• রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
Headline
তানিয়া আফরিন পেলেন আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‘সাউথ এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আলোচনা সভা অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এম মুরশিদ উপস্থিত ছিলেন। BAMGLADESHI AMERICAN COMMUNITY CHANGEMAKERS দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করতে একমত ড. ইউনূস ও শাহবাজ শরিফ ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে যা বলেছে হোয়াইট হাউস ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বিমানবন্দরে ভিআইপি সার্ভিস দেব’ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জরুরি : ড. যশোদা জীবন দেবনাথ মাহবুব সিরাজ তুহিন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুশাসন, শিক্ষার প্রসার ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে : প্রীতি চক্রবর্তী

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের বিকাশে সহায়তা বাড়ানোর অভিমত বিশেষজ্ঞদের

Reporter Name / ৫১০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সফলতা ও গর্বের অন্যতম নিদর্শন ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পখাত। সরকারের সময়োপযোগী নীতি সহায়তায় এ খাতের সুনাম ও অবদান দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে বাংলাদেশ অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। তাই করোনা পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের বিকাশে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বাড়ানোর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ, অর্থনীতিবিদ এবং উদ্যোক্তা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত এক যুগে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি শিল্পখাতের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে। যার মূলে রয়েছে বর্তমান সরকারের গৃহীত শিল্পবান্ধব বিভিন্ন নীতিমালা, শতভাগ বিদু্যুতায়ন এবং এখাতের উদ্যোক্তাদের দেয়া নানান সুবিধা। সরকারের এসব শিল্পমুখী নীতি এবং উন্নয়নের ফলে দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। আগে এ খাত ছিল পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর। তখন রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক চাহিদা ছিল মাত্র ৩ লাখ ইউনিট। আর এ খাতে কর্মসংস্থান ছিল শ’ পাঁচেক মানুষের। এক যুগের ব্যবধানে সে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের। তিন লাখের জায়গায় রেফ্রিজারেটরের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষাধিক। এ খাতকে কেন্দ্র্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটেছে। যা সম্ভব হয়েছে এ খাতে স্থানীয় শিল্পের বিকাশের ফলে।

দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতের বিকাশের ফলে বিপুল পরিমাণ পণ্যের আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এ শিল্প হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। তৈরি পোশাকের পর এ খাতটিতে রপ্তানি আয়ের ভবিষ্যৎ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম কম্প্রেসর ও এর যন্ত্রাংশ, রেফ্র্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, হোম অ্যাপ্ল্যায়েন্স, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি। বাংলাদেশে তৈরি এসব পণ্য বিশ্ববাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যা দেশের রপ্তানি আয়ে অবদান রাখছে। পাশাপাশি শিল্পোন্নত বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্টরা এ খাতে সব ধরনের সুুবিধা দেয়ার পক্ষে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দেশীয় উৎপাদিত পণ্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা আরো অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোকে উৎসাহ দেওয়া দরকার। এর ফলে দেশে আমদানির ওপর চাপ কমবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, সরকার বিশ্বাস করে দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়তা দিলে এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। সুনির্দিষ্ট কোনো খাত নিয়ে এখনই অগ্রিম কিছু বলা হচ্ছে না, তবে এতটুকু বলতে পারি আগামী বাজেটও দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক বাজেট হতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, রপ্তানি টার্গেট করে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে ব্যাপক নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইনভার্টার এবং ফিক্সড স্পিড কম্প্র্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) মেধাসম্পদ (প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সফটওয়্যার লাইসেন্স), ৫৭টি দেশে ট্র্রেডমার্কসহ ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩টি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের যথা এসিসি, জানুুসি ইলেকট্রোমেকানিকা (জেম) এবং ভার্ডিকটার-এর স্বত্ব পেয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি এ উদ্যোগ নিয়েছে। যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, বিদু্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদন, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এ প্রসঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের শিল্প সহায়ক যে কোনো বিষয়েই সরকারের আগ্রহ রয়েছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন দেশীয় শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা নীতিগত বা কোনো রকম সহায়তা চাইলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন তারা।

এদিকে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। কিন্তু সরকারের গৃহীত সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি রয়েছে প্রবৃদ্ধির ধারায়। উন্নয়নের এ ধারা বজায় রাখতে দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি খাতে নীতি সহায়তা বাড়ানোর দাবি করেছেন উদ্যোক্তা সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ রেফ্র্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএমইএ) মহাসচিব জাহিদুল আলম বলেন, দেশের ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তি শিল্পখাত এ ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের কাঁচামাল এবং খুুচরা যন্ত্রাংশের দাম ব্যাপক বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পখাতে। ইতোমধ্যেই ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক সহায়তার প্রয়োজন। বর্তমানে সরকারের দেয়া সুবিধা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ছে। তা না হলে এসব পণ্যের দাম আরো বাড়বে। যা ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ শতভাগ বিদু্যুতায়নের আওতায় এসেছে। এর পুরো সুুফল পেতে প্রয়োজন বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার। 

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট শিল্পবান্ধব এবং কর্মসংস্থানবান্ধব। এই বাজেটে চেষ্টা করা হয়েছে জীবন-জীবিকার মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখে দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার। আগামী বাজেটেও বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যায়। সে হিসেবে দেশীর শিল্পের ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা রয়েছে, সেগুলোও অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প সহায়ক সুবিধাগুলো আরো কয়েক বছর থাকা ভালো হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে যে সুবিধা দিচ্ছে, এ খাতের উদ্যোক্তারা তার অনেক বেশি ফেরত দিচ্ছেন। এতে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ হচ্ছে, কর্মসংস্থান ও দেশীয় উৎপাদন বাড়ছে, আমদানি ব্যয় হ্র্রাস পাচ্ছে, বিপরীতে বাড়ছে রপ্তানি আয়। যা রাজস্ব খাতে অবদান রাখছে। তাই এ খাতে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত এবং তা বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category