বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, ভৌত অববাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং সরকারের সদিচ্ছা এদেশকে অনন্য মর্যাদায় আসীন করেছে। দেশের সকল সূচকে রয়েছে ইতিবাচক উন্নতির রেখা। দেশে সুষ্ঠুভাবে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় উদ্যোক্তা- ব্যবসায়ীদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা অর্থনীতিতে বাড়িয়ে দিয়েছে গতিশীলতা। পরিকল্পিতভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। অবকাঠামোর উন্নয়ন দেশকে দিয়েছে মর্যাদা। বাংলাদেশ এখন ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র। দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন এবং বিডা’র নির্বাহী মো. চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম দেশের বেসরকারি চ্যানেল ‘বাংলাভিশনে’ বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তাদের সংলাপ এখানে উপস্থাপন করা হলো-
প্রশ্ন : জনাব মো. জসিম উদ্দিন আপনি এফবিসিসিআই সভাপতি হিসেবে আপনি অনেক কাজ করছেন। আপনাকে অতীতেও এর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখেছি আমরা । ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ- দু’টি নিয়েই আপনাদের কাজ। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দুবাইয়ে আপনারা তিনটি এগ্রিমেন্ট করে এসেছেন। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ কি ভাবে বাংলাদেশে আনা যায় সেটি নিয়েও আপনারা কাজ করছেন- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইছি।
মো. জসিম উদ্দিন : ২০২০ সালের মে মাস থেকে আমি দায়িত্ব পালন করছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশকে কি ভাবে ব্র্যান্ডিং করা যায়। কি ভাবে বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরা যায়। তার সাথে FBCCI এবং BIDA মিলে যৌথভাবে কাজ করছি। আমরা অনেক দেশ ভিজিট করেছি এবং আমাদের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য। বাংলাদেশের গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছে। যদি গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির কথা বলি- বাংলাদেশে হাইরেটের গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এখন প্রায় ৬৪টির মতো প্লাটিনাম সার্টিফাইড গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বাংলাদেশে আছে, ১৫০টির মতো গোল্ড এবং সব মিলিয়ে ৫০০টির মতো গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। দেশের এত বড়ো সাফল্য কিন্তু আমাদের কাস্টমাররা তা জানে না। তার মানে আমরা আমাদের গার্মেন্টসগুলোকে সেভাবে ফোকাস করতে বা তুলে ধরতে পারিনি। অনেক দেশ তেমন কিছু না করেই নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছে। আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করতে হবে এবং বিশ্বে তা তুলে ধরতে হবে। সম্প্রতি আমাদের সাথে UAE-তে Dubai Chamber এর সাথে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। Dubai Chamber ওখানকার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। আমাদের ট্রেড এবং ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানোর জন্য আমরা ওখানে একটা Business Council প্রতিষ্ঠা করি। ওখানে তাদের এবং আমাদের ২০ জন করে ব্যবসায়ী কাউন্সিল করেছি। এখন আমাদের কাউন্সিল অ্যাক্টিভ হবে।
আমরা এখন নতুন করে একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। আমরা দুবাই সিটিতে FBCCI Center নামে একটি সেন্টার গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। দুবাইয়ের সাথে আমাদের ব্যবসা আছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে, প্রায় ১৭%। আমাদের ১০ লক্ষ লোক সেখানে কাজ করেন। এই ১০ লক্ষ লোক কাজ করতে গিয়ে সেখানে একটি ব্যবসায়ী শ্রেণী তৈরি হয়েছে যারা সেদেশে ব্যবসা করছেন। কিন্তু ইন্ডিয়া, পাকিস্তান যেভাবে ব্যবসা করে আমরা সেভাবে পারছি না; যার কারণে এফবিসিসিআই থেকে একটা সেন্টার গড়ে তোলা হবে এবং সাথে একটা ওয়্যার হাউজ থাকবে। এফবিসিসিআই এবং দুবাই বিজনেস কাউন্সিল আমাদের সাথে পার্টনার হিসেবে থাকবে।
প্রশ্ন : এফবিসিসিআই’র মেম্বাররা কি এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন?
মো. জসিম উদ্দিন : এফবিসিসিআই মেম্বারদের জন্য এই সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকবে কিন্তু বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ ওই সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন। আমরা কারো জন্য নির্দিষ্ট করবো না। ছোট আকারের অনেক কোম্পানি আছে যাদের সেখানে ওয়্যার হাউজ নেওয়াটা অনেক কষ্ট ও ব্যয়বহুল হয়ে যায়- তারা তাদের সেম্পলটা এখানে ডিসপ্লে করতে পারবে। তারা যখন অর্ডার পাবে তখন তাদের সেন্টার থেকে ডেলিভারি দিতে পারবে।
প্রশ্ন : দুবাই চেম্বারের সাথে কী এগ্রিমেন্ট ছিল?
মো. জসিম উদ্দিন : দুবাইয়ের সাথে আমাদের এগ্রিমেন্ট হচ্ছে কো-অপারেশনের। সেটি হচ্ছে দুবাই বাংলাদেশকে তাদের হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং বাংলাদেশি যে সেন্টার পয়েন্ট ফর সাউথ এশিয়ান কান্ট্রি ইন্ডিয়ান মার্কেট, চায়না মার্কেট এবং সাউথ এশিয়ান মার্কেটটা তারা আমাদের এখান থেকে নিতে পারে। তারা ইফিশিয়েন্টলি অনেকগুলো ব্যবসায় ভালো করছেন যার মধ্যে পোর্ট ম্যানেজমেন্ট ও সাপ্লাইয়ে ভালো করছে। বিশ্বের মধ্যে তারা ভালো অবস্থানে আছে। আমরা চাই তারা এখানে আসুক। তাদের ফ্রুট প্রসেসিং সেক্টরের হালাল ফ্রুটের প্রতি আগ্রহ আছে। আমাদের আইটি সেক্টরে তাদের আগ্রহ আছে। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে প্রায় ৭ লক্ষের মতো ফ্রিল্যান্সিং করছে যারা তাদের কাজ সেখানে করতে পারে। তাদের স্কিল পাওয়ারের প্রতি প্রচুর ডিমান্ড আছে। ওইসব জায়গায় তারা ইনভেস্ট করতে পারে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য।
প্রশ্ন : এখানে কি আপনারা বিডা’র সাথে যুক্ত হয়ে এক সঙ্গে কাজ করছেন?
মো. জসিম উদ্দিন : অবশ্যই আমরা বিডা’র সাথে কাজ করছি। কারণ আমরা যাই করি না কেন- বিডা’র কাছে যেতে হবে। তারা তো পারমিশন দিবে।
প্রশ্ন : জনাব সিরাজুল ইসলাম, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ একটি মূল লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ব্র্যান্ডিং করা ইওউঅ-এর মূল লক্ষ্য; সেখানে কিছুটা হলেও আপনারা পিছিয়ে আছেন। আপনার কাছে কি মনে হয় যতটুকু চাহিদা অথবা যে পরিমাণ কাজ করার কথা ছিল- সেভাবে কাজ করতে পেরেছেন?
সিরাজুল ইসলাম : এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম সাহেব যেটি বললেন যে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য আপনার এখানে যে সম্ভাবনাটি আছে, বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাদের কাছে আছে সেটি তাদের কাছে তুলে ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেপ্টেম্বর ২০১৯ এই প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শুরু করি। যোগ দেওয়ার পরেই আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা করি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছিলাম ৫টি দেশে রোড-শো করবো বলে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ফোকাস করার জন্য। বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা আছে সেটি তুলে ধরার জন্য। মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয় এবং সরকারিভাবে অনেক কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যে কারণে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে কিছুটা পিছিয়েছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা ওই সময় যে কাজটি করেছি সেটি হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ২০০৯ সালে সেটি নিয়ে আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে ওয়েব ইনার করেছি। আমরা চায়নার সাথে ওয়েব ইনার করেছি, একাধিক ওয়েব ইনার করেছি জাপানের সাথে, সৌদি আরব, ইউকে, ইউএসএ, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার সাথে।
প্রশ্ন : আমরা দেখছি যে, আপনারা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য চেষ্টা করছেন। জাপান এবং সৌদি আরব অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য।
সিরাজুল ইসলাম : জাপান এবং সৌদি আরবের কথা যদি বলি- আমরা গত আগস্ট মাসে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার টু অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার মি. সালমান ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা সৌদি আরব গিয়েছিলাম। ওই সফরটা আমাদের ফ্রুটফুল ভিজিট হয়েছিল এবং ঐ ভিজিটের সুবাদে সৌদি আরব থেকে ইনভেস্টমেন্টের যে আগ্রহ দেখেছি এটি অনেক বেড়েছে। ইতিমধ্যে তারা ২.৬৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আপনি জানেন যে, সরকারি ক্ষেত্রে জাপান এ দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রেও বড় ডেভেলপমেন্ট পার্টনার- এটি আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রেও নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। জাপান এই ক্ষেত্রে আগ্রহী। সম্প্রতি জাপানের কোম্পানির সাথে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটির এগ্রিমেন্ট হয়েছে। সেখানে আগামী মার্চের মধ্যে বিনিয়োগ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানি রাষ্ট্রদূত ঐখানে উপস্থিত ছিলেন এবং জাপানের ১০০ কোম্পানি সেখানে ইনভেস্ট করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রায় ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার ওখানে ইনভেস্টমেন্ট হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাইতে যে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী হচ্ছে ওখানে জাপান আলাদা করে আরেকটি ইকোনোমিক জোন করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রশ্ন : জনাব মো. জসিমউদ্দিন, সব সময় একটি কথা থাকে যে- বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী কেন আসবে? আর পরিবেশ কি ঐভাবে তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারে?
মো. জসিম উদ্দিন : আপনি জানেন যে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইকোনোমির সাইজ ছিল মাত্র সাড়ে নব্বই বিলিয়ন ইউএস ডলারের। কিন্তু গত ১০ বছরে সেটি হয়েছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। সমস্যা আছে তবে সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের চেষ্টায় সেটি আবার উত্তরণ হচ্ছে, সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আজকে প্রায় ২৫৯১ ডলার আমাদের মাথাপিছু আয়। করোনা মহামারির ভিতরেও প্রায় ১০০-১৫০ ডলার বাড়ছে। সামনে কিন্তু আমাদের অনেকগুলো লক্ষ্য আছে। বর্তমানে আমাদের যা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে এখন ঠিক করা দরকার কোন কোন দেশের সাথে আমাদের বিজনেসটা বাড়ানো যায়। কোন কোন সেক্টরে। আমাদের সবার সাথে কাজ করার সক্ষমতা নেই। আমার মনে হয়, সক্ষমতাকে ফিক্স করে কোন কোন দেশ কি ধরনের ব্যবসা করে তা নির্ধারণ করে কাজ করা। যেমন সৌদি আরব কি ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশে করতে পারে! তারা পেট্রো কেমিক্যাল-বেজড ব্যবসা বাংলাদেশে করতে পারে। তাদেরকে আমরা যদি ওই ধরনের ব্যবসা পরিচালনায় সুযোগ করে দিতে পারি তাহলে প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট আসতে পারে। ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাপান গিয়েছিলেন, তখন আমি এফবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। তখন জাপানিরা চায়না প্লাস ওয়ান খুঁজছিল। ওই সময় বাংলাদেশ একটি বেস্ট চয়েজ ছিল তাদের জন্য। তারা আমাদের কাছে একটা স্পেশাল ইকোনোমিক জোন চেয়েছিল; তখন আমরা দিতে পারি নাই। যার কারণে তারা বাংলাদেশে না এসে মিয়ানমারে গিয়েছে। এখন ১০ বছর পরে এসে সক্ষমতা হয়েছে, এখন আমাদের ১০০টি ইকোনোমিক জোন হচ্ছে। আমরা সেলফ সাফিসিয়েন্ট ইলেকট্রিসিটিতে। আমরা এখন ফরেন ইনভেস্টরদের বলতে পারি- আমার এখন ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, আমার এখন রাস্তাঘাট আছে, আমার মেগা প্রজেক্টগুলো হয়েছে। আমাদের ইলেকট্র্রিসিটি আছেন এখন তোমরা আসো। এখন বিদেশি বিনিয়োগ এলে তারা ২/৩টি জিনিস নিয়ে আসে। তারা টেকনোলজি নিয়ে আসে। স্কিল নিয়ে আসে। এবং আমাদের দেশের লোকদের স্কিল ডেভেলপের সুযোগ থাকে। আমাদের অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আমাদের শিক্ষার সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রশ্ন : জনাব সিরাজুল ইসলাম, ওয়ান স্টপ সার্ভিস আপনারা করছেন এবং বিভিন্ন রকমের এগ্রিমেন্টেও যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আপনারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে লন্ডন এবং ইউএসএ’র সাথে রোড শো-ও করেছেন। ইনভেস্টমেন্ট সামিটও করেছেন। বিনিয়োগ নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন দেশ আপনাদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আপনার কাছে জানতে চাইছি- নিরাপত্তা নিয়ে আপনারা কতটুকু কাজ করছেন?
সিরাজুল ইসলাম : বিডা নিরন্তর কাজ করছে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য। এই বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস তথা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তিন বছরে এটি এখন ম্যাচিউর অবস্থানে চলে এসেছে। ১৯টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫৮টি সার্ভিস অনলাইন লাইভে আছে। অর্থাৎ আপনি এখানে এসে বা অনলাইনে ৫৮টি সার্ভিস পেতে পারেন। এর পুরোপুরি পেমেন্ট অনলাইনে করতে পারেন। এটি একটি বড় বিষয়। আপনি ইনক্লোডিং সিকিউরিটির কথা বলছেন- আমরা সেটি নিয়েও কাজ করছি। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে সিকিউর। এখানে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে। সুতরাং এটি সিকিউর। কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং সংযোজন নিয়ে কাজ করছি।
প্রশ্ন : এখানে কোনো ট্যাক্স- রিবেট দিচ্ছেন বিদেশি যারা আসছেন ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য?
সিরাজুল ইসলাম : আপনি নিশ্চয় লক্ষ করেছেন ২০১৯ সালে কর্পোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ ৩৫% ছিল। আমরা এটার উপর প্রচুর কাজ করেছি। আমরা এনবিআর-কে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, বিদেশি বিনিয়োগ শুধু দেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য। আমরা এখন গ্লোবাল কম্পিটিটেটর। অন্যান্য দেশ বিনিয়োগকারীদের যে পরিমাণ সহযোগিতা করে, যে পরিমাণ ট্যাক্স তাদের উপর আরোপ করে সেটা যদি আমাদের থেকে অনেক বেশি হয় তাহলে এ দেশের উদ্যোক্তারা অন্যদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। সে জন্য আমরা এনবিআরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি কমাতে হবে। ২০২০ সালে এটি ৩২.৫% করা হয়েছে এবং ২০২১ সালে তা ৩০% নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা বলছি- এটি আরো কমাতে হবে।
প্রশ্ন : জনাব মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি আমরা যদি এসএমইদের কোনোভাবে সহায়তা করতে চাই এবং আমাদের বিভিন্ন দূতাবাস আছে তারা যদি ব্যাকওয়ার্ড লিংক সেটআপগুলো যারা এখানে করতে চান এবং বড় কোম্পানিগুলোর সাথে ছোট কোম্পানিগুলো যদি মার্চ করতে চায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে এসে। আপনার কাছে কি মনে হয় এটা কী ভাবে করা সম্ভব?
মো. জসিম উদ্দিন : বাংলাদেশের ব্যাকবোন এসএমই। বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% এসএমই এন্টারপ্রাইজ। আমাদের এসএমই ইন্ডাস্ট্রিগুলো ভালো করছে। কিন্তু তারা আবার বিপদেও আছে। কারণ বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কারণেই তারা ভালো করছে। আমি এফবিসিসিআই’র সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের এমডি এবং সিইওদের নিয়ে মিটিং করেছি। সেখানে আমি তাদের সাথে এসএমই লোনের ব্যাপারে কথা বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ২০% প্যাকেজ দিয়েছেন এখনো সে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়নি। আমাদের ব্যাংকগুলো ছোট ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসা করতে চায় না। তারা তাদের টাকা পাবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকে। আমাদের দেশে অনেক ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি আছে যেমন আমাদের গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, নিটের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি অনেক শক্তিশালী প্রায় ৯০% বাংলাদেশি। আমাদের স্পিনিং মিলগুলো অনেক ভালো অবস্থানে আছে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি এস্টাব্লিশ করাতেই হবে নয়তো বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো ছোটদের কি ভাবে ব্যবহার করবে! আমি মনে করি, লিংকেজ আমাদের এই জায়গায় সিরিয়াসলি কাজ করা দরকার। উপসংহার: BIDA এবং FBCCIও একত্র হয়ে কাজ করলে BEZA এবং SME যারা আছে তাদেরকে নিয়ে কাজ করা যায় এবং ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য তৈরিতে বড় উদ্যোক্তাদের এবং বিদেশি ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশে আসে সেটি আমাদের সামনের সময়কে আরো বেশি ত্বরান্বিত এবং এসএমই ডেভেলপমেন্টে অনেক বেশি সহযোগিতা করবে। আমরা আশা করছি, বিভিন্ন অ্যাম্বেসিও আমাদের ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের বিষয়টি আরো বেশি জানতে পারবে এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য যে সুষ্ঠ পরিবেশের ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকার থেকে বিডা’র মাধ্যমে করা হচ্ছে তা একটি অনেক বড় বিষয়। আমরা আশা করছি সামনের যে বিষয়গুলো আপনি বললেন ট্যাক্স রিবেটের বিষয়। এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা তাদের নিরাপত্তা ইস্যু ডিজিটাল বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটির যে বিষয়গুলো রয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সেগুলোও হয়তো শিগগিরই কেটে যাবে।