অ্যাওয়ার্ড পেলেন নিউ ইয়র্কের শেফ খলিলুর রহমান
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেলেন নিউ ইয়র্ক সিটির খলিল বিরিয়ানী হাউসের জনপ্রিয় শেফ খলিলুর রহমান। গত ১৯ মার্চ নিউ ইয়র্কের ইউএন প্লাজায় জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র মিশনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে তার হাতে সার্টিফিকেট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত আমেরিকান কর্মকর্তা ড. সীমা কাতনায়া। অনুষ্ঠানে ড. কাতনায়া বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক। তার হাতে এটি তুলে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।’
যুক্তরাষ্ট্রে জনসমাজের অগ্রযাত্রা এবং কর্মপ্রবাহে বৈশিষ্ট্যময় অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এমন সম্মাননা প্রদান করেন।
যুক্তরাষ্ট্র্রের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় সদা বিনয়ী শেফ খলিলুর রহমান কৃতজ্ঞতার সাথে তার সকল অগ্রযাত্রায় কমিউনিটির সকল স্তরের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসার কথা বিশেষ করে বাংলা সংবাদ মাধ্যমসমূহের নিরন্তর সমর্থন ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। সাফল্য তার একার নয়, সম্মান যা পেয়েছেন তাও তার একার নয়, এটি বাংলাদেশের সম্মান, সকল বাংলাদেশির সম্মান বলেই তিনি মনে করেন।
২০০৮ সালে ডাইভার্সিটি ভিসায় (ডিভি) যুক্তরাষ্ট্রে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর খলিলুর রহমান আগ্রহী হয়ে ওঠেন রন্ধনশিল্পে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে। নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব কুলিনারি এডুকেশনে চার বছরের পাঠ চুকিয়ে একাধিক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও আগ্রহী ছিলেন নিজের মতো করে খাবার রান্না ও পরিবেশন করায়।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার এলাকায় খুবই ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু খলিল বিরিয়ানী হাউজের। তারপর ধীরে ধীরে একে একে খলিল হালাল চায়নিজ, খলিল পিৎজা অ্যান্ড গ্রীল, খলিল সুইটস, খলিল সুপার মার্কেট এর মাধ্যমে গড়ে তোলেন কমিউনিটির সর্বমহলে পরিচিত ও সমাদৃত ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড যা বর্তমানে শতাধিক বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে কমিউনিটির সেবায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে।
সেই সাথে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন সুস্বাদু সব দেশীয় খাবারকে আরো বেশি মুখরোচক করার নিত্য প্রয়াসে। কেবল বাংলাদেশি গ্রাহকরাই নন, শেফ খলিলের খাবার এখন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমেরিকানদের কাছেও। ২০২১ সালে নভেম্বরের নির্বাচনের পরপরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামে সুস্বাদু ‘বাইডেন বিরিয়ানী’ চালু করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেন; তার আগে থেকেই আমেরিকার সবচাইতে আলোচিত কংগ্রেস-ওম্যান আলেকজান্দ্র্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এর খুবই প্রিয় শেফ খলিলুর রহমান।
মাত্র ৫ বছরে এমন সাফল্য আসবে ভাবনায় ছিল না শেফ খলিলের, তবে আশাবাদী ছিলেন সবসময়। যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে ভেবে-চিন্তে অগ্রসর হওয়াটাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি।
প্রবাসে বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পকে এক নতুন মাত্রায় টেনে তুলেছেন পরিশ্রমী ও খাবারের মানের সাথে আপসহীন শেফ খলিলুর রহমান। তার স্বপ্ন এখন সুদূর প্রসারিত। তার হাতের রুচিসম্মত ও সুস্বাদু সব রান্নার মশলার মিশ্রণ প্রায় সম্পন্ন করে এনেছেন যার মাধ্যমে যে কেউ একটু আগ্রহী হলেই খুলতে পারবেন খলিল বিরিয়ানির মতো রেস্তোরাঁ।
পাশাপাশি শুরু করেছেন খলিল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশেও অনেক জনহিতকর কাজে সম্পৃক্ত হওয়া। শুধু তাই নয়, খলিল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নবাগতদের রেস্টুুুরেন্টের বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকুুরির জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। তার নিজের জীবনকেই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নতুন ও তুলনামূলক বৈরী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে তিনি যেভাবে সাফল্যের পথে এগোচ্ছেন, নবাগতরাও যেন তা থেকে সাহস পায়, অনুপ্রেরণা প্রায়, সেটিই তার কাম্য। তার মতে, সাফল্য অর্জনে সাধনা এবং পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।