পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক সাড়ে ৫ বছর আগেই খুলে দেয়া হয়। ১২ দশমিক ১২ কিলোমিটার ছয় লেনের সড়কটি নির্মাণ করতে সময় গেছে চার বছর। এই সড়ক দুটি নির্মাণে কাজ করেছেন ৫ হাজার শ্রমিক ও আড়াইশ’ বাংলাদেশি প্রকৌশলী। ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সংযোগ সড়কের উদ্বোধন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করে বাংলাদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবদুল মোনেম ও এইচসিএমজেবি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরাপত্তা ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু মোট ৫ ভাগে কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতু, নদীশাসন, দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন। এর মধ্যে ছয় লেনের সংযোগ সড়কের ২০১৭ সালে কাজ শেষ হয়েছে। ছয় লেনের মধ্যে চার লেন মহাসড়ক ও দুই লেন স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য। প্রকল্পের সার্ভিস এলাকা ও সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ একইসঙ্গে শেষ হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য সাড়ে ৫ বছর আগেই ফেরি খুলে দেয়া হয়।’ দেশি প্রকৌশলী ও ঠিকাদার দিয়ে এই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কে ৮টি আন্ডারপাস রয়েছে। আন্ডারপাসের সড়কের উচ্চতা ৬ দশমিক ৫ মিটার। এছাড়া ১ কিলোমিটার দৈর্র্ঘ্যরে ৫টি ছোট সেতু ও ২০টি কালভার্ট রয়েছে। এই সঙ্গে ৩টি সার্ভিস এরিয়া ও দুটি টোলপ্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ দশমিক ১২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৬২ কিলোমিটার। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। বর্তমানে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপারের জন্য সংযোগ সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সড়কটি দেশের যেকোনো সড়কপথের চেয়ে মসৃণ, ওপরের শক্তিশালী পুরু স্তর ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। দেশে এই প্রথম কোনো সড়কে সাড়ে ৬ ইঞ্চি কার্পেটিং করা হয়েছে। সেতু চালুর আগে আরও দুই ইঞ্চি কার্পেটিং করা হয়েছে এই সড়কে। এর ফলে সড়কে পানি প্রবেশ করতে পারবে না। সেতু চালুর পর পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত এ সড়কে কোন মেরামত ছাড়াই যান চলাচল করবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
সরেজমিন সংযোগ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর দুই পাড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদেনীমন্ডল ও কুমারভোগ দুটি ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেড় কিলোমিটার সংযোগ সড়ক।
এছাড়া শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার নাওডোবা ইউনিয়ন থেকে মাদারীপুরের পাঁচ্চর পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৯ কিলোমিটার সড়কই জাজিরা অংশে পড়েছে। বাকি দুই কিলোমিটার সড়ক মাওয়া অংশে পড়েছে। জাজিরা অংশের সড়কটি সমতল থেকে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার উচ্চতায় তৈরি করা হয়েছে। আর রাস্তার মাঝখানে ফাঁকা রাখা হয়েছে এমন পরিমাণ জায়গা, যেখানে ভবিষ্যতে ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের পিয়ার তোলা যাবে। সড়কটির প্রতিটি লেন ১২ ফুট প্রশস্ত।
এছাড়া দ্রুততগামী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন না হয় সেজন্য দু’পাশে স্থানীয় ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য এসব আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান সংশি¬ষ্ট প্রকৌশলীরা। এছাড়া সড়কের পাশে দেড় মিটার শোল্ডার নির্মাণ হয়েছে। চলতি পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে পার্কিংয়ের জন্য এই দেড় মিটার অতিরিক্ত রাখা হয়েছে বলে সংশি¬ষ্ট প্রকৌশলীরা জানান।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সংযোগ সড়কের স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর। তবে ২০-৩০ বছরের ব্যবধানে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সংযোগ সড়কের পুরুত্ব ৮১০ মিলিমিটার। চার লেন সড়কটির মধ্যস্থলে আছে বিভাজক। প্রতিটি লেন ৩ দশমিক ৬৫ মিটার বা ১২ ফুট প্রশস্ত।
জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর। প্রকল্পের চুক্তি মূল্য ১ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি। প্রকল্পের চুক্তি মূল্য ছিল ১৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স আবদুল মোনেম ও এইচসিএমজেবি।
এ বিষয়ে মেসার্স আবদুল মোনেমের নির্মাণ পরিচালক প্রকৌশলী আবিদ হাবিব বলেন, চুক্তি অনুযায়ী চার বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। গত সাড়ে ৫ বছর যাবত যানবাহন চলাচল করছে কিন্তু কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। দেশি শ্রমিক ও প্রকৌশলী দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৫-১০ বছর পর সড়কটি তদরকি করা হয় তাহলে ১০০ বছরেও কিছুু হবে না বলে জানান তিনি।