কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায় (এসএমই) লেনদেন করতে শেয়ারবাজারে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।
এসএমইতে লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ সীমা বাড়িয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর নতুন আদেশ জারি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলেই এসএমইতে লেনদেন করা যেতো।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ আদেশে সই করেছেন।
আদেশপত্রে বলা হয়েছে, এসএমইতে লেনদেনের যোগ্য হতে শেয়ারবাজারের যেকোনো প্ল্যাটফর্মে (মূল বা এসএমই মার্কেট) ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
আগে যারা ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে এসএমইতে লেনদেন করার যোগ্য হয়েছেন, তাদেরও সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকায় নিয়ে যেতে হবে। তবে তারা এ অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য আরও তিন মাস সময় পাবেন।
যারা বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকায় নিয়ে যেতে পারবেন না, তারা শুধু এসএমইতে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন, কিনতে পারবেন না।
৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগের ভিত্তিতে প্রতি প্রান্তিকে এসএমইতে লেনদেনের যোগ্য করতে বিনিয়োগকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনা খরচে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য প্রতি প্রান্তিকে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) বা ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) বিনিয়োগকারীর বিস্তারিত তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেবে।
এর আগে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনে গতি আনতে শেয়ারবাজারে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলেই যেকোনো বিনিয়োগকারীকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের সুযোগ দেয় বিএসইসি।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার আগে শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করার সুযোগ ছিল।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে যেকোনো বিনিয়োগকারী কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবেন। আর নিবন্ধিত বিনিয়োগকারীরা এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন করতে পারবেন।
কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে নিবন্ধন নিতে বিনিয়োগকারীদের কোনো চার্জ দিতে হবে না। তবে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজের যে কমিশন আছে তা দিতে হবে।
এরপর ২৮ মার্চ এসএমই নিয়ে একটি নির্দেশনা দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই’র এ নির্দেশনায় বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে দেবে।
এর আগে শেয়ারবাজারে এসএমইতে লেনদেনের যোগ্য হতে ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে রাখা অনলাইন ফর্ম পূরণ করে মেইল করতে হতো। এরপরে ডিএসই ওই ফরম যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিতো।
এসএমই নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসই থেকে এমন নির্দেশনা আসার পর এ প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার লেনদেনে নতুন গতি আসে। হু হু করে বাড়তে থাকে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম।
শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন হওয়া শেয়ারের দাম বৃদ্ধি বা কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন করে বিএসইসি।
আগে এসএমই প্ল্যাটফর্মের কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারতো, যেটা ১০ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ করা হয়।
বিভিন্ন পক্ষের দাবির কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পানির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রণয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধিতে সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ডিএসইর স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসএমই প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়।