ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এক আড়ম্বরপূর্ণ মনোজ্ঞ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫১তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করে। ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার পারানোয়া হ্রদ সংলগ্ন পোর্তো ভিত্তোরিয়া মিলনায়তনটি চার শতাধিক অতিথির উপস্থিতিতে জয় বাংলার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব-এশিয়া মার্সিয়া ডোনার আব্রিঊ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্রাজিল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ শতাধিক কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি এই সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রার উপর ভিত্তি করে উপস্থাপিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে সার্থকতার সাথে ব্রাজিলের সুধীজনের মাঝে তুলে ধরাতে আগত অতিথিরা তাদের প্রশংসা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেওয়ার জন্য এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন ভূমিকাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত ১৯৭১-এর গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহিদ, ২ লক্ষাধিক সম্ভ্রম-হারা মা বোনেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাসহ নিহত সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিস্তারিত বর্ণনা করে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের সাফল্য অনুষ্ঠানে সমাগত অতিথিবৃন্দের নিকট উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন যে আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ হলেও এর রয়েছে অমিত সম্ভবনা। এশিয়ার অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতি-বাংলাদেশ যেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যসম্পর্ক উন্নয়নে সফলতার পরিচয় রেখে চলেছে, ঠিক একইভাবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথেও শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক গড়ে তোলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় ব্রাজিলের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, কৃষি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে তিনি ব্রাজিল-বাংলাদেশ সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথি রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ডোনার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু ও শেষ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে ব্রাজিল তাঁর অন্যতম। দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিল বাংলাদেশে আবাসিক দূতাবাস স্থাপন করে। বিগত ৪৭ বছর ধরে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে। আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরো জোড়দার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পরিশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মার্সিয়া ব্রাজিলের জণগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জণগণ ও সরকারকে ৫১তম মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
দূতাবাস পরিবার এবং ব্রাসিলিয়ার শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল “Casa Azul”-এর শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থিত অতিথিবৃন্দ আনন্দের সাথে উপভোগ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সম্মানে ব্রাজিলের পারানা রাজ্যের বোটানিকাল উদ্যান বাংলাদেশের পতাকার লাল-সবুজ-এর একটি বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা প্রদর্শন করে।
ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এ অভূতপূর্ব আয়োজন ব্রাজিলের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিসরে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং সুদূর ব্রাজিলে ক্রমঅগ্রসরমান বাংলাদেশকে সুপরিচিত করা তথা ব্র্যাণ্ডিং বাংলাদেশ- প্রচারণার ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।