শেলী জামান খান
সতেরো বছর পর আবার তোমাকে দেখলাম।
সময়ের হিসেবে সতেরো বছর অনেকটা সময়।
আমিরাতের বিমানটি যখন ঢাকার মাটি স্পর্শ করল,
আমার বুকের গহীনে প্রজাপতির নাচ শুরু হয়েছিল।
পাখা ঝাপটাচ্ছিল এক নস্টালজিক প্রজাপতি!
বহুদিন পর দুচোখ মেলে ঢাকাকে দেখলাম।
আমার প্রিয়তম শহর,
আমার একসময়ের ভালোবাসা!
বললাম, কেমন আছ, ‘তিলোত্তমা’?
একদার সেই তিলোত্তমা সহসাই তার বুকের আঁচল সরিয়ে দিল।
তার বুক জুড়ে রেল লাইন বসছে,
চারিদিকে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণের কাজ।
গাছের সবুজ পাতাগুলো সব বিবর্ণ, ধূলিধুষরিত।
তবুও তার তপ্ত মাটি, পলিউশন ক্লিস্ট হাওয়া আমায় রোমান্চিত করল।
আমি যখনই নিউ ইয়র্কের ইস্ট রিভার কিংবা হাডসনের তীরে যাই,
আমার মনে পড়ে যায় আমাদের দুঃখিনি বুড়িগঙ্গার কথা।
এদেশে নারীর মত নদীও ধর্ষিত হয়।
ধর্ষিতা নারী ও নদীদের মিলিত আর্তনাদ শুনে শুনে
আমার হৃদয় ব্যাথিত হয়ে উঠলো!
আহা, স্বদেশ! আহা, আমার জন্মভূমি!
আমি তোমাকে কখনও ভুলিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কলাভবন, টিএসসি, শহীদ মিনার।
শামসুন নাহার হল, রুম নম্বর ৪০৩, ২০০৩,
মনে পড়ে যায় কতশত স্মৃতি,
কতশত মান অভিমান,
অজস্র ভালোবাসার কথা।
মনে পড়ে সেই সব পাগল পাগল সময়।
প্রসন্ন সকাল, মাতাল দুপুর আর মায়াময় সন্ধ্যাবেলা।
অথচ নিউইয়র্কের ব্যাস্ত জীবনে
কেমন করে যেন এসব স্মৃতি বহুদিন চাপা পড়ে ছিল।
আজ স্মৃতিরা সব মুক্তি পেয়েছে।
বুকের আগল খুলে বেরিয়ে এসেছে ফেলে আসা তরুনি বেলা।
কিছু স্মৃতি এসে চোখের জলে দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দিচ্ছে।
নিউইয়র্ক জীবনের সতেরো বছর যা পারেনি,
দেশে ফিরে আসা ‘তিনটি মাস’ যেন বিপ্লব ঘটিয়ে দিল।
নিউইয়র্কের স্মৃতিগুলো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এলো!
সুথিরিজমের মেঘ-কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেল প্রবাসের ‘সতেরটি বছর’!