আরিফুর রহমান; একজন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি-কানাডিয়ান ব্যবসায়িক নেতা, যাঁর জীবনযাত্রা স্বপ্ন ও কমিউনিটির সহায়তার শক্তিকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মানুষটি প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করে ২০০৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। তাঁর অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে গড়ে ওঠে একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক উদ্যোগ, যা শুধু তাঁর নিজের স্বপ্নকেই নয়, চারপাশের কমিউনিটিকেও শক্তিশালী করেছে। আরিফুর রহমান কানাডায় এসে প্রথমে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে নিজেই একটি হোম বিল্ডিং কোম্পানি এবং একটি হোটেল ব্যবসা শুরু করেন, যা আজ সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাসকাচুয়ান প্রদেশে শতাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আরিফুর রহমান প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোগে সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। উদ্যামী ব্যক্তিত্ব আরিফুর রহমান পি.ইঞ্জ. সম্প্রতি অর্থকণ্ঠকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এখানে তা উপস্থাপন করা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এনামুল হক এনাম
অর্থকণ্ঠ : আপনি কবে এবং কীভাবে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় আসার সিদ্ধান্ত নিলেন? দূর প্রবাসে কোন ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে নিজেকে একজন ব্যবসায়িক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন?
আরিফুর রহমান : আমি ২০০৫ সালে কানাডায় আসি, পেশাগত উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে। প্রকৌশলে ডিগ্রি নিয়ে কানাডায় পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ১০ বছর সময় লেগেছে। পরে আমি বুঝি আমার আসল আগ্রহ উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্যে। আমি নিজস্ব কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলাম এবং সেই ইচ্ছা থেকেই আমার ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু।
অর্থকণ্ঠ : আপনি পোস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। একজন সফল প্রকৌশলী থেকে আপনি কেন উদ্যোক্তায় পরিণত হলেন?
আরিফুর রহমান : প্রকৌশলী হিসেবে পেশা জীবনে সন্তুষ্ট থাকলেও, সবসময় আমার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা কাজ করত। স্বাধীনতা, উদ্ভাবন এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব তৈরির লক্ষ্যেই আমি ব্যবসা অঙ্গনে প্রবেশ করি।
অর্থকণ্ঠ : কানাডার মতো উন্নত রাষ্ট্রে আপনি একজন সফল বাংলাদেশি- কানাডিয়ান উদ্যোক্তা। সাসকাচুয়ানে হোম বিল্ডিং এবং হোটেল ব্যবসা গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
আরিফুর রহমান : ফাইন্যান্সিং নিশ্চিত করা, সরকারি নিয়মনীতি বোঝা এবং বাজারে সুনাম তৈরি করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কৌশলগত যোগাযোগ, ধৈর্য এবং মানসম্মত সেবার মধ্য দিয়ে আমি সফলতা অর্জন করি।
অর্থকণ্ঠ : আপনার ব্যবসা বাংলাদেশি- কানাডিয়ান কমিউনিটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোন ধরনের ভূমিকা রাখছে?
আরিফুর রহমান : আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার অনেকগুলো বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের জন্য। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মীবৃন্দ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছেন এবং কমিউনিটি শক্তিশালী হচ্ছে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি সাসকাচুয়ান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট। এই চেম্বারের মাধ্যমে অভিবাসী উদ্যোক্তাদের জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
আরিফুর রহমান : আমরা মেন্টরশিপ, নেটওয়ার্কিং এবং ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদান করি। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিগত সহায়তা এবং সরকারি সহযোগিতাও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা নিশ্চিত করি।
অর্থকণ্ঠ : অভিবাসী উদ্যোক্তা এবং সরকারি সংস্থার মধ্যে আপনার কোম্পানিগুলোর ভূমিকা কী?
আরিফুর রহমান : আমরা একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করি, যাতে অভিবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সরকারি সহায়তা, অর্থায়ন এবং নীতিগত দিকনির্দেশনা পেতে পারেন।
অর্থকণ্ঠ : এনআরবি উদ্যোক্তারা কানাডায় কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এবং কীভাবে তা অতিক্রম করতে পারেন?
আরিফুর রহমান : মূলত মূলধনের অভাব, স্থানীয় নেটওয়ার্কের ঘাটতি এবং নিয়মকানুনের জটিলতা। সমাধান হচ্ছে- নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, মেন্টর নেওয়া এবং আমাদের মতো সংস্থার সহায়তা গ্রহণ।
অর্থকণ্ঠ : তরুণ বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী যারা কানাডায় ব্যবসা শুরু করতে চায়?
আরিফুর রহমান : ধৈর্য ধরুন, ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন, পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন এবং সর্বোপরি বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
অর্থকণ্ঠ : ভবিষ্যতের প্রকল্প ও কমিউনিটি উদ্যোগ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আরিফুর রহমান : হোম বিল্ডিং ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ, আতিথেয়তা খাতে নতুন বিনিয়োগ এবং অভিবাসী উদ্যোক্তা- ব্যবসায়ীদের জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া।
অর্থকণ্ঠ : আপনার নেতৃত্বের দর্শন ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধ কী?
আরিফুর রহমান : সততা, সহনশীলতা এবং কমিউনিটিকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার আমার নেতৃত্বের ভিত্তি। আমি মনে করি, সাফল্য মানে কেবল নিজের উন্নতি নয়, বরং অন্যদেরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
এই যাত্রায় আমাকে সহায়তা করেছেন- আমার পরিবার, ব্যবসায়িক অংশীদার, সহকর্মী এবং বন্ধুরা। তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ, আন্তরিক সহযোগিতা আমার এগিয়ে চলার পাথেয়। তাঁদের ছাড়া আজকের আমি হয়ে ওঠা সম্ভব হতো না।