যাসেজ দিয়ে গেছে,
এভরি সিঙ্গেল ডে ইউ বাই ইজ প্রাইসলেস…
প্রতিটি দিন তুমি যা পাচ্ছ তা অমূল্য। প্রতিটি দিন নিয়ে আসে নতুন আনন্দের বার্তা। তাই হাল ছেড়ো না,ডোন্ট গিভ আপ!
ভীনাও তাই হাল ছাড়েনি৷ লড়ে গেছে। ছোট্ট জেইমি তার বাবার জন্য প্রজাপতি হয়ে ফিরেছে কিনা জানি না। তবে লেখিকা ঘরে ফিরেছেন । বাংলাদেশে। ব্রেন ড্রেন হয়ে যে থেকে যান নি সেই জন্য ধন্যবাদ। আর ধন্যবাদ সারা বছরে শুধুমাত্র এমন একটি বই পড়লেও যথেষ্ট বলে। খুব ভালো লিখেছেন আপনি। আমি অভিভূত।
বইটি প্রকাশ করেছে – দিব্য প্রকাশ। প্রচ্ছদ- মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য- ৩০০/-


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category