• শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

প্রবাসীরা ভালো কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করছেন

Reporter Name / ১৩ Time View
Update : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্টেট ফ্লোরিডার কৃষি অর্থনীতিতে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন তাঁদেরই একজন বাংলাদেশি আমেরিকান আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ। যিনি মাহফুজ নামেই সমধিক পরিচিত। রাঙামাটির বরকলের এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান আব্দুল ওয়াজেদ মাহফুজ ৪০ বছরেরও বেশি সময়ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। বলতে গেলে তিনি ও তাঁর পরিবার প্রায় শতভাগ আমেরিকান হয়ে গেছেন। কিন্তু তারপরও নিজের শিকড়-সত্তার কথা ভুলে যাননি। বরং ফ্লোরিডায় তিনি যেন ‘এক খণ্ড’ বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার। কারণ, প্রায় ৩০০ বিঘা জমি নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফ্লোরিডার দুটি খামারেই বাতাসের দোলায় শিহরণ তুলছে। কচি লাউয়ের ডগা, সীম, ঢেঁড়শ, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া, আলু, টমেটো, বাঁধাকপি, মরিচ, ভুট্টার রকমারি ফসল। তাঁর ২৫ একর জমির পুকুরে প্রচুর দেশীয় মাছের সমাহার।
আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজের পিতা মরহুম আব্দুল হাই এবং মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন সমাজসেবক ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা নিজেদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি উন্নত দেশে যাবার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই অনুপ্রেরণাতেই মাহফুজের বড় ভাই ডা. মাহমুদ পাকিস্তান আমল থেকেই আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেই সূত্র ধরেই আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ ইমিগ্র্যান্ট হয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। তিনিই ফ্লোরিডায় প্রথম বাংলাদেশি যিনি ব্যবসা শুরু করেন। একজন আলোচিত প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি শুধু বাংলাদেশিদের মধ্যেই নন, ফ্লোরিডার অন্যতম ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

বড় পর্যায়ের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হবার পরও জনাব মাহফুজের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা কাজ করছিলো। মনে হচ্ছিলো আরো কিছু করা দরকার। প্রায় ১৫ বছর আগে সেই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যেই লেকসহ ৪২ একর জমি ক্রয় করলেন ফ্লোরিডায়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেলেন লাউ, কুমড়া, টমেটো, সীম, মরিচ, চিচিঙ্গা, বাঁধাকপিসহ নানা জাতের শাক-সবজির বীজ। এমনকি ধনিয়া পাতাও বাদ গেল না। একই সাথে আম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, নারিকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ফল গাছসহ অন্যান্য দু’শতাধিক ফল গাছ লাগিয়েছেন। সে এক দেখার মতো মনোরম দৃশ্য। নিজেদের বন্ধুবান্ধব ছাড়াও অনেকেই দেখার জন্যে যান তাঁর এই সবুজ খামারে।
কৃতী ও সফল কৃষি উদ্যোক্তা মাহফুজ জানান, ওখানে চায়নিজ একটা ফেয়ার হয়— সেখানে কৃষিজাত নানা ফলমূল ও শাক-সবজির সমাহার ঘটে। তিনি স্ত্রী নাজমুন পারভিনের সাথে পরামর্শ করতেই পারভিন তাঁকে উৎসাহ দিলেন। যে স্বপ্ন এতদিন মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন, তা আজ বাস্তবায়নের সিঁড়ি খুঁজে পেলো। শুরু হয়ে গেল ফ্লোরিডায় সহজে বাংলাদেশের ফলমূল ও শাক-সবজির চাষ। মূলত শখ থেকেই উদ্যোগ নেয়া তবে এখন আত্মীয় বন্ধুদের বিলিয়েও আর্থিকভাবে লাভবান তাঁর এই কৃষি প্রকল্প। তাঁর দু’টি প্রকল্পের একটি ৪২ একর এবং আরেকটি ৩৭ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত।

সময়ের উন্নয়ন চিন্তার উদ্যোক্তা জনাব মাহফুজ ব্যবসা-বাণিজ্যের মতোই এই কৃষি খামারে যথেষ্ট মনোযোগ দেন এবং নিজে তত্ত্বাবধান করেন। তার এই ফার্মে ২২ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তাঁর স্ত্রী নাজমুন পারভিন একজন উদ্যোক্তা নারী। তিনি ১৯৯৪ সালে ফ্লোরিডায় প্রথম বাংলা টেলিভিশন চালু করেন তিনি। উদ্যমী এই নারী তাঁকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও খামারের ব্যাপারেও সহায়তা প্রদান করেন। এই দম্পতির দু’সন্তানের মধ্যে মেয়ে তাসলিম মাহফুজ ও ছেলে তানজিম মাহফুজ। দু’জনেই উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। বড় ভাইয়ের মেয়েও ডাক্তার। মেয়ে তাসলিম মাহফুজ একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ওয়াশিংটন নিউজে নিউজ কাস্টার। ছেলে পিতার ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নিজেও সৃজনশীল কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত।
সাফল্যের এই পাদপ্রদীপের মধ্যে দাঁড়িয়েও নিজের বাংলাদেশকে ভুলে যাননি আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ। সময় পেলেই ছুটে আসেন। নিজ এলাকা রাঙামাটির বরকলে পিতামাতার নামে ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছেন বরকল আব্দুল হাই আনোয়ারা বেগম গার্লস হাইস্কুল। এর মাধ্যমে এলাকার পিছিয়ে পড়া মেয়েরা উচ্চশিক্ষার পথ খুঁজে পেয়েছে। এটি সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে পরিচালনা করেন আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ। বর্তমানে একটি পলিটেকনিক কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। তিনি মনে করেন, কেরানী হবার শিক্ষা নয়, প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা- যাতে করে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছেলেদের বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াতে না হয়।


কৃষি ফার্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ বলেন, উৎপাদিত ফল ও সবজি তিনি মসজিদের মুসল্লিদের মাঝেও বিলিয়ে দেন— বিশেষ করে রোজার মাসে এই কাজটি তাঁকে অনেক তৃপ্তি দেয়। তাঁদের গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরকল আব্দুল হাই-আনোয়ারা বেগম গার্লস হাই স্কুলে প্রতি বছরই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী ও দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়। আব্দুল ওয়াহেদ মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী নাজমুন পারভিন মনে করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভালো উদ্যোগ ও কাজের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে তুলেছেন।অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category