দিলারা হাশেম একজন কথা সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী, নিউজকাস্টার ও অংকন শিল্পী ছিলেন সেই ষাট দশক থেকে। সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তী তাঁর সিনেমায় অভিনয় করার অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অপারগতা জানিয়েছিলেন । ১৯ মার্চ এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনাবসানে দেশে এবং প্রবাসে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তাঁর মতো এই বিশাল মানুষটি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী পাওয়ার পর এ পর্যন্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক লাভ করেননি বলে অনেকেই অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর মৃত্যূর পর ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে কেউ শোক জানাতে জাননি বলেও অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেন । শুক্রবার ২৫ মার্চ নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন মিলনায়তনে আয়োজিত হয় ‘স্মৃতিতে অমর দিলারা হাশেম’ শীর্ষক বিশেষ অনুস্ঠান। আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান রাইটার্স এন্ড জার্নালিস্টস ফোরাম। শুরুতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দু’জন কিংবদন্তী বেতার ও টিভি ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী ও রোকেয়া হায়দার। ইচ্ছে থাকলেও শারিরীক কারনে শেষ মুহুর্তে বক্তব্য রাখতে পারেননি আরেক দু’জন কিংবদন্তী মাসুমা খাতুন ও সরকার কবীরুদ্দিন । নিউ ইয়র্কের অনেক বিশিস্টজন , সাংবাদিক , লেখক ও মুলধারার রাজনীতিবিদ দিলারা হাশেমের বিশেষ প্রয়ানে শ্রদ্ধান্জলী জানাতে এই অনুস্ঠানে আসেন।
শিল্পী রুপা চৌধুরী ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রানে’ গানটি গেয়ে প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন এবং ২৬ মার্চের সম্মানে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। চার দশকের তাঁর অত্যন্ত স্নেহধন্য ও ঘনিস্ঠ সাংবাদিক লেখক আকবর হায়দার কিরন এই বিশেষ অনুস্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও উপস্থাপক । দিলারা হাশেমের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্রুভারাক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গেলো অগাস্টে তাঁর জন্মদিনে টেলিফোনে শেষ কথা হয় ও সাক্ষাত্কার নেন জনাব কিরন। এর আগে তিনি ভিওএ’র ৭৫ বর্ষপুর্তি অনুস্ঠানে এবং চার বছর আগে ভার্জিনিয়ার ফোবানায় সাক্ষাত্কারও নিয়েছিলেন তাঁর। দিলারা হাশেমের স্মৃতিতে এই বিশেষ আয়োজনে তাঁর জীবনের দিক নিয়ে আলোচিত হয় বক্তারা।
প্রবাসের সবচেয়ে বয়োজ্যেস্ঠ বিশিস্ট সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর সাথে কতো স্মৃতিময় উল্লেখ করে বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় একুশে ও স্বাধীনতা পেলে আমরাও কিযে খুশী হতাম। নিউ ইয়র্কের বই মেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সবে তাঁর বহুবার যোগদান এবং সম্মাননা পাওয়া অত্যন্ত স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে দিলারা হাশেম ও রোকেয়া হায়দার বইমেলায় একসাথে আসা সবার কাছে যেন বিশেষ আকর্ষন । দিলারা হাশেমের জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন সাংবাদিক ও লেখক মিনহাজ আহমেদ।অনেকেই সরকারের প্রতি দাবী জানান দিলারা হাসেমের মতো একজন বিশাল মানুষটির নামে যেন ঢাকায় একটি সড়ক নামকরন করা হয়।, অনুস্ঠানের অন্যান্যের ভেতর বক্তব্য রাখেন মুলধারার ডেমোক্রেট নেতা মোর্শেদ আলম, লেখক সাইদ তারেক, সিনিয়র সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ, দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, উদিচীর নেতা এম ই চৌধুরী শামীম, টিভি ব্যক্তিত্ব হাসানুজ্জামান সাকি, সংস্কৃতিজন গোপাল সান্যাল ও রিমন ইসলাম। অনুস্ঠানে আরও উপস্থিতদের ভেতর রয়েছেন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ডিআরইউ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মনওয়ারুল ইসলাম, লেখক শেলী জামান খান, লেখক সাংবাদিক মনিজা রহমান, শিল্পী জাহেদ শরীফ, সম্পাদক এমডি হামিদ, টিভি উপস্থাপক আইরিন রহমান, সাংবাদিক তফাজ্জল লিটন, বিশিস্ট ব্যাংকার রেশাদ খান, বাংলা টিভির মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন প্রমুখ।