বাংলাদেশকে আর্থিক খাতের নীতি শক্তিশালী করতে ২৫ কোটি ইউএস ডলার অর্থ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য এই অর্থের অনুমোদন করা হয়। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের এই অর্থের মাধ্যমে বাংলাদশের আর্থিক ও আর্থিক খাতের নীতি শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া করোনার ফলে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বাংলাদেশকে ফাস্ট রিকভারি অ্যান্ড রেজিলেন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের আওতায় এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারকে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক। ভবিষ্যতে ধাক্কাগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও নীতিগুলোকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করার জন্যই অর্থায়ন করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক জানায়, এই অর্থ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াবে। এটি দক্ষতা উন্নত করতে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর বিরুদ্ধে টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ২০২০ সাল থেকে জরুরি সহায়তা, টিকাদান এবং অন্যান্য করোনা সংকট পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে। এই ঋণ সবুজায়ন, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। কম কার্বন বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করার জন্য তার নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে।
তিনি বলেন, এই প্রোগ্রাম জাতীয় ট্যারিফ নীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে, যা বাণিজ্য কর আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে। অনাবাসিক ডিজিটাল পরিষেবা সংস্থাগুলোসহ বিদেশি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। যেমন- অনুসন্ধান, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ক্লাউড পরিষেবা সংস্থাগুলোকে আধুনিক করা হবে। ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে এবং অর্থ দেওয়ার কাজকে সহজ করা হবে। জাতীয় ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেমের সম্প্রসারিত কভারেজ সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। এই অর্থায়ন ব্যাংক কাঠামো সংস্কারে ব্যবহার করা হবে। পেমেন্ট এবং সেটেলমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়ন এবং দক্ষতা জোরদার করার জন্য নতুন আইন প্রস্তুত করা হবে, যা ডিজিটাল এবং মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোকেও উৎসাহিত করবে। প্রোগ্রামটি বিভিন্ন পাবলিক সেভিংস সুদের হারের সমন্বয় সাপোর্ট করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই কর্মসূচি সরকারকে নগদ স্থানান্তর কর্মসূচিকে দ্রুত করতে সাহায্য করবে ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবিলায় এবং নগদ-ভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য সরকার-টু-ব্যক্তি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার সম্প্রসারণ করবে। জরুরি সহায়তার জন্য নতুন এবং বিদ্যমান সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়সহ জলবায়ু সম্পর্কিত সঙ্কটগুলিতে আরও দ্রুত সহায়তা দেওয়ার কাজ সহজ করবে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, বাংলাদেশকে স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে উত্তরণে সহায়তা করবে। সংশোধিত জাতীয় বিল্ডিং কোড ভবনগুলিতে শক্তি দক্ষতা উন্নত করবে, যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে পরিকল্পিত বিনিয়োগের ৮ হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট বাতিল করার কাজকে সহায়তা করবে। এই অর্থায়ন বাংলাদেশকে সবুজ এবং টেকসই করতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করবে দাবি করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, আর্থিক এবং আর্থিক খাতের নীতিগুলি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যখন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কভারেজ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে তখন অর্থনৈতিক ধাক্কা এমনিতেই মোকাবেলা করা যায়। এর মাধ্যমে প্রাকৃৃতিক দুর্যোগের সময় দরিদ্র এবং দুর্বলদের রক্ষা করবে। অর্থকণ্ঠ ডেস্ক