পর্তুগালের সঙ্গে আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
নয় বছর আগে বাংলাদেশ লিসবনে তার দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং পর্তুগাল এখন বাংলাদেশেও একই কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান অর্থকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
পর্তুগাল ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আধুনিক সময়ের আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। পর্তুগাল যখন আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে উপনিবেশ করার প্রক্রিয়ায় ছিল, তখনই দুই দেশের মধ্যে একটি অ-ঔপনিবেশিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বহু শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ব্যবসা করে। পর্তুগাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত ছিল এবং ৭০ এর দশকে তারা পর্তুগালে ফিরে আসে। নয় বছর আগে বাংলাদেশ পর্তুগালে তার আবাসিক কূটনৈতিক মিশন প্রতিষ্ঠা করেছে।
তারিক আহসান বিশ্বাস করেন যে, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে, যেমন পর্তুগালের দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করছে। স্বাধীনতার পর, ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশ একটি নিম্ন আয়ের দেশ ছিল, কিন্তু এখন এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে গত দশকে তার জিডিপি তিনগুণ দেখেছে। পর্তুগালে দূতাবাস স্থাপনের কারণ হলো, তারিক আহসানের মতে, এটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, পর্তুগাল বাংলাদেশ থেকে উপকৃত হতে পারে কারণ বাংলাদেশের লোকজনের বাংলাদেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি, প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটনের জন্য এবং বিদেশে লেখাপড়া করতে দেশ ছাড়ছেন।
তারিক আহসান বলেন, পর্তুগাল এমন একটি দেশ যেখানে আসতে বাংলাদেশের লোকজনের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। পর্তুগালের আবহাওয়া, সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের লোকজনকে আকর্ষণ করে। শিক্ষার্থীরা, পর্তুগালকে লেখাপড়া করতে বেছে নেয়, কারণ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে টিউশন ফি কম।
যোগ্য বাংলাদেশিরা কাজ করার জন্য পর্তুগালে আসতে আগ্রহী, তাই রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেছেন তারা পর্তুগালে অভিবাসনের প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য শ্রম আইন গতিশীল করতে পর্তুগালের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান।
রাষ্ট্র্রদূত পর্তুগালকে অভিবাসী-বান্ধব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। পর্তুগালে আসা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে পর্তুগালের রাজনৈতিক দলগুলোর দারুণ আগ্র্রহ পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশিরা কখনই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না এবং তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারিক আহসান বলেন, পর্তুগালে এখনও বাংলাদেশের ভালো রেকর্ড রয়েছে।
অর্থনৈতিক শক্তি
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্র্রোভ বন রয়েছে বাংলাদেশে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। পাকিস্তানকে হটিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। এ সময়কালে বাংলাদেশিরা শোষিত হয়েছিল এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, তবে জনগণের স্থিতিস্থাপকতা দেশটির জন্য স্বাধীনতার পরে, দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হওয়া সম্ভব হয়েছে। বাংলা বাংলাদেশের কথিত ভাষা, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষাগুলোর একটি।
সাক্ষাৎকারের শেষ বিষয় হিসেবে, রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেছে, যার সংখ্যা ১.১ মিলিয়ন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন অন্য কোনো দেশ এখনো তাদের নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সাল থেকে একটি স্বাধীন দেশ এবং ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা বসবাস করছে। অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক