আব্রাহাম লিংকন
আলো ঝলমল বিশাল চত্তর। নিউইয়র্ক সিটির ৪২ স্ট্রিট এর নামই টাইমস স্কয়ার। ত্রিকোণাকৃতি রাস্তা। এর এক মাথায় টাইমস বিল্ডিং। চারদিকের মূল সড়ক ও গলিপথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গগণভেদী ইমারত গুলোর গা থেকে ছিটকে আসা বাহারী আলোর ঝলকে ঝকমক করা উঠোন যেন এটি। কিছুক্ষণ পর পর বদলি হয়ে আসা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন গুলো নতুন মাত্রা যোগায়। টাইমস স্কয়ার প্রতিদিন পরিভ্রমণ করে দেশ বিদেশের লাখো মানুষ।
এখানে একটি ভবনের নাম টাইমস বিল্ডিং। সেই টাইমস বিল্ডিংয়ের সামনে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হয় নতুন বছর বরণের জন্য। এখানে নববর্ষের উৎসব হয়। এই উৎসবের মূল উপভোগ্য বিষয় হচ্ছে টাইমস বিল্ডিংয়ের চূড়া থেকে রাত ০০১ সেকেন্ডে বল ড্রপ হওয়া। এটি দেখতেই ঐ রাতে ১০ লক্ষের অধিক মানুষ দেশ বিদেশ থেকে সেখানে সমবেত হন। ১৯০৭ এর ৩১ ডিসেম্বর থেকে বল ড্রপ অনুষ্ঠান টাইমস স্কয়ার প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রযুক্তির সুবাদে ৩১ ডিসেম্বরের বল ড্রপ অনুষ্ঠানটি বিশ্বজনিন অনুষ্ঠানেরও মর্যাদা পেয়েছে ।
আমরা অবগত আছি ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। চীন ও আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করে। মহাশক্তি দ্বয় পাকিস্তানের পক্ষালম্বন না করলে হয়তো আমাদের প্রাণহানী কম হতো, আরো স্বল্প সময়ে বিজয় অর্জিত হতো। মার্কিন সরকার সেদিন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকলেও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে মার্কিন জনগণ মাঠে নামেন। তাঁরা আওয়াজ তুলেন মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে। শুধু তাই নয়, ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রায় কোটি শরণার্থীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন মার্কিন জনগণ। সেকালে মার্কিন মুল্লকে পূর্ব পাকিস্তানের খুব একটা বাঙালির বাস ছিলো না। যতটুকু ছিলো তার বড় অংশই ভারতীয় বাঙালি।
বাঙালির কৃতি মণিষী পণ্ডিত রবি শংকরের নেতৃত্বে টাইমস স্কয়ারের লাগোয়া মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে লাখো মানুষের সামনে বিশ্ব বিখ্যাত জর্জ হ্যারিসন গেয়ে উঠেছিলেন “বাংলাদেশ বাংলাদেশ”। এই শব্দে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া লাখো লাখো করতালির মুহুমুহ শব্দে আকাশ বাতাস মাতাল হয়েছিলো সেদিন। লাখে জনতার সমাবেশ টাইমস স্কয়ার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিন।
এখানে এসে মনে হলো- আমিও যেন সেই শব্দের রেশ শুনতে পাচ্ছি। এই টাইম স্কোয়ার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরই অঙ্গ।
শুধু তাই নয় ১৯৬১ সালের ৭ মে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশত বার্ষিকী ছিলো। সেবার বিশ্ব কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ এক দিনের জন্য টাইম স্কয়ারের নাম রাখেন ” টাগোর স্কয়ার”। উল্লেখ্য বিশ্ব কবি তাঁর বিদেশ জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় আমেরিকায় অতিবাহিত করেন। ১৯১২ সাল থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে তিনি মোট পাঁচবার আমেরিকায় আসেন। এই পাঁচবারে তিনি ১৭ মাস আমেরিকায় ছিলেন। সঙ্গত কারনে তিনি মিশেছিলেন এই সমাজ ও নাগরিক জীবনের সাথে। সে কথা আমেরিকানরা ভুলেনি। শ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন নামকরণের মাধ্যমে।
গত সময়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এই চত্ত্বরেই বঙ্গবন্ধুর ডিজিটাল প্রোট্টেট হয়েছিলো।
এক কথায় বাঙালির নানা অর্জনের সাথে টাইমস স্কয়ারের নাম গভীর ভাবে জড়িত।
যারা নিউইয়র্কে আসবেন তারা যেন ক্ষণকালের জন্য হলেও এই টাইমস স্কয়ার পরিভ্রমণ করেন। এখানে বহুমুখি সংস্কৃতির উপস্থাপন দেখতে পাবেন। একটু গভীর মনোযোগে অতীতে ফিরতে পারলে দেখবেন — শত কোলাহল ও শব্দ অতিক্রম করে আপন কানে বেজে উঠবে পণ্ডিত রবি শংকরের সেতারের আকুল করা সুর আর জর্জ হ্যারিসনের সেই বিখ্যাত গান-
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ।