ডা: এস এ মালেক
দেখে শুনে মনে হয় বিরোধী দল নির্বাচনে জিতলেও বা অন্য কোনো কায়দায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও দেশ চালানোর মতো প্রস্তুতি তাদের নেই। আমরা যদি বিরোধী দলের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যেটা বলা হচ্ছে ২০টি দল নিয়ে নাকি জোট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, ইতিপূর্বেই অনেক দল এই ২০ দলের জোট থেকে চলে গেছে। তাছাড়া এই ২০ দলে যে রাজনৈতিক চিন্তা-ধারা, ক্রিয়া-কর্ম বিবেচনায় নিলে একটা দেশ সরকার বা অর্থনীতিকে সচল রাখা যায় এরূপ লোকজনের বড় অভাব। হ্যাঁ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আছেন যেমন ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না বা এস এম আব্দুর রব, কর্নেল অলি এরকম কিছু লোক যে নাই তা নয়। কিন্তু আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি ড. কামাল শুধু গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করেন। এদেশের সাধারণ মানুষের সাথে তাঁর কখনোই সংযোগ ছিল না, এবং সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টাও করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর যে সংগঠন গণফোরাম মিটিংয়ে কোথাও কোনো দিন পাঁচ হাজার লোক হয়েছে এরূপ দেখা বা শোনা যায়নি। আর সেই গণফোরামও ভেঙে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়েছে। কর্নেল অলিকে একজন ভালো ব্যক্তি হিসেবে অনেকেই জানে। একসময় বিএনপিতে ছিলেন সেখান থেকে মতবিরোধ হয়ে চলে গেছেন। বিএনপি’র পাশাপাশি থাকতে চান কিন্তু বিএনপি’র সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবেন এরকম সম্ভাবনা খুবই কম। আব্দুর রব তো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। একবার আওয়ামী লীগ থেকে মন্ত্রী হয়েছেন এখন যে কোনোভাবে আরেকবার মন্ত্রী হতে পারেন কিনা এটাই তার লক্ষ্য। তা না হলে রবের মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি বঙ্গবন্ধুর হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন তিনি কি করে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরোধীদলের নেতা হলেন এবং কি কারণে হলেন এটা সহজেই বোধগম্য। এখন আবার বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ছেড়ে দিয়ে কামাল হোসেনের সুরে সুর মিলিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলছেন এবং ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করছেন। সুতরাং তার সম্বন্ধেও মানুষের ধারণা আছে। আর একজন আছেন মাহমুদুর রহমান মান্না তিনি ছিলেন একজন ভদ্রলোক, ভালো লেখাপড়া জানেন বলেও মনে হয়। যে আওয়ামী লীগকে সবসময় গালিগালাজ করছেন একসময় তিনিও সেই দলের নেতা ছিলেন। তিনি এত এগ্রেসিভ কথাবার্তা বলেন মনে হয় যে, এখনও তিনি ছাত্র রাজনীতি ছাড়েননি। জাতীয় রাজনীতিতে যে ধৈর্য সহনশীলতা তার মধ্যে একটুও পরিলক্ষিত হয় না। যে ভাষায় তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেন তা রাজনৈতিক ভাষা বলা যায় না।
তার উপর আবার আরেক নতুন ভিপি নুরের আমদানি হয়েছে। তিনি মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েই জাতীয় নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবেন, কিন্তু রাজনীতি এতটা সহজ না। আপনি আন্দোলন করতে থাকেন তবে দায়িত্বহীন কথা বলবেন না। আপনি ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন যা খুশি তাই বলেন এবং এমন ভাষায় কথা বলেন মনে হয় আপনার যুদ্ধ পুলিশের বিরুদ্ধে, আপনার যুদ্ধ আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। আপনার রাজনৈতিক লক্ষ্যটা কি এখনো ভালোভাবে জানা যায়নি।
আরেকজন আছেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বাবার রাজনীতি পরিবর্জন করে ড. কামালের অনুসারী হয়েছিলেন; কিন্তু সেখানেও টিকে থাকতে পারলেন না। এখন ভিপি নুরের তালবেলেম হয়েছেন। উচ্চশিক্ষিত এই ব্যক্তি দেশের ভিতরের চাইতে দেশের বাইরে নাকি তার প্রভাব বেশি। র্যাবের স্যাংশান আনতে তিনি নাকি বিরোধী দলের পক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
আমার বন্ধু জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন ভালো লোক। দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন কিন্তু শেষ বয়সে মাথাটা একটু বিগড়ে গেছে। কখন কি বলেন তিনি নিজেও জানেন না। বিরোধী দলের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। বলি বন্ধু যথেষ্ট হয়েছে, রাজনীতি ছেড়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র্র বর্ধনে মন দিন। যারা আছেন প্রকাশ্যে না থাকলেও যেমন জামাত আছেন, স্বাধীনতাবিরোধী দল আছেন, আমি ইসলামি দল হিসেবে বিবেচনা করবো না, কারণ ইসলামিক ব্যক্তি অনেক আওয়ামী লীগের মধ্যেও আছে যারা রাজনীতি করেন। সুতরাং আমি ইসলামিক বিরোধী বলবো না। যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পরিবর্জন করে ক্ষমতায় যেতে চায় এবং যারা বাংলাদেশকে মুসলিম বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, পাকিস্তানের ধারায় নিয়ে যেতে চান এইসব লোকজন এখনো সক্রিয় আছেন। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। ভেবে দেখুন তো জামাত কিভাবে বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করতে নামে। জামাত তো তার আদর্শের কোনো পরিবর্তনই করেনি। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসই করে না। সশস্ত্র সংগ্রামকে বিশ্বাস করে ইসলামিক স্টেট কায়েম করতে চায়। যা এখন গোটা বিশ্ব মেনে নিতে রাজি নয় এবং কোথাও এটা জয়যুক্ত হয়নি, জয়যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
সকল মুসলমান ইসলামিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে চায় কোরআন হাদিস ও রাসূল -ভিত্তিক, অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভিত্তিক রাজনৈতিক ইসলাম আমরা গ্রহণ করি না যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। বঙ্গবন্ধু যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন সেই ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়। বিশ্বে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই ধর্মনিরপেক্ষতার নতুন দর্শন দিয়েছেন। যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং যে লোকগুলির নাম বললাম তারা অতীতে কোনো অভিজ্ঞতা যেমন ড. কামাল হোসেনও রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা নাই তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য যেসব কলাকৌশল প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন সেসব ড. কামাল হোসেনের আছে বলে মনে হয় না। তিনি একজন শিক্ষিত লোক, মর্যাদাসম্পন্ন লোক,তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দেশ পরিচালনার জন্য তাঁকে আমরা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে মনে করি না। তিনি ছোট্ট একটা দল পরিচালনা করতে পারেননি আর দেশ পরিচালনা করবেন কিভাবে! সুতরাং আমরা এ কথা বলছি না যে, আওয়ামী লীগ চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে, শেখ হাসিনা তো আর হাজার বছর বাঁচবেন না; পরিবর্তন হবেই কিন্তু দেশের কথা যদি আমরা চিন্তা করি বিরোধী দল যদি সুষ্ঠু শক্তিশালী হতো, অর্গানাইজড হতো, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক হতো, দেশের সমস্যা সংকটে সচেতন হতো এবং তাদের অভিজ্ঞতা থাকতো, দেশ স্বাধীন করার পিছনে অবদান থাকতো তাহলে তারা যোগ্যতার সাথে দেশ পরিচালনা করতে পারতেন। এর কোনো কিছুুই বিরোধী দলের নেই। তাই মনে হয় এসব চিন্তা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? জনগণও চিন্তা করছেন যদি বিরোধী দল ক্ষমতায় যায় এমন কোনো পরিস্থিতির সৃৃষ্টি হয় বা কলা-কৌশল করে ক্ষমতায় যায় তাহলে দেশের অবস্থাটা গিয়ে দাঁড়াবে কোথায়! যে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা এবং দায়িত্বহীনতা তখন দেখা যাবে দেশ পরিচালনার চাইতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই স্বাভাবিক কারণেই জনগণ মনে করে যে রাষ্ট্র্রনায়ক হিসেবে যে দক্ষতার সাথে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন ইতিমধ্যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সুনাম অর্জন করেছেন আগামী নির্বাচনে জনগণ হয়তো তাঁকে আবারও নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসাবে। বিরোধীদলও জানে নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা ও তাঁর দলই বিজয়ী হবে। তাই নির্বাচন না হতে দেওয়ার অপকৌশল তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাম, দক্ষিণ ও ডানপন্থী তথাকথিত ইসলামিস্ট দ্বারা গঠিত বিরোধীদলীয় ঐক্য যে অস্থিতিশীল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জগাখিচুড়ি তাদের এই ঐক্য না আছে রাজনৈতিক দর্শন ও দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনা।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিবন্ধের লেখক