• শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
Headline
তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ মাহবুব সিরাজ তুহিন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুশাসন, শিক্ষার প্রসার ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে : প্রীতি চক্রবর্তী

সে হারালো কোথায়  – শামা এ খুদা

Reporter Name / ১১৪ Time View
Update : সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২

 

সে হারালো কোথায়  – শামা এ খুদা
মনে হয় এই-তো সেদিনের কথা, ঐ গ্রীল ঘেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকত শ্যামলী দু’টো লম্বা বিনুণী ঝুলিয়ে। নির্ধারিত সময়ে কিসের অপেক্ষায় যেন ছুটে যেত বারান্দায় এক পলকের জন্য কিছু দেখতে। কিসের জন্য যেন অপেক্ষা ছিল ওর।
প্রতিদিন বিকেলে পাঁচটা হতে শোয়া পাঁচটা, একটি গাড়ি ধীরে ধীরে বারান্দা ক্রস করে যেত। তারপর গাছের ছায়াতে দাঁড়াত গাড়িটি। কখনও নামত ঐ সুদর্শন লোকটি কখনও বা শুধু লুকিং গ্লাসের মধ্যে দিয়েই দেখত স্বপ্নের মেয়েটিকে। যাকে শুধু স্বপ্নের মত দেখা যায় কখনও ধরা যায় না। যায় নি।
সুদর্শন লোকটির নাম রাহিক। শ্যামলী ইন্টার মিডিয়েট পড়া একটি মেয়ে। নিজের মত পড়ছে- কখনও গানের ক্লাসে যাচ্ছে,
কখনও বা বন্ধুদের সাথে ঘুরছে। জীবনটা সাদামাটা হলেও আনন্দে। এর মধ্যেও গুরুগম্ভীর বাবা আর স্নেহময়ী মা পরিবারে। আর সে একমাত্র সন্তান শ্যামলী।
রাহিক শ্যামলীকে দেখে এক বৈশাখী মেলাতে। শ্যামলীও রাহিক কে দেখেছে ঐ মেলাতে। আর ঐ দেখার পর রাহিক পাগলের মত তাকে পছন্দ করেছে। শ্যামলী হঠাৎ একদিন বৈশাখী মেলার পিঠার স্টলে দাড়িয়ে ছিল ঐ লম্বা ছেলেটি শ্যামলীরে পছন্দ করে। তারপর হতেই না-বলা প্রেম পথে যাত্রা।
দিনের-পর-দিন মাসের পর মাস রাহিক নীরবে শ্যামলীর সামনে রাস্তার ওপারে দাড়ান। কৃষ্ণচূড়া গাছটার ছায়াতে এসে দাড়া শুধু এক পলক শ্যামলীকে দেখতে। বাড়ি
শ্যামলী জানে না- ভালবাসা কি ? শ্যামলী জানে না- ভাল লাগা কি ? তবুও কিসের তাগিদে যেন ছুটে যেত বারান্দায়। জানে না কেন যেত ? আজ চল্লিশ বছর পর সে বুঝল কেন যেত। ষাট বছরে পা দিয়ে শ্যামলী মনের গহীনে ভাবছে জীবনে আরেকবার দেখবে রাহিককে। কেন দেখবে তাও জানে না।
না-বলা প্রেম সে-কি তা সিনেমাতে দেখা যায়, গল্পে গড়া যায় কিন্তু বাস্তব জীবনে যে হয় তা রাহিক এর জীবনে ঘটে গেল।
রাহিক শ্যামলীকে কখনও প্রপোজ করে নাই। জীবনে একবার ফোন করেছে মাত্র। ব্যাস পাঁচ বছরের ভাল লাগার এই প্রমাণ। এবাবে প্রতিদিন কেটেগেছে  নীরব দিনগুলো।
শ্যামলী সব জেনেও চুপ ছিল। নিজের থেকে তো কিছু করা যায়। না। শ্যামলী এক অদ্ভূত নীতিবাদী শক্ত মেয়ে ছিল। ও ভাবতো প্রেম
খারাপ। তাই কখনই রাহিকের কথা গ্রাহ্য করে নাই। এছাড়া শ্যামলীর বাবা রাহিকের নাম সহ্য করতে পারতেন না। কারণ সে বিদেশে পাশ করা নয় বা জজ ব্যারিস্টারও নয়। শ্যামলী বাবার দিকে তাকিয়ে সাহস করেনি কিছু বলতে। নীরবে রাহিককে নিয়ে কল্পনার জাল বুনেছে। এভাবে কেটে গেল পাঁচ বছর।
যেদিন শ্যামলী অনার্স পাশ করল রাহিক প্রথম ও শেষ ফোন করল শ্যামলীকে এবং বিবাহ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু শ্যামলী অনঢ়। সে বলে উঠল- “এটা আমাদের বাবা-মার ব্যাপার।”
রাহিক বাক্য ব্যয় না করে ফোন রেখে দেয়। একটু বোধহয় জেদী ধরণের ছিল রাহিক। এছাড়া শ্যামলী রাহিকের গেটের কাছে রেখে যাওয়া এক গোছা ফুল, ফেলে দিল। এতে রাহিক জীবনের মত মোড় ঘুরিয়ে নেয়। আর কোন সম্পর্ক রাখে নি।
ইতিমধ্যে শ্যামলীর জীবনে আসে কিশোর প্রেম। প্রাণবন্ত উচ্ছল আবেগময় এক যুবক যে ঐ কঠোর শ্যামলীকে জয় করতে বিন্দুমাত্র বেগ পায় নাই। বরফ গলে যেমন শ্যামলীও গলে গেল আরিফের ডাকে।
মনে যে আসেনি রাহিকের কথা তা নয়। কিছু ভেবেছে, রাহিক ওকে ভুলে গেছে। আল্লাহ্ কপালে রাখেন নাই। শ্যামলী যেন হারিয়ে গেল তার নীতির কাছে। পরাজিত হলো তার জীবনধারার কাছে।
বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। এমন এক ঘোর ঝড়ের বিকেলে রাহিক আবার ফিরে আসল ঐ গ্রীলের বারান্দায় পাশে। শ্যামলীর বুকটা হীম হয় গেল । গলাটা যেন চেপে বন্ধ হয়ে আসল।
“কেন ? কেন ? – ও আসল। সে তো চলে গিয়েছিল। তাহলে কি আজও পছন্দ করে ?” শ্যামলী ভেবে পায় না কি হবে।
সত্যিই রাহিক এতদিনে প্রস্তাব দিল। শ্যামলীর বাবা আরিফকে পছন্দ না, শ্যামলীর সাথে বিয়ে না দেবার অভিপ্রায়ে রাজা হয়ে গেলেন এই প্রস্তাবে। তবে ফেরেস্তার মত যুবক রাহিক। সে ভাবল একবার কথা বলে জানবে শ্যামলীর কি মত।
শ্যামলীকে বলব, পরে দেখা করে কথা বলতে হবে। শ্যামলীকে শেষ পর্যন্ত রাহিক এক মামার বাড়িতে ডাকল। সেখানে প্রথমবার দশ ফুটের কামরায় দু’জন দু’জনকে দেখল। কিন্তু শ্যামলী চোখ তুলে দেখে নাই । ভয়ে লজ্জায় কষ্টে আজও রাস্তায় দেখলে চিনতে পারত না রাহিকের চেহার কেমন। রাহিক ক’টা ঠাণ্ডা প্রশ্ন করল। সত্যিই শ্যামলী অন্য কোথাও বিয়ে করছে কিনা ইত্যাদি ।
শ্যামলী বলল- “সে আরিফকে ভালবাসে।” কিন্তু বুকে বড় কষ্ট। হাজার মণ পাথর চাপা দিলে যা কষ্ট হয়। কেন তা জানে না সে।
এরপর একবার শ্যামলী শুনেছিল ওর বিয়ের দিনে রাহিক এসেছিল কিন্তু দাঁড়ায় নি। বলে গিয়েছিল তার দুই মাস পর নিজে বিয়ে করবে খুব ভাল একটি মেয়েকে।
রাহিক মনে হয় অনেক সুখি। তাই জীবনে পঁয়ত্রিশ বছর পরেও কখনও ভুলেও মনে করেনি শ্যামলীকে।
আর শ্যামলী ? হঠাৎ হঠাৎ সেই বুকের ভেতর মোচড় দেওয়া বেদনাটাকে অনুভব করত। কেন জানে না আরিফের সাথে ওর ভালবাসার বিয়ে। আরিফ খুব ভাল মানুষ। দু’জন দু’জনকে অনেক ভালবাসে।
আরিফ যখন তার আরেকটা ভালবাসাকে অনেক সময় দেয় তখন বড় একা হয়ে যায় শ্যামলী। আরিফ পেশায় ডাক্তার। আরিফের দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রিয় “কাজ”, সেই ওর আরেক প্রেম। তাই নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে সে।
শ্যামলী একা থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। ওর দু’টি মেয়ে। তাদের নিয়েই কেটে যায় দিন।
কিন্তু বড় একা ও। তাই ঘুরে ফিরে ঐ অবচেতন মনে ঘূর্ণিঝড়ের মত পঁয়ত্রিশ বছরের হারানো মানুষটার কথা মনে হয় ওর মাঝে মধ্যে। এমনি এক বাদলা দিনে আকাশ যখন কালচে হঠাৎ শ্যামলী এক আত্মীয়কে ফোন করল। লজ্জার মাথা খেয়ে জিজ্ঞেস করল “মামী তুমি কি জানো রাহিক কেমন আছে ? ওরা কোথায় ?”
মামী চুপ করে থেকে বলল- “কেন তুমি জানো না ? ওতো হার্ট অ্যাটাক করে গত বছর মারা গেছে।”
শ্যামলীর কিছু মনে নেই। ফোনটা ছুড়ে ফেলে প্রথমবারের মত বৃষ্টিঝরা আকাশের সাথে তাল মিলিয়ে অঝোরে কাঁদল। একবার একবার জীবনে দেখার স্বাদ ছিল। আর একবার যদি জানাতে পারতাম আমারও তাকে প্রচণ্ড ভাল লাগত।
কিন্তু কপালে নেই। জীবনে এ কথা বলতে পারব না তাকে। কে পৌঁছাবে এ বার্তা ? পরে শুনেছি ওনার জীবনটা পরিপূর্ণ ছিল। প্রচন্ড ভাল বউ পেয়েছিলেন। আল্লাহ পরপারে যেন তাকে তার বউ-এর সাথে মিলিয়ে দেয়। তত সুখ দেন যত সুখ তার প্রাপ্য।
আর আমি ? আমার কর্মফলের জন্যে যা আমার প্রাপ্য তাই পাব। আমার একাকিত্ব, আমার সঙ্গী হয়ে রয়ে যাবে বুকে আল্লাহর বাণী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category