তিনি আরো বলেন, রঞ্জনা শুধু গবেষক না, সৃজনশীল লেখকও। তিনি একাধারে কবি ও ঔপন্যাসিক। তার কবিতা ও উপন্যাস পড়ার সময় আমি অভিভূত হয়ে যাই। তিনি এক্ষেত্রে আলাদা করে পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য।
সভাপ্রধানের ভাষণে তাসমিমা হোসেন জানান, রঞ্জনা বিশ্বাস নতুন প্রজন্মের লেখক। ওর দেখার দৃষ্টিও অনন্য। তিনি বাংলাদেশের অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ইতিহাস ও সংষ্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘঠিয়ে দিচ্ছেন। একবিংশ শতকে এসে মানুষ হিসেবে সমাজের এই শ্রেণিভেদ ভেঙে দিতে চাই আমরা। রঞ্জনা লোকধর্ম ও লোকায়াত জীবন নিয়ে কাজ করে সেই বার্তা পৌছে দিয়েছেন আমাদের কাছে। অনন্যা কখনো বয়স দিয়ে মানুষের যোগ্যতা বিচার করে না। রঞ্জনাকে তাই পুরস্কৃত করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে অনন্যা।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে রঞ্জনা বলেন, ১৫ বছর আগে যে জীবনকে আমি অস্বীকার করতে চেয়েছিলাম আজ সেই জীবন অনন্যা স্বীকৃতি পাচ্ছে। এই বিষয়ে ঘোর আমার কাটছে না। আমি সকলকে বলতে চাই, ভালোবেসে শুধু জীবনকে উদযাপন করতে শেখো। যেসকল নারী জীবনের অর্থ বোঝেন না, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, জীবনে প্রয়োজনের জন্য বাঁচুন। সমাজের প্রতিটি শ্রেণিপেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ হিসেবে নিজেকে অতিক্রম করে যান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, দেশের প্রবন্ধ ও গবেষণা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রঞ্জনা বিশ্বাসকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি একইসঙ্গে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪। বেদে জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের লোক-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসাহিত্য তাঁর গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয়। ইতিপূর্বে রঞ্জনা তরুণ লেখক হিসেবে কালি ও কলম সাহিত্যপুরস্কার এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্যপুরস্কার অর্জন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে: বাংলাদেশের লোকধর্ম-১ম খণ্ড, বাংলাদেশের পালকি ও পালকিবাহক, বেদে জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রা, বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস, বেদে জনগোষ্টীর ভাষাঃ উৎস ও তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের বেদে জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, নারী পুরুষ সম্পর্ক: জেনেটিক প্রভাব, মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়- ১ম খণ্ড, লোকসংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল, লোকগানে বঙ্গবন্ধু, নারীপুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর কিশোরজীবন : আমাদের মহানায়ক, আমি মুজিব বলছি : অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সমাপ্ত অধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ : ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘সুভা’ ও ‘দালিয়া’, বিষ্যুৎবারের বারবেলা, জয়নাল বাদশা ও রাজপুত্র তাজেম, আয়নায় ভাঙতে থাকা চাঁদ, আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি।