• শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৪ অপরাহ্ন

বিশ্ব এখন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় জোর দিয়েছে আমাদেরও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে হবে

Reporter Name / ২০৩ Time View
Update : রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪

বিশ্ব এখন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় জোর দিয়েছে আমাদেরও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে হবে –
মো: আব্দুল হালিম
সিইও, সিএইচ গ্রুপ
জাপান
সব মানুষের মনে স্বপ্ন বিরাজ করে, এবং তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা থাকে। এই স্বপ্ন দেখা ও বাস্তবায়নের লক্ষে যারা ক্রমাগত এগোতে থাকেন তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়নও ঘটে। এমনই একজন স্বপ্নবাজ মানুষের নাম মো: আব্দুল হালিম। তিনি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি। তিনি জাপানের স্বনামখ্যাত সিএইচ গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ড-এর নিবেদিতপ্রাণ সক্রিয় সদস্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশকে যারা কর্ম দ্বারা আলোকিত অবস্থানে নিয়ে চলেছেন তিনি তাদেরই একজন।
একজন আত্মপ্রত্যয়ী নিষ্ঠাবান উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী মো: আব্দুল হালিমের জন্ম কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন জোড় পুস্কুনি গ্রামের এক শিক্ষিত ঐতিহ্যবাহী পরিবারে। তাঁর পিতার নাম হাজী ওয়াজউদ্দিন এবং মাতা জাহানারা বেগম। আব্দুল হালিম ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
আব্দুল হালিম উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে জাপানে যান। সেখানে তিনি অধ্যয়ন শেষে পেশাজীবনের সাফল্যের প্রত্যাশায় থেকে যান। প্রথমে চাকরি করলেও এক পর্যায়ে বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগী আব্দুল হালিম ব্যবসা-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট হন। প্রতিষ্ঠা করেন S S Corporation Inc, Human Resource Bangladesh & Times Business Solution. তিনি একজন Iron & Steel Merchant. এ ছাড়া তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথেও সম্পৃক্ত। তিনি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কনসালটেন্সিও করেন।


সতত পরিশ্রমী ও উদ্যোগী আব্দুল হালিম বিশ্বাস করেন, লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে সততার সাথে পরিশ্রম করলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি নিজে যেমন পরিশ্রমী, তেমনই পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও বেশ উদ্দীপ্ত। এক সময় জাপান ছিল অনেকের স্বপ্নের একটি দেশ। এখন তা আব্দুল হালিমের মতো উদ্যোগী অনেক বাংলাদেশির হাতের মুঠোয়। সেখানকার অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আব্দুল হালিম বাংলাদেশেও বেশ কিছু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি মাঝে মাঝে দেশে আসেন। ব্যবসায়িক কারণে হলেও তিনি বলেন, নাড়ির টানেই দেশে আসা। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে তাঁর আসল ঠিকানা। এখানেই তাঁর শিকড় প্রোথিত। তবে একটি বিষয় তাঁকে বেশ পীড়িত করে যে, বাংলাদেশ অবকাঠামোগতভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সত্য; কিন্তু এ রাষ্ট্রের অনেক মানুষের মানসিক উৎকর্ষের উন্নয়ন ঘটছে না। তিনি ভেবে পান না- এর কারণ কি? তিনি বলেন, এদেশের একটি মানুষ নিজ দেশে নীতি-নৈতিকতা থেকে দূরে থাকছেন; ঠিক সেই মানুষটিই বিদেশে গিয়ে প্রতি পদে পদে আইন ও নীতি-নৈতিকতা মেনে চলছেন। তিনি বলেন, এখানে কোথাও কোনো কাজে গিয়ে এমনকি রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়েও কে কার আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা করে যানজট বাড়িয়ে ফেলি, অফিস-আদালতে অনিয়ম করে কাজ আদায়ের চেষ্টা করি, সেই মানুষটিই বিদেশে গিয়ে আইন অনুযায়ী চলি। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বিদেশি এদেশে এসে নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে। তারা ম্যানেজ করার পদ্ধতি জেনে যায় এবং সে অনুযায়ী অফিস-আদালতে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়।
শিক্ষিত, স্মার্ট এবং দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে বেশ এগিয়ে গেছে। তিনি জানান, এর পেছনে প্রবাসী রেমিটেন্স ও পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বড় সহায়ক হয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, যারা প্রবাস থেকে কষ্ট করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন- দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের সাথে অনেক সময় সম্মানজনক আচরণ করা হয় না। বরং তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। একজন প্রবাসী হিসেবে তিনি এর প্রতিকার আশা করেন। তিনি বলেন, এয়ারপোর্টে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মোটিভেশন দরকার। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক যারা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।
জাপানের বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। বিশ্ব এখন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে জোর দিচ্ছে। আমাদেরও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে হবে যে শিক্ষা উৎপাদন কর্ম সংশ্লিষ্ট সেই শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু জিপিএ ফাইভ-এর ছড়াছড়িতে খুশি বা উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই, কারণ তরুণদের বেকার থাকতে হয়। যদি কেউ প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণ করে- তাকে বেকার থাকতে হয় না। সে তখন জনশক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে।জনাব আব্দুল হালিমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা একজন পরিসংখ্যানবিদ। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি তাঁর স্বামী আব্দুল হালিমের ব্যবসার সাথেও সম্পৃক্ত। এই দম্পতির দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। প্রথম পুত্র সাইফ মো: হালিম University of Washington থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় পুত্র সুজান মো: হালিমও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন এবং আমেরিকাতেই স্থায়ী হয়েছেন। তৃতীয় সন্তান সাফরিন হালিম ও চতুর্থ সন্তান সামরিন হালিম জাপানে স্কুলে পড়ছেন।

জাপানের সিএইচ গ্রুপ-এর সিইও এবং উদ্যমী ব্যবসায়ী মো: আব্দুল হালিম একজন মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। তিনি নিজ গ্রামের অসচ্ছল, দুস্থ ও অসহায় মানুষদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন।
কথা প্রসঙ্গে মো: আব্দুল হালিম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের আত্মদানে পাওয়া বাংলাদেশে আমরা কখনো রাজনৈতিক সংঘাত চাই না। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কিন্তু সবাই একমত। আমরাও তাই চাই এবং এই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে যা প্রয়োজন তাই করা উচিত। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন তিনি। এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে দেবে। আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে কোনো মূল্যে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এটি করতে পারলে অতি দ্রুততার সাথে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সক্ষম হবে এবং এভাবেই উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে। এ জন্যে তিনি দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে পরিবেশ ও আইনের শাসন গুরুত্ব পেলে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা দেশে ফিরে আসতে আগ্রহী হবে। তবে তাদের জন্যে উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদেরকে আইনগত সাপোর্ট দিতে হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category