আবু নাসের সরকার দুলাল
স্বতাধিকারী
সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: এনামুল হক এনাম
দেশের প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন সেক্টরের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদেরই একজন তারুণ্যে উদ্ভাসিত উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ‘সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং’ এর স্বত্বাধিকারী আবু নাসের সরকার দুলাল।
সময়ের এই আত্মপ্রত্যয়ী ও মেধাবী উদ্যোক্তার জন্ম ১৯৭০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত ব্যবসায়ী পরিবারে। তাঁর পিতা মো: আব্দুল গফুর সরকার ছিলেন স্বাধীনতা ও পূর্ব পরবর্তী দেশখ্যাত পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘হাসান বুক ডিপো’র প্রতিষ্ঠাতা। নাসের সরকারের মায়ের নাম রেজিয়া সরকার। সরকার পরিবারের কৃতী উদ্যমী সন্তান আবু নাসের সরকার দুলাল তাঁর পিতাকে দেখেই ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। বর্তমানে তিনি অনন্যা ট্রেডার্স, জননী হোমস লিমিটেড, জননী কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিস এবং জননী বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা। ঢাকায় তাঁদের প্রধান অফিস ও স্থানীয় কার্যালয় ছাড়াও যশোরের পুরাতন কসবায় শাখা অফিস রয়েছে।
মেধাবী আবু নাসের সরকার দুলাল ট্রেডিং, ইম্পোর্টার, নির্মাণকারী, ডেভেলপার, প্রিন্টিং ও প্রকাশনা ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে পিতার ব্যবসা পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর ফলে তাঁর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা অনেকটা জন্মগত। তিনি ১৯৯৬ সালে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
উদ্যমী ব্যবসায়ী আবু নাসের সরকার ২০১১ সাল থেকে এ অবধি খুলনা বিভাগের শীর্ষ করদাতা হিসেবে সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সম্মাননা পেয়ে আসছেন। তিনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁরা আব্দুল গফুর একাডেমী, রিজিয়া গফুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও রিজিয়া গফুর ফাউন্ডেশন পরিচালনা করেন।
আবু নাসের সরকার দুলাল বাংলাদেশ পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এফবিসিসিআই। জেনারেল বডির এবং নাসিব (এনএএসসিআইবি) এর সম্মানিত সদস্য। তিনি এফবিসিসিআই’র বেশ ক’টি উপকমিটির দায়িত্বশীল সদস্য।
আবু নাসের সরকারের অগ্রজ এক ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম হোসেন সরকার (অব.) রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। তিনি ছোট ভাইয়ের এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উদ্যমী, মেধাবী ও ব্যবসা অভিজ্ঞ সাহসী ব্যক্তিত্ব আবু নাসের সরকার দুলাল সম্প্রতি বিজনেস ম্যাগাজিন অর্থকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বলেন তা এখানে উপস্থাপন করা হলো :
অর্থকন্ঠ : বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু এগিয়েছে বলে মনে করেন?
আবু নাসের সরকার : একথা আজ গর্বের সাথে বলা যায় যে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে, অর্থনৈতিক বিচারে আমরা পৃথিবীর ২৪তম অর্থনীতির দেশ। দারিদ্র্য কাটিয়ে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। মাথাপিছু আয় ১৯৭১ সালে ছিল মাত্র ১০০ ডলার, বর্তমানে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২৭৬৫ ইউএস ডলার। নিকট অতীত ২০০৭-০৮ অর্থবছরেও এটি ছিল ৬৮৬ ডলার। শিশুমৃত্যু ও গর্ভবতী মাতৃমৃত্যু হার অনেক কমেছে। দেশের প্রায় প্রতি ঘরেই এখন বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। গ্রামেও পাকা সড়কের সংযোগ। এতে করে গ্রামীণ জনপদে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান সরকার দেশের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য ব্যয়বহুল স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল, উড়ালসেতু ইত্যাদি নির্মাণের ফলে যানজট কমে আসছে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়, আমরা উন্নয়নের পথে অনেক অগ্রসর হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বড় বড় দুর্যোগেও এখন আর বিদেশিদের কাছে ত্রাণ বা সাহায্যের জন্যে হাত পাততে হয় না। ইতোমধ্যে দেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হয়েছে। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে চলেছি।
অর্থকণ্ঠ : মূলত বেসরকারি খাতের উদ্যোগেই দেশের অর্থনীতি বেশ সমৃদ্ধি লাভ করছে, তারপরও আমরা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নত হতে পারিনি; এর পেছনে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আবু নাসের সরকার : একটি দেশের উন্নয়নের জন্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অনেক ধরনের অবকাঠামোগত সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। এদেশে তার অভাব ছিল এবং এখনো আছে। তারপরও আমি মনে করি, বেসরকারি খাত পর্যায়ক্রমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় দেশে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র শিল্প-কারখানা ছিল এখন গ্রাম পর্যায়েও শিল্পের দেখা মেলে। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে সেভাবে হয়তো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে না, তারপরও হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন শিল্প-বাণিজ্য সহায়ক; জ্বালাও-পোড়াও হরতাল-অবরোধ নেই। আশা করছি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও যানজটের নিরসন হলে, গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতা কার্যকর হলে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে সক্ষম হবো।
আমি মনে করি, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি কি মনে করেন সরকারের জবাবদিহিতাসহ সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব?
আবু নাসের সরকার : অবশ্যই। জনগণের নির্বাচিত সরকারের অবশ্যই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। এটিইতো প্রকৃত গণতন্ত্র। জনগণই যে, সকল ক্ষমতার উৎস তাতো জনগনের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের জবাবদিহিতা থেকেই প্রমাণিত হয়। সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসন সব কিছুতেই জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
দেশে আইন ও বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্যেই শাসন ব্যবস্থায় প্রয়োজন স্বচ্ছ্বতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
অর্থকণ্ঠ : আপনি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শিক্ষিত এবং সচেতন নাগরিক। অনেকেই মনে করেন, দেশে দুর্নীতির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে- এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
আবু নাসের সরকার : দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজন সংবিধান মোতাবেক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, জনসচেতনতা এবং জনপ্রতিরোধ। মানুষ অর্থবিত্তের জন্যে দুর্নীতি করে। তাদের ধারণা টাকা থাকলেই অন্যেরা সম্মান করবে, নিজেরা ভোগবিলাসের জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের যদি কেউ সম্মান না করে তাহলে অনিয়ম ও দুর্নীতি করার মোহ কেটে যাবে। এমনকি পরিবারের লোকেরাও দুর্নীতিবাজদের যদি ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে দুর্নীতিবাজরা আর দুর্নীতিতে আগ্রহী হবে না।
বর্তমান সমাজে কে কিভাবে টাকা আয় করছে তা না দেখে দেখা হয় তার অর্থবিত্তকে। কোনো কোনো দুর্নীতিবাজকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির সম্মান দেয়া হয়, তাকে পদক দেয়া হয়। এসব না করে যদি তাকে ঘৃণা করা হতো, উপেক্ষা করা হতো, সামাজিক অনুষ্ঠানে বয়কট করা হতো- তাহলে তারা এ পথ থেকে সরে আসতো। এখনতো অনেক আলোচিত দুর্নীতিবাজ বড় সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ। অনেকে এমপি হয়েছেন- ভবিষ্যতে টাকার জোরে আরও হবেন। একটি স্বাধীন দেশের সমাজব্যবস্থার জন্যে এটি খুবই ক্ষতিকর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সুনাগরিক হবার প্রবণতা কমে আসবে।
আমি মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্মোহভাবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এদেশের এই দুর্নীতি প্রবণতার ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে।
এই দুর্নীতির কারণে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরাও স্বচ্ছন্দে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে অসুবিধায় পড়েন। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বিনিয়োগে।
অর্থকণ্ঠ : অনেকেই বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এ ব্যাপারে বেশ সেনসিটিভ। এদেশে ব্যবসার পরিবেশ থাকলেও প্রধানত দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগ করতে এসে পিছিয়ে যায়-
আবু নাসের সরকার : কথা সত্য। এটা শুধু বিদেশিরা নয়, দেশের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরাও শঙ্কিত ও বিব্রত হয়ে পড়েন। তবে আশার কথা, এখন সবাই সচেতন হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।
অর্থকণ্ঠ : আপনারা দেশের প্রিন্টিং ও প্রকাশনা জগতের কুলীন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী। আপনার পিতার প্রতিষ্ঠিত ‘হাসান বুক ডিপো’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ছিল। বর্তমানে আপনি সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং প্রতিষ্ঠা করেছেন। পারিবারিক ধারাক্রমের এই ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইছি।
আবু নাসের সরকার : আপনি ঠিকই বলেছেন, আমার এই প্রিন্টিং ব্যবসা লাইনে আসার ক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্য কাজ করেছে। আমার পিতা আব্দুল গফুর সরকার সেই পাকিস্তান আমলে ঢাকায় ‘হাসান বুক ডিপো’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমি সেই ধারাকে আরও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছি সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং। এটি একটি অত্যাধুনিক মুদ্রণ কারখানা। আপনি জেনে থাকবেন বর্তমান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই প্রদান। আমরা কয়েকজন পাবলিশার্স সরকারের এই উদ্যোগকে সফল করার জন্যে যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। বছরের প্রথম দিনেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই প্রদানের মাধ্যমে দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে তার অংশীদার আমরাও। সরকারের এই মহান উদ্যোগের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার প্রায় ৭৫%। এটি সরকারের অনন্য এই উদ্যোগেরই ফসল।
অর্থকণ্ঠ : অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে যে, কতিপয় মুদ্রাকর এই বই প্রকাশে নিম্নমানের কাগজ ও কালি ব্যবহার করেন- আপনার বক্তব্য কি?
আবু নাসের সরকার : অভিযোগ সত্য নয়, বিশেষ করে আমাদের মতো নামি ও দামি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। দেখুন, এটি শুধু আমার ব্যবসা ক্ষেত্র নয়; এর সাথে আমার পিতা ও পরিবারের ঐতিহ্য জড়িত। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠান বইয়ের মানের সাথে কখনো আপস করেনি এবং করবেও না।
আরেকটি বিষয়, এটি যেহেতু শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সরসরি সম্পৃক্ত সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি নি¤œমানের কাগজ ও কালি হলে তা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে যা আমাদের কাম্য নয়। সরকারের প্রদত্ত বাজেট অনুযায়ীই আমরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে মানসম্মত বই প্রকাশ করি।
অর্থকণ্ঠ : আপনি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হলেও একজন শিক্ষিত মানুষ। বর্তমানে শিক্ষার হার এবং পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে- আপনার পরামর্শ কি?
আবু নাসের সরকার : অভিযোগ সত্য। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষার হার বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমি বলবো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এদেশে কারিগরি, জীবনমুখী, উৎপাদন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোর দিতে হবে। বিদেশে যে সব বিষয়ের চাহিদা আছে যেমন নার্সিং, কম্পিউটার সায়েন্স এসব বিষয়ে শিক্ষিত হলে এবং তাদেরকে যদি চাহিদা অনুযায়ী বিদেশে পাঠানো যায় তবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। অন্যদিকে শ্রমিকদেরও যদি স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো হয় তবে তারা কিন্তু অনেক বেশি বেতনে কাজ করতে পারবে। আমি মনে করি, সরকারের শিক্ষা বিভাগ এবং শ্রম বিভাগ এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেবে।
সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। সবার জন্যে উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই, কারণ উচ্চ শিক্ষা কেরানীর সৃষ্টি করে। যারা খুব মেধাবী এবং গবেষণা করার মতো জ্ঞানের অধিকারী- তাদের জন্যে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। এসব মেধাবী পর্যায়ের মানুষ চাকরিতে, অধ্যাপনায়, গবেষণায় কর্মে যোগ দেবে। আর কিছু বিদেশে উচ্চ ডিগ্রির জন্যে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
অর্থকণ্ঠ : বর্তমানে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নের জন্যে দেশের বাইরে গমন করছে। তাদের অধিকাংশ পড়াশোনা শেষ করে বিদেশেই থেকে যাচ্ছে। এতে কি জাতি মেধাশূন্য হবার দিকে যাচ্ছে না?
আবু নাসের সরকার : অত্যন্ত বাস্তব একটি কথা বলেছেন। এর মূল কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি আছে। দেশে একজন শিক্ষার্থী হায়ার এডুকেশন নেবার পর বেকার থাকছে। অধ্যয়নকালে কারো কারো দু’একটি টিউশনি করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ থাকে না। বিদেশে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনাকালেই নানা কাজে জড়িত হবার সুযোগ পাচ্ছে। বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। অধ্যয়ন শেষে অধিক বেতনে ফুল টাইম চাকরি করছে, সেখানে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পাবার পর ব্যাংক ঋণে বাড়ি-গাড়ি ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছে। যারা মেধাবী তাদের জন্যে রয়েছে অধিক সুযোগ। সুতরাং তারা আর ফিরছে না। এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মেধাবীদের সরকারি বড় বড় দায়িত্বে পাওয়া যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের দেশের জন্যে আয়ের একটা সুযোগ সৃষ্টি হলেও পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্যে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। আমি মনে করি, এজন্যে আমাদের দেশে এধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। দেশে বর্তমানে বিশেষ করে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে যদি ছাত্র-ছাত্রীদের পার্ট টাইম চাকরির ব্যবস্থা রাখা হয় তবে তারা দেশেই পড়াশোনা করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
আমি মনে করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এটা ভাবতে হবে এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
অর্থকণ্ঠ : বর্তমান সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করছে, একে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আবু নাসের সরকার : এটি নি:সন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এর জন্যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অধিক প্রয়োজন। সরকারের যে সংস্থাই এর দায়িত্ব নিক না কেন তাদেরকে ঠিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতো জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কারণ, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সামান্য ত্রুটির জন্যে এত ভালো একটি কর্মসূচির ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে এবং মানুষ এর প্রতি অনাস্থা পোষণ করতে পারে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করতে হবে।
অর্থকণ্ঠ : বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ ঘোষণা দিয়েছিল; সেই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। আপনার অভিমত কি?
আবু নাসের সরকার : এটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে শুধু মুখে বললেই ডিজিটাল বা স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এর জন্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অধিক জরুরি। বিশ্ব এখন প্রযুক্তির সুবাদে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমি জলে স্থলে আকাশ পথে থেকেও একটি মোবাইল ফোন দ্বারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছি, বিদেশের সাথে সংযোগ রাখতে পারছি এটা নিঃসন্দেহে ডিজিটাল ব্যবস্থা। স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের সবারই প্রত্যাশা। তবে এজন্যে মানুষদের কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ মুষ্টিমেয় ধনবান ও বিত্তশালীর জন্যে স্বাধীন হয়নি। এর জন্যে দরিদ্র মানুষের অবদানই বেশি। খেটে খাওয়া মানুষ সেদিন মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং গ্রামবাংলার ছাত্র-কৃষক শ্রমিক আমজনতা। সেই মানুষদের ভাগ্যের উন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। তবেই আকাক্সিক্ষত স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
অর্থকণ্ঠ : এদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনি কতোটা আশাবাদী?
আবু নাসের সরকার : আমি খুবই আশাবাদী মানুষ। বর্তমান সরকার আমাদের আশার এই জায়গাটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করায় এখন ৩০ বিলিয়নের কাছাকাছি। এদেশের গার্মেন্ট শিল্প, জনশক্তি রপ্তানি খাত বিভিন্ন রাষ্ট্রে এদেশের ভাবমূর্তি রক্ষাসহ অর্থনৈতিক খাতকে সমৃদ্ধ করছে। একজন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হিসেবে আমি বেশ আশাবাদী যে, ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সক্ষম হবো। তবে এ জন্যে দেশে আইনের শাসনধারা বিদ্যমান রাখতে হবে। জনমতের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।৩