দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে কাতার। বর্তমান ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন দিচ্ছে, আরও ২ মিলিয়ন টন বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম সম্প্রতি কাতার সফর করেছেন। এলএনজি রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে কাতার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, কাতারের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে ১ দমমিক ৮ মিলিয়ন টনের নিচে হবে না, আবার ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনের উপরে যাবে না। বিশ্বব্যাপী এলএনজি চাহিদা ও দাম ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যেও কাতার সর্বোচ্চ পরিমাণে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। আমরা তাদের কাছে সরবরাহ বৃদ্ধির আরও প্রস্তাব দিলে সায় পাওয়া গেছে।
কাতার ২০২৫ সাল থেকে বর্ধিত এলএনজি সরবরাহ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে কি পরিমাণ দিতে পারবে সে বিষয়ে এখনই কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দামের বিষয়ে এখনও কোনো আলাপ হয়নি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন, ওমান থেকে ১ মিলিয়ন টন আমদানি করা হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে।
নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের দু’টি ভাসমান টার্মিনাল ও পুনঃগ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) রয়েছে। এ দু’টির দৈনিক সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ ব্যবহার করা যাবে। কাতার থেকে আরও ২ মিলিয়ন টন (বছরে) যুক্ত হলেও সমস্যা হবে না। আমাদের দুটি এফএসআরইউ দিয়ে বছরে ৬ মিলিয়ন টন পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া আরও একটি এফএসআরইউ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সামিট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তৃতীয় এফএসআরইউ হলে দৈনিক ১৫শ’ মিলিয়ন আমদানির সক্ষমতা হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এলএনজি আমদানির পাশাপাশি দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম জোরদার করেছি। আপনারা দেখেছেন, ভোলায় (টাগবি), শ্রীকাইল, বিবিয়ানা ও সেমুতাংয়ে কূপ খননের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই শরীয়তপুরে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু হবে। আমরা অনেক কাজ করার সুবাদে জাইকার প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্যাস পাচ্ছি। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল ২০২২ সালে বাংলাদেশের দেশীয় উৎসের গ্যাস উৎপাদন ২ হাজারের নিচে নেমে আসবে। আমরা এখন প্রায় ২৪শ’ মতো উৎপাদন করছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভার রয়েছে। এতে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে যদি দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তাহলে গ্যাসের দাম বাড়বে না। তবে দেশীয় উৎসের চেয়ে আমদানির অনুপাত বেড়ে গেলে দাম বৃদ্ধির শঙ্কা থাকে। আমরা চেষ্টা করছি ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার বিষয়ে। সিএনজি করে আনা যায় কিনা সে বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মডেল পিএসসি (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) সংশোধন করা হচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই বিডিং রাউন্ডে যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া স্থলভাগেও অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
দেশে গ্যাস সংকট চলছে, স্পর্ট মার্কেট থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়ে কোনো ভাবনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মার্কেট পর্যবেক্ষণ করছি, দাম কমে আসলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শুধু বাংলাদেশ নয় অনেক দেশই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে।
বৈশ্বিক যে সংকট চলছে আমরা তার বাইরে নেই। আমরা সিস্টেম লস কমিয়ে ঘাটতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা ডিজাইন পরিবর্তনের চিন্তা করছি, অবৈধ সংযোগ পাওয়া গেলে শুধু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেই ফিরে আসা হবে না। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের জেলে পাঠানো হবে।