ইউএস সিনেটের ম্যাজরিটি লিডার, নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় সিনেটর চাক শুমার আবারো বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রশংসা করেছেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সর্বশেষ তিনি নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব, নিউ আমেরিকান উইমেন ফোরাম ও নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরাম এনওয়াই এই তিনটি সংগঠন আয়োজিত বার্ষিক ডিনার পার্টিতে অংশ নিয়ে সমবেত বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে কমিউনিটির নানা প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ইউএস সুুপ্রিম কোর্টে বাংলাদেশি-আমেরিকান নুসরাত চৌধুরীর মনোনয়ন লাভ, পরিশ্রমী বাংলাদেশি ক্যাব চালক এবং ডেমোক্র্যাট মোর্শেদ আলমের প্রশংসা করেন।
গত ১৮ মার্চ নিউ ইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়টের বল রুমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ও আমেরিকান জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে প্ল্যাক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিনেটর চাক শুমার বলেন, করোনায় স্থবির হয়ে পড়া ইউএস ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আরও বেশি গতিশীল করতে উদ্যোগ নেবে বাইডেন প্রশাসন। কারণ করোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র্রে আসতে ইচ্ছুক ইমিগ্র্যান্টদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন। তিনি বলেন, এজন্য ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার গতি তরান্বিত করা হবে। সেই সাথে সিনেটর তার বক্তব্যে আবারো বাংলাদেশি কমিউনিটির কর্মকা- ও মূলধারায় অংশগ্রহণের ভূূয়শী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএস কংগ্রেসম্যান টম সুয়াজি, স্টেট সিনেটর লিরয় কমরি, অ্যাসেম্বলি মেম্বার ভিভিয়ান কুক, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোরান মান্দানি, অ্যাসেম্বলি মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেফ অরবি, নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস, সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণ, কাউন্সিলওম্যান লিন্ডা লি, কাউন্সিলওম্যান সান্দ্র্রা উং, ডিস্ট্রিক্ট লিডার এন্থনী লিমা, মোফাজ্জল হোসাইন, এমটিএ ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট টনি উটানো, স্টেট কমিউনিটিম্যান ড. জিন ফেলাপস প্রমুখ।
সাপ্তাহিক ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এম শাহীনসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফখরুল আলম, গিয়াস আহমেদ, শাহ নেওয়াজ, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ আলী, মিলন রহমান, এডভোকেট মজিবুর রহমান, মাজেদা উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অনুভা শাহীন। আয়োজক সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আহনাফ আলম, নিউ আমেরিকান উইমেন ফোরামের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শিরিন কামাল।
অনুষ্ঠানে প্রবীণ প্রবাসী নাসির আলী খান পল, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্ট আনোয়ার হোসেন, কাজী আজমসহ তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিনেটর চাক শুমার নিজেকে বাংলাদেশ কমিউনিটির একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, একদিন এই কমিউনিটির মানুষ চিন্তা করবে, ভাববে আমি তাদেরই একজন ছিলাম। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে শক্তিশালী কমিউনিটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের প্রয়োজনে সম্ভব সবকিছুই করব। এ সময় করোনাকালে নাগরিকদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তিনি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ এসব সুযোগ পেয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
কংগ্রেসম্যান টম সুয়াজি বলেন, শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র বিনির্মাণে বাংলাদেশ কমিউনিটি যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। তিনি সুন্দর এই আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
নিউ ইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু বলেন, দিন দিন বাংলাদেশি কমিউনিটির কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিটি কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল জাজ সোমা সাঈদের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই কমিউনিটি নির্বাচিত প্রতিনিধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এটা কেবল শুরু। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কমিউনিটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
মোর্শেদ আলম বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটিকে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে গত ৩০ বছর ধরে কাজ করে চলেছি। এখন আমরা আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে শুরু করেছি।
আহনাফ আলম বলেন, তিনটি সংগঠনের এই আয়োজন দশম বছরে পদার্পণ করেছে। এই আয়োজনে মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির সব গুণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। আমি মনে করি, আমাদের তিনটি সংগঠন দুই কমিউনিটির মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। আমাদের এ অগ্রযাত্রায় সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিরিন কামাল বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির নারীদের মুলধারার রাজনীতিতে এগিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতেও আমরা কাজ করছি। এই আয়োজনে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজ। দেশি-বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি ছিল জমজমাট।