বাংলাদেশের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের বায়োব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের আওতায় ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বায়োব্যাংকিং, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কেস স্টাডি’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সাইড ইভেন্টে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ইভেন্টের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
বক্তারা বলেন, একটি আন্তর্জাতিক মানের বায়োব্যাংক নির্মাণের পাশাপাশি, গবেষণার ক্ষমতা তৈরিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য স্থানীয় গবেষণাকে বাস্তবে কাজে লাগানোর জন্য গবেষকরা বায়োব্যাংককে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এই উদ্যোগটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একাডেমিক-বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে, যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আওতায় বৈশ্বিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিজ্ঞান নিশ্চিত করার একটি উদাহরণ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, টিউমারের মধ্যকার সেলুলার ও আণবিক ভিন্নতা, বিভিন্ন হোস্ট ইমিউন প্রতিক্রিয়া, খাদ্য, পরিবেশগত প্রভাব, জীবনধারা ও রোগী জনমিতিসহ বিভিন্ন কারণ ক্যান্সারের ওষুধ বা বায়োমার্কারের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। সুতরাং ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রে সকলের জন্য একই পদ্ধতি বা সকলকে একই পাল্লায় বিবেচনা করার ধারণাটি আজ অপ্রচলিত। পৃথকভাবে ক্যান্সার-যত্নের নীতিগুলো প্রয়োগ করে কার্যকর ওষুধ/বায়োমার্কার সমূহ তৈরির কৌশল ডিজাইন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি সবার জানা যে, ড্রাগ/বায়োমার্কার টেস্টিং এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল তালিকাভুক্তিতে জাতিগত ভিন্নতা বিদ্যমান, কারণ বেশির ভাগ অনুমোদিত ক্যান্সারের ওষুধ/বায়োমার্কার বাস্তবতার কারণেই ককেশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, ক্লিনিক্যাল ডাটাসহ নির্ভরযোগ্য/বিশ্বস্ত বায়োম্যাটেরিয়ালের অভাব একটি বড় কারণ যার ফলে এশিয়ান অনেক দেশ বায়োমার্কার স্টাডিতে কম প্রতিনিধিত্ব করছে। সুতরাং বাংলাদেশে অনুবাদমূলক গবেষণা বিকাশের জন্য একটি বিশ্বমানের বায়োব্যাংক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় বিএসএমএমইউর প্রতিনিধিরা বায়োব্যাংকের মতো বিষয়গুলো ধারণ করার জন্য তাদের সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। এমনকি কীভাবে এই সুবিধা স্থানীয় অনুবাদমূলক গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে তাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বায়োব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অস্ট্রিয়ার গ্রাজ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্ট জাফউকাল, ইতালির ভেরোনা ইউনিভার্সিটির ড. রিটা ললোর, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার, ফ্রান্সের ড. জিসিস কোজলাকিডিস ও কাতার বায়োব্যাংকের পরিচালক ড. নাহলা আফিফি বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত এবং বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক সমন্বয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন আইরিশ-বাংলাদেশি ক্যান্সার গবেষক ড. আরমান রহমান, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানু ও অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ড. আরমান রহমান।