• শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবর
Irwin casino зеркало – Рабочие зеркало на сегодня Ирвин казино Играть слоты гараж бесплатно Ирвин Казино Основные понятия политики конфиденциальности в казино Аркада, требования к клиентам и условия идентификации. Играть бесплатно в Misery Mining на Аркада Казино Онлайн казино Аркада. Зеркало казино Arkada. Личный кабинет, регистрация, игровые автоматы Arkada casino зеркало – Рабочие зеркало на сегодня Аркада казино Банда казино рабочее зеркало Банда Казино – как начать играть? Banda casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Банда Как Вывести Деньги Драгон Мани? Казино Драгон Мани Зеркало Банда Казино – официальный сайт Банда казино онлайн Общий обзор Банда Казино Отзывы Банда Казино – Мнения и Отклики от Реальных Игроков Banda Casino Обзор популярных игр в Banda Casino: Зеркало Банда Казино | Halostar Marketing Kometa casino официальный сайт: бонусы, игровые автоматы в казино Комета Казино Комета официальный сайт онлайн. Зеркало казино Kometa. Личный кабинет, вход, регистрация Как получить бонусы в Комета Казино? Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Онлайн Казино Банда. Зеркало Казино Banda. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Банда Казино – Вход На Сайт, Личный Кабинет, Бонусы За Регистрацию, Лучшие Слоты На Деньги И Бесплатно В Демо-Режиме Banda Casino Зеркало – Рабочие Зеркало На Сегодня Банда Казино Банда Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Banda Casino Играй В Уникальном Стиле: Комета Казино Ждет Тебя! Комета Казино Мобильная Версия Официальный Сайт Kometa Casino Онлайн Казино Комета. Зеркало Казино Kometa. Личный Кабинет, Регистрация, Игровые Автоматы Kometa Casino Зеркало ᐈ Вход На Официальный Сайт Комета Казино Игровые автоматы бесплатно лягушка Комета Казино Slottica Zaloguj Się Best Online Casino Hungary Los excelentes aplicaciones de tragaperras por Casino 1xslot recursos positivo sobre 2024 Slottica Casino Avis Best Online Slots Casino Hierbei ganz Microgaming Spielautomaten 150 Chancen Ultra Hold And Spin für nüsse online zum besten geben! Steam Tower Slot Review 2024 Incl No Deposit Gratification 10 Greatest Online Casinos Throughout Canada For Actual Money In 2024 How Much Do On Line Casino Hosts Make? Earnings And Bonuses How To Open A Casino: Some Sort Of Detailed Six-steps Guide 10 Greatest Online Casinos Throughout Canada For Actual Money In 2024 How Much Do On Line Casino Hosts Make? Earnings And Bonuses

আমাদের ই-কমার্স জীশান কিংশুক হক

রিপোর্টারের নাম : / ৯৪ ভিউ
আপডেট সময়: রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

তামান্না একজন ব্যাংকার। কাজ করেন এমন একটি ব্যাংকে, যেটিকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা একটি ব্যাংক হিসেবে সাধারণ মানুষ জানেন। তামান্না ব্যাংকটির সিলেটের একটি শাখার প্রধান। কাজে ঢাকায় এসেছেন। তাঁর ব্যাংকটি একাধিক ই-কমার্স ট্রাভেল সাইটে অফার দিচ্ছে। কিন্তু তিনি টিকিট কেটেছেন নগদ টাকা দিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে তো আপনি গাড়িতে বসেই টিকিট কিনতে পারতেন। তিনি বললেন, যে এয়ারলাইন্সে এসেছেন, সিলেট বিমানবন্দরে ওই এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা তাঁর পরিচিত। তাঁকে বলাতে তিনি টিকিট কেটে দিয়েছেন, তামান্না তাঁকে নগদে পরিশোধ করে দিয়েছেন। অ্যাপ ডাউনলোডের ঝামেলা নেই, ফোনে ফোনে কাজ শেষ।
আমি অফিসে মিটিং করতে করতে তামান্নাকে বললাম, দই-ফুচকা খাওয়াই। অ্যাপে অর্ডার দিলাম। আধা ঘণ্টা পর যখন খাবার চলে এলো, তামান্না বললেন- তিনি ভাবেননি এটা সত্যিই আসবে। সিলেটে এ ধরনের ব্যবস্থা নেই। আমি অবাক হয়ে বললাম, আছে তো- এমনকি আপনারই ব্যাংকের কার্ডে সেটার প্রমোশনও দিচ্ছে।
সিলেট বলে নয়, সারাদেশে যত টিকিট কাটা হয়, তার খুব সামান্যই কোনো ই-কমার্স সাইটে কেনা। যত খাবার অর্ডার দেওয়া হয়, খুব নগণ্যই কোনো অ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে। তামান্নার মতো বড় বেতনের মানুষজন প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকার কেনাকাটা করছেন, কিন্তু ই-কমার্সে নয়।
ই-কমার্স সাইটে কেনাকাটার বিষয়টি এভাবে এখনও অনেকটাই ঢাকাকেন্দ্রিক (আমি শহরকেন্দ্রিক বলতেও দ্বিধান্বিত, কারণ ঢাকার বাইরে ই-কমার্স সামান্যই বেড়েছে)। যাঁদের হাতে কেনাকাটার সামর্থ্য আছে, তাঁদের প্রায় অনেকেই ই-কমার্সে কেনাকাটায় অভ্যস্ত নন, জানেনও না। এমনকি ই-কমার্সের নীতি-নির্ধারণে যাঁরা আছেন, তাঁরাও কতটুকু নিজেরা ই-কমার্সে কেনাকাটা করেন, বলা মুশকিল।
ই-কমার্স এগিয়েছে
গত ২০১৬ থেকে ই-কমার্স যথেষ্টই এগিয়েছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার ধরনটা পাল্টে যায় মোটরবাইকে পাঠাও রাইডের কারণে। মানুুষজন চাল-ডাল-শাকসবজি অর্ডার দিতে অভ্যস্ত হতে শুরু করলেন, ফুডপান্ডায় দেওয়া খাবার নিয়ে কমলা পোশাকের মানুষ ডেলিভার করছেন, এটা নিয়মিত দৃশ্য হয়ে গেল। দারাজ আর পিকাবুতে নতুন নতুন মোবাইল আসতে থাকল চমৎকার দামে।
আগের ৬ বছরের তুলনায় এই গত ছয় বছরে ই-কমার্স বেশ কয়েকগুণ বড় হয়েছে। এই খাতের সম্ভাবনা আরও পোক্ত হয় যখন ২০১৬ সালের পর এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বড় হতে শুরু করে। পাঠাও, সহজ, চাল-ডাল কিংবা সিন্দাবাদের প্রত্যেকটিতে ৫০ লাখ ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে। ২০১৯ সালে এসে আমরা শপ-আপের মতো অসম্ভব তরুণ কয়েকজন উদ্যোক্তার পাশে বিশ্বজয়ী ই-কমার্স বিনিয়োগকারীকে পেলাম; যাঁরা ৬০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে চমকে দিলেন।
কভিডের ধাক্কা
২০২০-এর মার্চের শেষে যখন কভিডের কারণে সারাবিশ্ব বন্ধ হয়ে গেল, সেটা ই-কমার্সকে বেশিই নাড়া দেয়। এই কভিডে একদিকে যেমন ই-কমার্সের ব্যবহারের প্রসার হয়, তেমনি অনেক কোম্পানি আঘাত পায়।
কভিডে একটা অসাধারণ কাজ হয়েছিল- এ টু আই এবং ই-ক্যাবকে নিয়ে কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি বাসায় বাসায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং চিকিৎসার কাজে লাগে এমন পণ্য পৌঁছে দেওয়া শুরু করে। যাঁরা আগে কোনোদিন ই-কমার্সে অর্ডার করেননি, তাঁরাও তখন সবজি কিংবা স্যানিটাইজারের জন্য ই-কমার্সে আসা শুরু করলেন। গত ৫ বছরে যত মানুষ ই-কমার্সে অভ্যস্ত হননি, তার চেয়ে বেশি মানুষ কভিডের ৫ মাসে ই-কমার্সে অর্ডার করতে শুরু করলেন।
এইটা দেখে সরকারি কর্মকর্তা, বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, মিডিয়া এবং সাধারণ অনেকেই বলতেন, কভিডে সব বন্ধ, কিন্তু ই-কমার্স খোলা, সুতরাং নিশ্চয়ই ই-কমার্সের তো রমরমা অবস্থা। কিন্তু ঘটনাটা বরং উল্টো।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স কাজ করত ফ্যাশন, গ্যাজেট এবং ইলেকট্রনিকস নিয়ে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ, মানুষজনের হাতে টাকা নেই, সুতরাং বেশিরভাগ ই-কমার্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো তখন। প্রায় প্রত্যেকে কর্মী ছাঁটাই করেছেন কিংবা বেতন কমিয়েছেন। কেউ কেউ ভাড়া করা অফিস ছেড়ে বাসা থেকে কাজ চালানোর চেষ্টা করেছেন।
সুতরাং কভিড অনেক মানুষকে ই-কমার্সে এনেছে, এটা সত্য। কিন্তু যাঁরা গ্রোসারি, খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং চিকিৎসা পণ্যের ব্যবসায় ছিলেন, তাঁরা মূলত এই অর্ডারগুলো পেয়েছেন। এ ছাড়া আর কেউ ব্যবসায় দাঁড়াতে পারেননি এবং অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন।
২০২১ সালের কালো অধ্যায়
২০১৬ সালের পর বাংলাদেশের ই-কমার্স সবচেয়ে পরিচিত হয় ই-ভ্যালির কারণে। ২০১৮-এর ডিসেম্বরে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু। দুই বছরের কম সময়ে কোম্পানিটি মাসিক ২০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়। বিশাল ক্যাশব্যাক, অবিশ্বাস্য ছাড় আর দেশজুড়ে প্রায় সব মিডিয়ায় এবং বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্প সময়ে দেশের সবচেয়ে পরিচিত এবং বড় ই-কমার্সে পরিণত হয় ই-ভ্যালি।
২০২০-এর আগস্টে একটি জাতীয় দৈনিকে ই-ভ্যালি নিয়ে খবর বের হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের নানা সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ল- সব জায়গায় আলোচনা শুরু হলো, এটা কি একটি ‘ধান্দা’ কিনা? গ্রাহকরা বিভক্ত হয়ে পড়লেন, তাঁদের কেনাকাটা (পড়ুন ‘বিনিয়োগ’) ফিরে পেতে আন্দোলন হলো। মাসখানেক ই-ভ্যালি সংকটে ছিল, কিন্তু তারপর সরকারি কেউই কিছু পেল না। সরকারি এই ছাড়পত্র ই-ভ্যালির সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াল।
দ্বিগুণ উদ্যমে ই-ভ্যালি ফেরত এলো আরও বড় হয়ে। স্বনামধন্য বিশাল বিশাল সব ব্র্যান্ড চলে এলো ই-ভ্যালিতে। দেশের সবচেয়ে বড় তারকারা হলেন কোম্পানিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তারা যোগ দিলেন ই-ভ্যালিতে। ১ হাজার ২০০ মানুষের একটা কোম্পানি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এলো। ই-ভ্যালির সাফল্য দেখে কয়েক মাসের ভেতর আরও কয়েকটি এ রকম ই-কমার্স সাইট দাঁড়িয়ে গেল।
প্রায় এক বছরে বাণিজ্য ধরে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারল না, ই-কমার্সের সংগঠন ই-ক্যাব কিছু করল না, ই-ভ্যালি মডেলে আসা ই-কমার্সগুলোতে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ কেনাকাটার নামে ১০-২০টা করে মোটরবাইকের টাকা বিনিয়োগ করা শুরু করলেন। ই-কমার্স নয়, বরং তার চেয়ে এটা বিনিয়োগের একটা জায়গা হয়ে যায় বেশি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারেরই আরেকটি সংস্থা এসে যখন ই-ভ্যালির উদ্যোক্তাদের জেলে পাঠাল, তখন হঠাৎ রাতারাতি একটা সাম্রাজ্য ধসে পড়ল। ১১টা কোম্পানিকে একে একে ধরা হলো। কিন্তু যেটা আসলে ধসে পড়ল, সেটা ছিল মানুষের বিশ্বাস। চট্টগ্রামে একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা আমাকে আক্ষেপ করে বলছিলেন, ই-কমার্স করি বললে এখন বাড়িওয়ালা অফিস ভাড়া দেন না, সমাজে বাঁকা চোখে দেখেন সবাই।
এই কালো অধ্যায়ের কারণে সবাই ই-কমার্সের ওপর চড়াও হলেন। সত্যিকার দোষগুলো ঢাকতে গিয়ে একেক মন্ত্রণালয়, একেক সংস্থা, একেক রকম নিয়ম নিয়ে এলো। নেওয়া হলো নানা ‘অ্যাডহক’ পদক্ষেপ। সত্যিকার ই-কমার্স কিন্তু থেমে থাকেনি চাল-ডাল, ফুডপান্ডা, সিন্দাবাদ, শপআপ ইত্যাদির মতো কোম্পানিগুলো কিন্তু এর ভেতরেই কাজ চালিয়ে গেছে। কভিডের কারণে বরং ভালো ই-কমার্সগুলো আরও বড় হয়েছে। কভিড শিখিয়েছে প্রত্যেকটা খরচের আগে চিন্তা করতে, শিখিয়েছে কীভাবে অস্তিত্বের প্রয়োজনে রাতারাতি ব্যবসায়িক মডেল বদলাতে হয়, কীভাবে ঘরে বসেও অনলাইনে কাজ চালানো যায়।
এত কিছুর পরও বাংলাদেশের ই-কমার্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ থেমে নেই। সাজগোজ, টেন মিনিট স্কুল, শিখো ইত্যাদিরা ঠিকই আরও বিনিয়োগ পেয়েছে। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ঘরে বিনিয়োগ পেয়েছে শপআপ, ই-কমার্সের লজিস্টিক্স খাতের কোম্পানিগুলো বড় হয়েছে, যেমন রেডেক্স, পেপারফ্লাই এবং ইকুরিয়ার। তার মানে ই-কমার্স ঠিকই থেমে থাকেনি। এটাও সত্যি, ১৬ কোটি মানুষের দেশে দৈনিক মাত্র লাখখানেক অর্ডার দেখে বোঝা যায়, বেশিরভাগ মানুষ এখনও ই-কমার্সে নিয়মিত হননি। যদি ই-কমার্সে ২ টাকার কেনাকাটা হয়ে থাকে, তাহলে ৯৮ টাকার কেনাকাটা হচ্ছে অফলাইনে, সাধারণ দোকানে কিংবা ফোনে ফোনে।
মূল চ্যালেঞ্জ কী কী
বাজার তৈরি করতে হলে ক্রেতার কেনাকাটায় ব্যবহারিক পরিবর্তন আনতে হবে। এই দেশের মানুষ যথেষ্ট ‘টেক এডাপ্টিভ’- সহজে নতুন কিছু শিখে নিতে পারেন। বিকাশ সেটা করে দেখিয়েছে। পাঠাও দেখিয়েছে। কিন্তু যে উপায়ে আমরা দৈনন্দিন কেনাকাটা করে এসেছি, সেটাকে মোবাইল ডিভাইসে নিয়ে আসতে গেলে যেমন অ্যাপ প্রয়োজন কিংবা যেমন অফার যেভাবে পৌঁছানো প্রয়োজন, সেটা খেয়াল করছি না। ব্যবহারের পরিবর্তন বদলাতে হলে সেটাতে প্রণোদনা দিতে হবে- আমরা ফেসবুকের বিজ্ঞাপনে খরচ করতে আগ্রহী কিন্তু ব্যবহারের প্রণোদনায় নয়।
ব্যবহার অনেক সময় ভিন্নভাবেও- এমনকি অফলাইনেও বদলানো যেতে পারে। সিন্দাবাদ যেমন প্রতিটা মুদির দোকানদারকে হাতে ধরে শিখিয়েছে কীভাবে অ্যাপ চালাতে হয়। এর জন্য আলাদা একটা টিম কাজ করেছে মাঠপর্যায়ে। কোথাও কোথাও মোবাইল ডাটা কিনে প্রণোদনা দিয়েছে, যেন তবুও মুদির দোকানদার অ্যাপটা ব্যবহার করেন।
উদ্যোক্তা এবং ব্যবস্থাপনায় আমরা এখনও সঠিক ম্যাচুরিটিতে পৌঁছাইনি। আমরা এখনও গতানুগতিক আইডিয়া নিয়ে কাজ করছি। ক্রেতারা যে আমাদের কথা জানেন না, তাঁরা যে নতুন নতুন পণ্য এবং সেবা কিনে ব্যবহার করতে চান, এইটা আমরা খেয়াল করছি না।
আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তা আসলে মার্কেটে ইতোমধ্যে চলছে- এমন একটি সেবা নিয়ে ই-কমার্সে আসেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে করেন যে কিছুদিনের ভেতর বিনিয়োগ পেয়ে যাবেন এবং ওই বিনিয়োগ থেকে লসে ব্যবসাটা চলতে থাকবে আর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারটা একটা অ্যাপ তৈরি কিংবা ইআরপি তৈরিতে সীমাবদ্ধ। অনেকের কাছে নিজের ফেসবুক আর লিংকডিন প্রোফাইলের পোস্ট কিংবা সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার হচ্ছে সাফল্যের মাপকাঠি। সত্যিকার মাপকাঠি হচ্ছে ক্রেতাদের নিয়মিত অর্ডার। সেটা অর্জন করার জন্য কী কী করতে হবে, সেটা করার সামর্থ্য জোগাড় করা এবং সম্পূর্ণ বাহিনীকে সেইদিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অনেক বড় সাফল্য।
ই-কমার্সের অবদান সরকারের কাছে নগণ্য। এটা ঠিক করতে হবে। আমাদের চেয়ে বেশি ভ্যাট দেয়, এমন অসংখ্য খাত আছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকার যে খাত থেকে বেশি আয় পাবে, সেই খাতে তার মনোযোগ বেশি থাকবে। কিন্তু ই-কমার্সের কারণে অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আসে, এর কারণে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় থাকে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার ডিজিটাল ছাপ থেকে যায়; ফলে যে কোনো কিছু সহজে খুঁজে সমাধান করে ফেলা যায়।

এ রকম অসংখ্য ‘প্যাসিভ’ অবদান আসে ই-কমার্সের কারণে, যেটা স্বল্পমেয়াদি আর্থিক অবদানে নয় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নে সাহায্য করে।যুগে যুগে প্রায় কোনো দেশেই সরকার এ রকম দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে ওঠেনি- এটাই বাস্তব। সেই তুলনায় আমাদের আইসিটি ডিভিশন এবং তার নেতৃত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রী যথেষ্ট সহযোগিতা মনভাবসম্পন্ন। কিন্তু বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
ই-কমার্সে দেশীয় বড় বিনিয়োগ নেই। না আমাদের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এসেছে, না ব্যাংকগুলো। যে কোনো শিল্প গ্রুপের জন্য ৬০০ কোটি টাকার ফ্যাক্টরি দিতে দ্বিধা নেই; কিন্তু কোনো একটি ই-কমার্সে ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ করে সেটাকে একটা স্বনির্ভরশীল ব্যবসায় পরিণত করার আগ্রহ আপনি প্রায় কারও কাছেই পাবেন না। বিদেশিরা এসে সাজগোজের মতো কোম্পানিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে পারেন, অথচ আমাদের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা সেটা করছেন না। আমরা ১০০ কোটি টাকা দিয়ে বনানীতে একটা জমি কিনব, কিন্তু ১০ কোটি টাকা চাল-ডালে বিনিয়োগ করব না। ব্যাংকগুলো তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা থেকে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয় করে কিন্তু সেই ক্রেডিট কার্ড অনলাইনে ব্যবহারের জন্য ৪ কোটি টাকার প্রণোদনাও দেবে না।
ঢাকার বাইরে ই-কমার্সকে নিতে হবে
বিকাশ কিংবা নগদের মতো সেবা যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলতে পারে, তাহলে ই-কমার্স কেন চলবে না? আস্থার জায়গা তৈরি হয়নি, ব্যবহার শেখানো হয়ে ওঠেনি, সঠিকভাবে বিষয়টা জানানো হয়নি। এর ফলে তামান্নার মতো বহু অবস্থাপন্ন শিক্ষিত মানুষও ই-কমার্সে কিনছেন না, বরং সনাতনী পদ্ধতিতে পণ্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন রিকশায় করে বা হেঁটে কিংবা ফোন করে। ব্যাংকের কর্মকর্তারাই জানেন না কীভাবে তাঁদের কার্ড দিয়ে ই-কমার্সে সুবিধা নেওয়া যায়, সাধারণ মানুষ তো পরের বিষয়। এই দূরত্বটা ঘুচানো প্রয়োজন।
পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় ই-কমার্সে কেনাকাটা সাশ্রয়ী। বাংলাদেশে ই-কমার্সে কেনার চেয়ে পাড়ার দোকান থেকে কেনা সাশ্রয়ী! সেগুনবাগিচার এসিঘরে বসে যে ট্যাক্সের কর্মকর্তা জটিল সব ট্যাক্স আরোপ করছেন ই-কমার্সে, তাতে বছরে ২০ কোটি টাকাও বেশি ট্যাক্স আসে না, কিন্তু ২ কোটি গ্রাহক এই স্বচ্ছ কেনাকাটার খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ই-কমার্সের বিজ্ঞাপন অনলাইনে চালাতে গেলে দ্বৈবকর আরোপ হয়। গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে এসক্রো পদ্ধতিতে এখন মার্চেন্টকে পেমেন্ট করা হয়, কিন্তু তাতে যে শতকোটি টাকা সিস্টেমে আটকে থাকে সপ্তাহর পর সপ্তাহ। এ জন্য যে কার্ডের চেয়ে নগদে পেমেন্ট সুবিধাজনক হয়ে যাচ্ছে, এগুলো দেখার কেউ নেই।
বাংলাদেশ মার্কেটে ই-কমার্স বাড়বে, এটা অবধারিত। উদ্যোক্তাদের দেখতে হবে, কীভাবে তাঁরা লাভজনক উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করে সেই বৃদ্ধির অংশীদার হতে পারেন। সরকারকে দেখতে হবে, কীভাবে বিষয়টিকে সহজ এবং সাবলীল করা যায়। দেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এ খাতে। যত দ্রুত আমরা এগোতে পারব, তত স্বচ্ছ হবে অর্থনীতি, তত বড় হবে ক্রেতার পরিধি।৩
লেখক : সিন্দাবাদ ডটকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বেসিসের ডিজিটাল কমার্স কমিটির প্রাক্তন কো-চেয়ারম্যান


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর