রাজধানীর যানজট নিরসনে চার রুটে পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে এই পাতাল রেল চালু করবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সম্প্রতি ঢাকা সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের এক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে রাজধানীর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বেমানান। কারণ পরিকল্পনা ছাড়াই এ শহর গড়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় পাতাল রেল নির্মাণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরের যে অবস্থাা এতে করে সাবওয়ে নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। আড়াই কোটি মানুষের এই নগরীতে সাবওয়ে নির্মাণ একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারে মন্ত্রী জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীর মোট ৪টি রুটে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৩শ’ ৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার। আর ২০৪০ সালের মধ্যে আরো ৪টি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে আরো ৫টি রুটে সাবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত সাবওয়ের চারটি রুট হচ্ছে- রুট-১ কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল থেকে টঙ্গী জংশন (ঝিলমিল, তেঘরিয়া বাজার, মুসলিমনগর, সদরঘাট, গুলিস্তান, কাকরাইল, হাতির ঝিল, বিজিপ্রেস, রজনীগন্ধা মার্কেট, ভাষানটেক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কালশী, উত্তরা সেক্টর-১৭, নর্থ বাউনিয়া। উত্তরা সেক্টর-১৪, উত্তরা সেক্টর-১০, মাছিমপুর, টঙ্গী জংশন)।
রুট ২- গাবতলী থেকে ভেলাবো ইউনিয়ন (গাবতলী, গোলারটেক, তুরাগ সিটি, জাতীয় চিড়িয়াখানা, পূর্বাচল। গাবতলি-ভোলাব ইউনিয়ন সেক্টর-১১, পূর্বাচল সেক্টর-২১, পূর্বাচল সেক্টর ইস্ট, পূর্বাচল মালুম সিটি, ভেলাবো ইউনিয়ন)। রুট-৩ কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর (কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ, চকবাজার, নয়া বাজার, কেরানীগঞ্জ-সূত্রাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, সোনাপুর)।
রুট-৪ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়া মডেল টাউন ইস্ট, উত্তরা সেক্টর-১৬, উত্তরা নর্থ, আজমপুর কাঁচাবাজার, শাহ কবীর মাজার নর্থ, আফতাবনগর নর্থ, ওয়েস্ট নন্দীপাড়া, গ্রিন মডেল টাউন, মাতুয়াইল রোড, নন্দিপাড়া দক্ষিণ, বরুয়া সাউথ, বসুন্ধরা সাউথ, সানভ্যালি উত্তরপাড়া, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, ইস্ট মোহাম্মদবাগ, ফতুল্লা স্টেশন, ডিসি অফিস নিউ কোর্ট, নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া)। সাবওয়ের জন্য নির্মিত টানেল ভূপৃষ্ঠ হতে আনুমানিক ২৫ হতে ৭০ মিটার নিচ দিয়ে যাওয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণ নির্মাণজনিত কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না বলেও সেমিনারে জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, সাবওয়ে নির্মাণের ফলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৪০ লাখ মানুষ মাটির নিচে স্থানান্তর হবে এবং মাটির উপরিভাগে জনজট মুক্ত থাকবে। সাবওয়ে নির্মাণ ব্যয়বহুল হলেও ঢাকা শহরকে কর্মমুখী রাখতে সাবওয়ে ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। মন্ত্রী জানান, ২৩৮ কিলোমিটার বা সমপরিমাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করতে হবে মর্মে সিদ্বান্ত গৃহীত হয়। অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী ২৩৮ (দুইশ আটত্রিশ) কিলোমিটার নেটওয়ার্কের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ৯০ কিলোমিটারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে সাপ্লিমিনটারি কন্টাক্ট অ্যাগরিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। যার সংশোধিত চুক্তিমূল্য ৩১৭.৫০ কোটি টাকা।