বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৯৫ সালের পর আবার এলেন নিউ ইয়র্কে এবং মাত্র পাঁচ দিনের জন্য এবং কাব্য জগতকে যেন ঝাঁকুনি দিয়ে গেলেন। জাতিসত্তার কবি হিসেবে অভিহিত এই প্রতিভাকে দেশে এবং বিদেশে সবাই তাঁকে অনেক পছন্দ করেন, অনেক ভালোবাসেন। এর আগেও তাঁকে আশা করা হয়েছিলো বইমেলায় কিংবা হুমায়ুন আহমেদ উৎসবে। কিন্তু ব্যাটে বলে হয়ে ওঠেনি।
জেএফকে বিমান বন্দরে অবতরনের পর গাড়ীতে ওঠার পর হুদা ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিলেন তাঁর ভাতিজা সম্পর্কের নুরুল আজিম। মনে হলো কতোদিন পর কতো আপনজন এতো দূর থেকে আবার এলেন। কবি মিশুক সেলিম ভাই আমাকে আগে থেকেই তাঁর আসার ব্যাপারে নিয়মিত আপডেট করে আসছিলেন। হুদা ভাই জানতে চাইলেন ফখরুল রচি ভাইয়ের খবর।
১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কতোদিন পর আবার সরাসরি দেখা হওয়া এবং কিছুটা ইমোশনাল মোমেন্ট। তাঁর পাশে বসে গল্প করতে গিয়ে বললাম , রুদ্র নেই কিন্তু আমি এখনও আছি। আপনি ভালো আছেন এবং কামাল ও ভালো আছে। ড. নুরান নবী ও জাকারিয়া চৌধুরীদের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বিশেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে একটি বিশাল হোটেলের বলরুমে। প্রধান অতিথি হয়ে এলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ভাই। একই অনুষ্ঠানে বিশেষ ভিডিও বানী পাঠিয়েছে আমার প্রিয় মানুষ এবং এই বিশাল ঐতিহাসিক মহাযজ্ঞের প্রধান সমন্বয়কারী কবি কামাল চৌধুরী ।
পরদিন অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ছোট্ট অথচ আন্তরিক পরিবেশে সমবেত হলো কাব্যামোদীরা, কবিকে নিয়ে হলো বিশেষ সমাবেশ। আমার আমন্ত্রনে এলেন বর্তমানে প্রবাসী এবং কবির বিশেষ দু’জন ঘনিষ্ঠজন– শিল্পী রাগিব আহসান ও সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান শুরুর আনুষ্ঠানিকতার আগে হুদা ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করলাম রাগিব ভাই , মাইন ভাই ও আমি। আমাদের সবার অত্যন্ত প্রিয়জন কবি শামসুল ইসলামকে নিয়ে কথা উঠে মনটা যেন খুব মন খারাপ হয়ে থাকলো কিছুটা সময়। মনে পড়লো তাঁর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, তাঁকে নিয়ে কতো মজার স্মৃতি, তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় দারুন আবৃত্তি ইত্যাদি ।
‘মুজিব বর্ষ উদযাপন পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র’ সংগঠনের পক্ষে কবি মিশুক সেলিমের সভাপতিত্বে প্রবাসের অনেকে কবিতা আবৃত্তি করলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিকে বিশেষ ফুলের তোড়া উপহার দিলেন সাউথ এশিয়ান রাইটার্স এন্ড জার্নালিস্টস ফোরাম ইউএসএ-এর নেতৃবৃন্দ। তবে বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা আবৃত্তি শিল্পী মিথুন আহমেদের দু’টি কবিতার উপস্থাপন যেন অন্য
জগতে নিয়ে যায়। গোপন সাহার উপস্থাপনও সবাই খুব পছন্দ করেন। কবি হুদা ভাইয়ের কথা শোনার জন্য সবাই যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন। কবিতা আবৃত্তির মাঝে হঠাৎ দু’চারজন দীর্ঘ বক্তৃতা শুরু করলে অনেকে বিরক্ত হন। হুদা ভাইয়ের কথা, আবৃত্তি, নাটকীয় কথোপকথন ইত্যাদি মিলিয়ে যেন আরেক জগতে চলে যাওয়া হয় উপস্হিত সবার!
মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহা ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নবান্নর ছোট্ট পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেন কবি এবং ফিল্ম মেকার ও সাংবাদিক লেয়ার লেভিনকে নিয়ে। হুদা ভাই বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি চমৎকার নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখলেন। লেয়ার লেভিনের কথাগুলো বালো করে শোনা গেলোনা কারন অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক শুরুর আগেই কিছু অতি উৎসাহী শ্রোতা দর্শকদের ছবি
তুলতে গিয়ে কিছুটা অশোভন পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলে। হুদা ভাইয়ের কাছ থেকে একটু বিদায় নেয়ার জন্য নিরিবিলি ও একান্ত কোন পরিবেশ পাওয়া গেলোনা। আমার অনেকদিনের ঘনিষ্ঠ চেনা লেয়ার লেভিনের সাথেও কুশল বিনিময় হলোনা। হুদা ভাইকে গল্প করতে গিয়ে এরই মধ্যে বলেছিলাম, “আপনি কেন এতো অল্প ক’দিনের জন্য এলেন! ” তিনি ক্লান্ত অবয়বে প্রজ্ঞামিশ্রিত হাসি হাসলেন।