জাফর আলম, কক্সবাজার
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হোয়াইক্যং রেঞ্জের শামলাপুর, মনখালী বনবিটের সুফল প্রকল্পের বনায়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে হোয়াইক্যং রেঞ্জের শামলাপুর, মনখালী,হোয়াইক্যং বিটের ২০২০-২০২১ সালের সুফল প্রকল্পের বনভূমির বনায়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক।শামলাপুর বিট কর্মকর্তা কেবিএম ফেরদৌস জানান,সুফল প্রকল্পের আওতায় বনভুমিতে মিক্সড প্ল্যান্টেশন উইথ স্লো গ্রোয়িং এবং দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষের বনায়ন করা হয়েছে।চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক এসব বনায়ন ও বৃক্ষের বৃদ্ধিসহ বনায়নের
বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।এই সময় চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম,এসিএফ (দক্ষিণ) শহিদুল ইসলাম, হোয়াইক্যং রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) তারেক রহমান, শামলাপুর বিট কর্মকর্তা কেবিএম ফেরদৌস, মনখালী বিট কর্মকর্তা শিমুল কান্তি নাথ।এছাড়াও বনবিভাগের স্টাফগন উপস্থিত ছিলেন।জানা গেছে,কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হোয়াইক্যং রেঞ্জের টেকনাফ শামলাপুর- উখিয়ার মনখালী বনবিটের পাহাড়ের দিকে তাকালে বড় বড় গাছে ঠাসা জঙ্গল চোখে পড়ত। এখানে শিয়াল, বানর, হনুমান, হরিণ, বন মোরগ, হাতি, চিতা ও মেছো বাঘসহ নানা বন্য প্রাণী বিচরণ করতো। অনেক সময় এসব প্রাণী পাহড়ের
নিকটবর্তী লোকালয়ে এসে পড়ত। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে হঠাৎ নির্বিচারে হত্যা করা হয় দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিশালাকার এ বৃক্ষরাজি।অল্প সময়ে পাহাড় থেকে পাহাড় বৃক্ষ উজাড় হয়ে পরিণত হয় ন্যাড়া ভূমিতে। আবাস স্থল হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় নানা বন্যপ্রাণী। এরপর দখলদাররা পাহাড় গুলোকে দখল করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পাহাড় গুলো পরিণত হয় ব্যক্তি দখলদারিত্ব ভূমিতে। পরে বনকর্মীরা তাদের বুঝাতে তৎপর হয়ে উঠে যে, শান্তিতে বাঁচতে হলে প্রয়োজন সবুজের ছায়া। তাই বন বিভাগের সঙ্গে এতাত্ম হয়ে পাহারা বসানো হয় গাছ বাঁচাতে। ফলে ন্যাড়া পাহাড়ে আবারও হাতছানি দিচ্ছে সবুজের সমারোহ বৃক্ষরাজি। শামলাপুর বিট কর্মকর্তা কেবিএম ফেরদৌস ও মনখালী বিট কর্মকর্তা শিমূল নাথের সহায়তায় বন ভূমিতে গড়ে উঠেছে নীরব সবুজ বিপ্লব। বনভুমিকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। যতদুর চোখ যায়-সবুজের সমারোহে ভরে গেছে শামলাপুরের দখলদারদের ন্যাড়া পাহাড় গুলো। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল এই পাহাড়গুলো। ভূমিদস্যুদের
বিরুদ্ধে অভিযান করে পাহাড় গুলো দখল মুক্ত করে গড়ে তোলা হয় সুফল বাগান। এই সুফল বাগানের সবুজের সমারোহ এখন হাতছানি দিকে ডাকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা।শামলাপুর বিট কর্মকর্তা কেবিএম ফেরদৌস আরও বলেন, এলাকার লোকজন যদি সচেতন হয়, তাহলে ন্যাড়া পাহাড় গুলো সবুজের সমারোহ করা সম্ভব। বন ও বনভূমি রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মনখালী বিট কর্মকর্তা শিমূল নাথ বলেন, পাহাড় গুলো যেখানে ধূ-ধূ মরুভূমি ছিল, সেখানে বর্তমানে সবুজ বনে পরিনতি হয়েছে। স্থানীয়রা আরও সচেতন হলে পাহাড় রক্ষা এবং ন্যাড়া পাহাড়সমুহ আরও সবুজ বনে পরিনতি হবে বলে জানান তিনি।হোয়াইক্যং রেঞ্জ অফিসার (এসিএফ) তারেক রহমান জানিয়েছেন, এক সময় দখলদারদের দখলে ছিলো বনবিভাগের পাহাড় গুলো।তাদের উচ্ছেদ করে সুফল বাগান করেছি। এলাকার সকলে সচেতন হলে এই বাগান সবুজের সমারোহ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।কক্সবাজার দক্ষিণের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শহিদুল ইসলাম জানান, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ন্যাড়া পাহাড় গুলোতে সুফল বাগান করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করেছি। স্থানীয় সকলে সচেতন হলে পাহাড় গুলো রক্ষা এবং ন্যাড়া পাহাড় গুলো আরও সবুজের সমারোহ হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।