সকালে ঘুম থেকে উঠে মন মন খারাপ হয়ে গেল। গতকাল প্যারিসের আকাশে ছিল ঝকঝকে রোদ। আর আজ আকাশ মেঘে ঢাকা, থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঠান্ডাও বেড়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে আজ সারাদিন মেঘ বৃষ্টি থাকবে। রাতেও তাই।
প্রায় ১০ বছর আগে ক্যাফে ডি লুনার সাথে পরিচয় যখন আমি প্রথম প্যারিসে আসি। সেই থেকে পারিস আর ক্যাফে লুনা আমার যেন সেকেন্ড হোম হয়ে গেল।
ঢাকাস্থ ফরাসী দূতাবাসের ভিসা অফিসার একবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন এবার কোথায় যাবা? বললাম, ভিসা কতদিনের দিচ্ছ তার উপর নির্ভর করছে কই যাবো। বছর তিনেক আগে আমেরিকার ভিসা রিনিউ করতে দিলাম ড্রপবক্সে। আমাকে ডাকা হলো ইন্টারভিউতে। কি এক্টাবস্থা! মহিলা ভিসা অফিসার পাসপোর্ট নেড়েচেড়ে দেখছেন। কোন কথা নেই কারোর। নীরবতা ভাঙার জন্য বললাম এভাবে লাইনে দাড়িয়ে এটাই আমার প্রথম আমেরিকান ভিসা নিতে আসা। তিনি বললেন, আই নো, আমি জানি। একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এই তথ্যগুলো ইমেইলে তাড়াতাড়ি দিয়ে দিও। তোমার পাসপোর্ট রেখে দিলাম। মনে মনে বললাম, আমারে ইন্টারভিউ নিবা কোন প্রশ্ন করবা না! করে দেখ একবার! উনি কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। একটা পাসপোর্ট রেখে বাকীগুলো ফেরত দেয়ার আগে শুধু বললেন, এতো প্যারিস যাও কেন! বললাম, I am in love with Paris. ইউরোপের কোথাও গেলে আমি প্যারিস হয়েই যাতায়াত করি। যদিও আজো আমি আইফেল টাওয়ারের উপরে বা ল্যুভ মিউজিয়ামে যাইনি। সবসময় মনে হয় পরের বার যাব। গত ১০ বছরে সেই পরেরবার আর হলো না! জানিনা কবে হবে!
ক্যাফে লুনা আমাকে টানে। এর আশপাশ আমার মুখস্ত। এই সময়ের মধ্যে প্যারিস অনেক বন্ধু, শুভাকাংখী হয়েছে আমার। উনারা আমাকে ভালোবাসেন, সময় দেন। উনারা দেশে গেলে আড্ডা হয়। তবে প্যারিস নিয়ে এতো কথা বললাম যে কারনে তার পিছনে একজন মানুষের ভালেবাসা জড়িয়ে আছে। তিনি প্যারিসের প্রিয়মুখ ও ক্যাফে লুনার সত্ত্বাধিকারী কাজী এনায়েত উল্লাহ যিনি ইনু ভাই নামে সমধিক পরিচিত। চার দশকের বেশী সময় ধরে তিনি প্যারিসে আছেন। রয়েছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেট ব্যাবসা। উজবেকস্থান এয়ার এর জিএসএ। হারমোনিস নামক ব্রান্ডের পারফিউম কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক।