মশিউর আনন্দ ঢাকা :
অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে আটপৌরে জীবনের কথা শুনিয়েছেন জোহোরা জাবিন কারিম, তবে সে-বর্ণনায় অজান্তেই চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয় পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত বিকাশশীল জীবনের অন্যতর ছবি। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে বেড়ে ওঠার সুবাদে এই ঘরোয়া কথায় আমরা যেমন পাই অন্দরের পরিচয়, সেইসাথে জানালা দিয়ে দেখি বাইরের জীবন।
ক্রমে ক্রমে ঘর ও বাহির গাঁথা হয় একসূত্রে এবং মুক্তিযুদ্ধের অভিঘাত একাকার করে দেয় সব। আত্মকথনের ভঙ্গিতে ফেলে আসা দিনগুলো এমনভাবে বিবৃত করেছেন লেখক যে, পারিবারিক জীবনের সুখ-দুঃখ-আনন্দ স্মৃতির সঙ্গে দেশের ভাগ্য মিশে যাওয়ার পাশাপাশি সামজিক জীবনের নানা পরিচয়ও সেখানে ফুটে ওঠে। ষাটের দশকের যে পূর্ব পাকিস্তান ক্রমে ফুঁসে উঠছিল সেই রাজনৈতিক অভিঘাত আরেক মাত্রা নিয়ে জায়গা করে কাহিনিতে। পূর্ব বাংলা থেকে বাংলাদেশ, পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা, ইতিহাসের পালাবদলের এই টালমাটাল সময়ে অন্দর-বাহির মিলিয়ে অন্তরঙ্গ এই জীবনকথা সাধারণের সাথে অসাধারণের মিশ্রণে পেয়েছে অনন্য মাত্রা।
লেখক পরিচিতি :
জোহোরা জারিন কারিম ১৯৫৫ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিশিষ্ট ব্যাংকার মরহুম কাজী গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। মা মরহুমা আফিফা খাতুন। তিনি ১৯৭০ সালে লালমাটিয়া গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭২ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে মানবিক শাখায় এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। যথাক্রমে ১৯৭৭ ও ১৯৭৯ সালে।
ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার নেশা ছিল, সেই থেকে লেখালেখির শুরু। তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। রেডিওর নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত। ১৯৯২ সালে বীনা মাহবুব নামে হারানো দিনের বাংলা গানের একক ক্যাসেট ও সিডি বের করেন। এছাড়া একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত থেকে বহুবার মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
পরিণত বয়সে জোহোরা জাবিন আবার লেখালেখির কথা ভাবতে থাকেন। সেই ভাবনা থেকেই নিবেদিত হয়েছে স্মৃতিচারণমূলক বই। ‘ফেলে আসা দিনগুলো’।
তাঁর স্বামী প্রকৌশলী মাহবুবুল করিম। তাঁরা দুই কন্যার জনক জননী।