নিউইয়র্ক ডটকম বিশেষ রচনা
সারেঙ্গীবাদক রমেশ মিশ্রের জন্ম ২ অক্টোবর, ১৯৪৮ সালে, ভারতের বারাণসীতে। ১৩ মার্চ, ২০১৭-তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের বাঙালিদের আড্ডাখানা জ্যাকসন হাইটস্-এর সেভেন্টি থার্ড স্ট্রিটের একটি আ্যাপার্টমেন্ট-এ বাস করতেন। এক সময় কলকাতা থাকতেন এবং তিনি ভালো বাংলা বলতেন। পণ্ডিত রবি শংকর-এর শিষ্য এবং রবিশংকর, নামকরা আমেরিকান ব্যান্ড অ্যারোস্মিথসহ অনেক খ্যাতিমান শিল্পীদের সাথে এবং অসংখ্য উচ্চ প্রশংসিত কনসার্টে ও চলচ্চিত্রের আবহসঙ্গীতে সঙ্গত করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, মার্জিত ও রুচিশীল মানুষ ছিলেন। কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি, একবার ভার্জিনিয়াতে আমাদের চ্যারিটি সংগঠন ‘দি অপটিমিস্টস্’-এর এক ছোট অনুষ্ঠানে তিনি সারেঙ্গী বাজাতে আমাদের সাথে গিয়েছিলেন।
রমেশ মিশ্র সম্পর্কে না জানা তথ্যটি হলো- একাত্তর সালে বাংলাদেশে যখন হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনি নরহত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন পণ্ডিত রবিশংকরের আহ্বানে আয়োজিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশে তিনিও সারেঙ্গী বাজিয়েছিলেন। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এখানে যে ভিডিওটির সংযোগ দিয়েছি, তাতে তবলা বাজিয়েয়েছে একজন অসাধারণ তবলাবাদক ওস্তাদ তরি খান। পাঞ্জাব ঘরানার শিল্পী তরি খান-এর জন্ম পাকিস্তানে, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে।
এসব নামীদামী শিল্পীদের কথা ভাবতে গিয়ে দেখলাম, শিল্পের প্রতি গভীর অনুরাগ, শিল্পের প্রচার-প্রসার, এবং শিল্পের সমঝদারিত্বের কারণে শিল্পীরা বাউল হয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে চলে যান। শিল্পীদের দেশ-খেশ থাকে না। তারা সৃষ্টির নেশায় একাকার হয়ে হারিয়ে যান অনাদি জগতে। তাইতো শিল্পীর কোনো জাতপাত থাকেনা।
অবশ্য শিল্পের অনুরাগীদেরও জাতাপাত থাকতে নেই, নাহলে আমি একজন বাঙ্গালি হয়ে কীভাবে একাত্তরের ঘাতক খানসেনাদের সহোদর তরি খান-এর এই তবলাবাদন মুগ্ধ ও অকুণ্ঠচিত্তে উপভোগ করতে পারতাম?
শুধু শিল্প নয়, উচ্চমার্গের যে কোনো সৃষ্টিই মানুষে মানুষে মিলে একাকার হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। এই সৃষ্টিগুলোর অন্যতম হলো শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান