নাহার তৃনা
সবজান্তা শমশের ভাইয়ের উত্তেজিত প্রশ্নের মুখে পড়ে গেলাম সক্কাল সক্কাল।
– মধ্যযুগের পুথিসাহিত্যের জনপ্রিয় একখানা কাব্য আমির হামজা। এই কাব্যে বীর যোদ্ধা আমির হামজার বীরত্বের কাহিনি আছে। মোট ৭০টি পর্বে এই বিশাল কাব্য সমাপ্ত হয়….মুখের কথা কেড়ে নিয়ে খেঁকিয়ে উঠলেন শমশের ভাই;
– রাখ তোর গুগল হাতড়ানো কপচানি। মধ্যযুগের গুষ্টিকিলাই। ২০২২ এর সাহিত্যে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আমির হামজার কথা জানতে চাই। সাহিত্য নিয়ে মাতামাতি করতে দেখি তোর হয়ত জানাশোনা আছে তার সম্পর্কে?
দম না ফেলে একনাগাড়ে কথাগুলো ডেলিভারি দেওয়া শামশের ভাইয়ের দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে মনের কাঁচুমাচু বিস্ময়টি পাকড়াও করতে চাইলাম ফিরতি প্রশ্নে,
– কে এই আমির হামজা?- এক থাবায় পদক পাওয়া আমির হামজা। শমশের ভাইয়ের এত ক্ষোভের কারণ তৎক্ষণাৎ মাথায় ঢুকলো না। তাকে শান্ত করতে বললাম,
-২০২১ এর আব্দুল রাজাক গুরনাহ্কেই বা কয়জনে চিনতাম আমরা?
গরম তেলে পানির ছিঁটে পড়লো বুঝি। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠলেন
– কোথায় আমীর খান কোথায় পান দোকান! ওই পুরস্কার নিয়েও কম আওয়াজ ওঠেনি। তাছাড়া গুরনাহ্কে তার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ১২টা ওজনদার উপন্যাস লিখতে হয়েছে এসব ফিরিস্তি এখন সবার নখদর্পণে।
– এই আমির হামজা বাংলাসাহিত্য ভাণ্ডারকে কি কি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন?
– ২০১৮’র একুশে বইমেলায় তাঁর ”বাঘের থাবা”, আর ২০১৯, “পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি।” সাকুল্যে এই তাঁর সাহিত্যকীর্তি।
– থাবার জোর আছে বটে! আগামীবার সাদাত হোসাইন পাবেন তুমি দেখো!অতি আবেগে শমশের ভাইকে আপনি থেকে ‘তুমি’ বলে বসি।
-হ্যাঁ সবাইকে দেওয়া হবে। শুধু অভ্রের মেহেদী হাসান খান বাদ পড়ে যাবেন। এবারও পুরস্কার ঘোষণার খবর শুনে তালিকায় নামটা খুঁজে না পেয়ে কষ্ট পেয়েছি।
-আহ্ এবারও অভ্রের কপালে রাষ্ট্রীয় সম্মান জুটলো না!
– জায়গা মতো আমলার গামলা গামলা তেলমশলা জোগান দেওয়া গেলে জুটে যেত ঠিক ঠিক।
-ওরে বাব্বা! এ তো সোনায় সোহাগা।
-কীভাবে? চোখ পাকিয়ে শমশের ভাই জানতে চাইলেন;
– এক শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখে ছক্কা হাঁকিয়েছেন, দুই. একখান সক্রিয় সচিবপুত্র ময়দানে। আর কী লাগে!
কী মনে হতেই শমশের ভাই বলে ওঠেন,- এই চুপ! দেওয়ালেরও কান আছে। প্রবাসে থেকেও যারা দেশের নামে অন্দমন্দ কহিবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্হা হচ্ছে।
উত্তেজনার বশে শমশের ভাই ভুলে বসে আছেন আমরা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে।